লোকসভা ভোটে গো-হারা হওয়ার পর আঞ্চলিক নেতৃত্বের অভাব এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন কংগ্রেস হাইকম্যান্ড। সেই প্রেক্ষাপটেই পশ্চিমবঙ্গে এ বার অধীর চৌধুরীর নেতৃত্বে মজবুত সংগঠন গড়ে তুলতে চাইছেন সনিয়া গাঁধী।
ভোটের ফল প্রকাশের পর, সম্প্রতি দলের সভানেত্রীর সঙ্গে দেখা করেছিলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি। মুর্শিদাবাদে যে ভাবে সংগঠন গড়েছেন অধীর, সেই ধাঁচেই গোটা রাজ্যে দলের সাংগঠনিক শক্তি বাড়ানোর জন্য তাঁকে নির্দেশ দিয়েছেন কংগ্রেস সভানেত্রী।
যদিও কাজটা যে শক্ত তা কংগ্রেস হাইকম্যান্ড বোঝেন। কারণ এর আগে পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেসের মূল লড়াই ছিল বামেদের সঙ্গে। পরবর্তী কালে বামেদের পাশাপাশি শাসক তৃণমূলের সঙ্গেও লড়াই করতে হয়েছে কংগ্রেসকে। আবার এখন রাজ্যের রাজনৈতিক পরিসর অনেকটাই দখল করে নিয়েছে বিজেপি। পশ্চিমবঙ্গে প্রায় প্রান্তিক শক্তিতে পরিণত হওয়া কংগ্রেসকে ঘুরে দাঁড়াতে হলে যে প্রচুর কাঠখড় পোড়াতে হবে, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই হাইকম্যান্ডের।
তা হলে কী ভাবে সংগঠন মজবুত করার কথা ভাবছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি?
জবাবে অধীর আজ বলেন, “লোকসভা ভোটে রাজ্যে ১০ শতাংশ ভোট পেয়েছে কংগ্রেস। এই ভোটের বেশির ভাগটাই এসেছে উত্তরবঙ্গের চার জেলা থেকে। বাকি জেলাগুলিতে বুথ ভিত্তিক ফল বিচার করলে কংগ্রেসের দুর্বল জনভিত্তির ছবিটাই মেলে।” কম ভোট পাওয়ার জন্য প্রদেশ কংগ্রেসের অনেক নেতা শাসক তৃণমূলের বিরুদ্ধে রিগিংকেই দায়ী করছেন। কিন্তু প্রদেশ সভাপতির অভিমত ভাবের ঘরে চুরি করে লাভ নেই। রিগিং না হলে ওই আসনগুলি কি জিততো কংগ্রেস?
অধীরের কথায়, “কংগ্রেসে মূল সমস্যা আস্থার ঘাটতি। নিচু স্তরের কংগ্রেস কর্মীদের ওপর মানুষ আস্থা হারিয়েছেন। আবার সেই কর্মীদের আস্থা হারিয়েছেন ওপরের স্তরের নেতারা। এই আস্থা ফেরাতে পারলেই কংগ্রেসের সঙ্গে ফের মানুষের যোগাযোগ গড়ে তোলা যাবে।”
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি বলেন, রাজ্যে গঠনমূলক বিরোধীর ভূমিকাও নিতে হবে কংগ্রেসকে। তাঁর মতে, গত দশ বছর রা জ্য কংগ্রেসের আন্দোলনের ক্ষেত্রে কতগুলি সীমাবদ্ধতা ছিল। কারণ, প্রথমে বামেরা ও পরে তৃণমূল কেন্দ্রে হয় শরিক, না-হয় সমর্থক দল ছিল। কিন্তু এখন প্রচারে নেমে কেন্দ্র-রাজ্য উভয়ের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সুযোগ এসেছে কংগ্রেসের সামনে। পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা ভোট আসতে আসতে রাজ্য ও কেন্দ্রের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য কংগ্রেসের সামনে অনেক সুযোগ এসে যাবে।
মজার বিষয় হল, কংগ্রেস হাইকম্যান্ড যখন অধীরের নেতৃত্বে সংগঠন মজবুত করার কথা ভাবছেন। তখন প্রদেশ কংগ্রেসের কিছু নেতা লোকসভা ভোটের পর সেই অধীরেরই ডানা ছাঁটতে সচেষ্ট। সম্প্রতি প্রদেশ কংগ্রেস দফতরে ডাকা একটি বৈঠক চলাকালীন এই গোষ্ঠীর নেতারা অশান্তি বাধান। হাইকম্যান্ডের কাছে ফ্যাক্স পাঠিয়ে তাঁরা অধীরের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগও করেছেন।
অবশ্য ওই বৈঠকের আগেই সনিয়ার সঙ্গে দেখা হয়েছিল অধীরের। বৈঠকের আগে-পরে রাহুল গাঁধীর সঙ্গে বেশ কয়েক বার দেখা করেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি। সূত্রের খবর, রাহুলকে অধীর ঠারেঠোরে জানিয়ে দিয়েছেন, পদের মোহ তাঁর নেই। কিন্তু সত্যিই যদি রাজ্য জুড়ে মুর্শিদাবাদের ধাঁচে কংগ্রেসের সংগঠন তৈরি করতে হয়, তা হলে দল পরিচালনায় তাঁকে আরও স্বাধীনতা দিতে হবে। কারণ, গণতন্ত্র রক্ষার নামে অকেজো লোককে মাথায় তুলে রেখে সংগঠন শক্তিশালী করা যায় না। এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় নেতাদের অনেকেই প্রদেশ সভাপতির সঙ্গে একমত। তাঁরাও মনে করেন, শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, কমবেশি সব রাজ্যে কংগ্রেস এই রোগে আক্রান্ত। এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে অধীরবাবু বলেন, “মুর্শিদাবাদে কখনও গোষ্ঠী রাজনীতিকে প্রশ্রয় দিইনি। প্রদেশ কংগ্রেসেও এই সংস্কৃতি থেকে বেরোতে চাই।”
তবে মুখে এ কথা বললেও সংগঠন সাজাতে গিয়ে অধীরের কিছুটা সমস্যা হচ্ছে প্রাক্তন তিন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্র, প্রদীপ ভট্টাচার্য এবং মানস ভুঁইয়াকে নিয়ে। বয়স ও রাজনীতিতে এঁরা সকলেই অধীরের বর্ষীয়ান। সূত্রের খবর, কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে অধীর জানিয়েছেন, এই তিন নেতাকে কী দায়িত্ব দেওয়া হবে, তা যেন হাইকম্যান্ডই স্থির করেন। হাইকম্যান্ডকে অধীর জানিয়েছেন, তাঁর বিরুদ্ধে কারও অভিযোগ থাকলে মুখোমুখি আলোচনায় বসে তা বলা হোক। সেখানে থাকুন হাইকম্যান্ডের প্রতিনিধিও। বস্তুত সেই দাবি মেনে নিয়েই সোমবার রাত আটটায় দিল্লিতে প্রদেশ কংগ্রেস নেতাদের বৈঠকে ডেকেছেন পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বে থাকা কেন্দ্রীয় নেতা সি পি জোশী।
এর পরেও প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে, ঘরে-বাইরের বাধা সরিয়ে অধীর কি শেষমেশ সফল হতে পারবেন? জবাবে প্রদেশ সভাপতি বলেন, “লড়াই না করে ময়দান কখনও ছাড়িনি। এ বারও ছাড়ব না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy