Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪

মাটির সঙ্গে সংযোগ ফিরে পেতে ফের শাখা সম্মেলন

একের পর এক ঘটনায় শাসক দল তৃণমূল যখন চাপে পড়ছে, প্রধান বিরোধী দল সিপিএম তখন ফিরতে চাইছে তৃণমূলে। রাজ্যের যেখানে যেখানে সম্ভব, সেখানে এ বার ফের শাখা সম্মেলন করছে তারা। তিন বছর আগে, রাজ্যে পরিবর্তনের পরে পরে গত বার সিপিএমের একেবারে তৃণমূল স্তরের এই সম্মেলন বন্ধ রাখতে হয়েছিল। কমিউনিস্ট পার্টি হিসাবে সিপিএম তাদের সাংগঠনিক কাঠামোর উপরেই নির্ভরশীল।

অত্রি মিত্র
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ অক্টোবর ২০১৪ ০২:৪৭
Share: Save:

একের পর এক ঘটনায় শাসক দল তৃণমূল যখন চাপে পড়ছে, প্রধান বিরোধী দল সিপিএম তখন ফিরতে চাইছে তৃণমূলে। রাজ্যের যেখানে যেখানে সম্ভব, সেখানে এ বার ফের শাখা সম্মেলন করছে তারা। তিন বছর আগে, রাজ্যে পরিবর্তনের পরে পরে গত বার সিপিএমের একেবারে তৃণমূল স্তরের এই সম্মেলন বন্ধ রাখতে হয়েছিল।

কমিউনিস্ট পার্টি হিসাবে সিপিএম তাদের সাংগঠনিক কাঠামোর উপরেই নির্ভরশীল। সেই কাঠামোয় একেবারে নিচু ধাপে রয়েছে শাখা কমিটি। গুরুতর রাজনৈতিক দর্শন নিয়ে শাখা কমিটি মাথা ঘামায় না। পাড়ায় পাড়ায়, ছোট ছোট এলাকা ভিত্তিতে তারাই দলের সঙ্গে সাধারণ মানুষের যোগাযোগের প্রাথমিক সেতু। যে কোনও বিষয়ে যে কোনও এলাকায় সাধারণ মানুষ কী ভাবছেন, তার আভাস শাখা স্তর থেকেই দলের উপরের তলায় পৌঁছয়। এই দিক থেকেই শাখা কমিটির সম্মেলন সিপিএমের কাছে গুরুত্বপূর্ণ।

ক্ষমতা হারানোর পরে তৃণমূলের সন্ত্রাসের কারণ দেখিয়েই শাখা সম্মেলন বন্ধ রাখা হয়েছিল গত বার। এ বার সিপিএম মনে করছে, তিন বছর আগেকার সেই পরিস্থিতি পুরোপুরি নেই। সেই জন্যই যেখানে সম্ভব, সেখানে ‘বিশেষ অধিবেশনে’র পোশাকি নামে শাখার সম্মেলন সেরে নেওয়ার সিদ্ধান্ত। সিপিএমের এক কেন্দ্রীয় নেতার কথায়, “শাখার কাজকর্ম আমাদের দলের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। একটু অন্য ভাবে হলেও পশ্চিমবঙ্গে শাখার সাংগঠনিক কাজকর্মের মূল্যায়ন আবার আমরা করতে পারছি।”

দলের একাংশের ব্যাখ্যা, সীমিত ভাবে হলেও শাখা সম্মেলন আবার করার মানে তৃণমূল জমানায় সিপিএম নেতা-কর্মীদের ভয় খানিকটা হলেও ভাঙতে শুরু করেছে। পাশাপাশিই চর্চা হচ্ছে, ভোট-বাক্সে ক্রমাগত ভাঙন এবং দল ছেড়ে যাওয়ার প্রবণতা দেখেই কি ভয় ভাঙানোর এই চেষ্টা? দলেরই একটি সূত্রের বক্তব্য, শাখা স্তরে সাংগঠনিক কাজকর্ম পুরোপুরি লাটে উঠলে উপরের দিকেও তার ধাক্কায় আরও ভাঙনের সম্ভাবনা। সেই জন্যই অল্প লোক নিয়েও শাখা সম্মেলন করার প্রয়াস।

সিপিএমের রাজ্য নেতাদের একাংশ অবশ্য বিষয়টিকে প্রকৃত অর্থে ‘শাখা সম্মেলন’ বলতে নারাজ। রাজ্য কমিটির এক সদস্যের কথায়, “আমরা এটিকে শাখার বিশেষ অধিবেশন বা সভা বলতেই অভ্যস্ত। কারণ, শাখা সম্মেলন থেকে লোকাল কমিটি সম্মেলনের প্রতিনিধি নির্বাচিত হয় না। সেটা এক বারই হয়েছিল। বিশেষ অধিবেশন বলা হয়, কারণ এখান থেকে শাখার সম্পাদক, পত্রিকা ও অর্থের দায়িত্ব নির্ধারণ করা হয়।”

বিগত বিধানসভা নির্বাচনে ভরাডুবির পরে গত বার শাখার এই বিশেষ অধিবেশন বাতিল করেছিল সিপিএম। সরাসরি লোকাল কমিটির সম্মেলন থেকে শুরু হয়েছিল দলের সাংগঠনিক এবং রাজনৈতিক আলাপ-আলোচনা। সেই সময়ে শাসক দলের আক্রমণে নিচু তলার বহু সদস্যের ঘরছাড়া হওয়া-সহ সন্ত্রাসের পরিবেশকেই কারণ হিসাবে দেখানো হয়েছিল। এখন সেই পরিস্থিতি অনেকটাই পাল্টেছে বলে মনে করছেন সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্ব। সেই কারণেই এ বার শাখার বিশেষ অধিবেশন ‘যত্ন নিয়ে সংগঠিত’ করার উপরেই জোর দিচ্ছেন দলীয় নেতৃত্ব।

দলের একাংশ মনে করছে, গত বার শাখা সম্মেলন না করায় আখেরে ক্ষতিই হয়েছে। রাজ্য কমিটির এক সদস্যের বক্তব্য, “দলের কথা সরাসরি মানুষের কাছে নিয়ে যান পার্টির শাখার সদস্যরা। তাই মানুষ কী ভাবছেন, তার প্রতিফলন পাওয়া যায় শাখার বিশেষ সভাতেই। তা ছাড়া, শাখার বিশেষ সভাতেই দলের দৈনন্দিন সাংগঠনিক কাজ নিয়ে প্রকৃত অর্থে মতের আদানপ্রদান হয়।” ওই নেতার মতে, গত বার সেটা না হওয়ায় আরও বেশি করে মানুষের কাছ থেকে এবং দলের নিচু তলার কাছ থেকেও বিচ্ছিন্ন হয়েছেন দলীয় নেতৃত্ব।

যা পর্যায়ক্রমে নির্বাচনে দলের ভোটের হারও কমার অন্যতম কারণ।

সিপিএমের সম্মেলনের নির্দেশিকায় এ বার বলা হয়েছে, ‘শাখার বিশেষ সভায় শাখা সম্পাদক, পত্রিকা এবং অর্থের দায়িত্ব স্থির করতে হবে। সক্রিয় ও গ্রহণযোগ্যতার বিচারে শাখা সম্পাদক স্থির করতে হবে। সক্রিয় নয়, উৎসাহ নেই, এমনকী গড়ে দু’মাসে একটা সভাও ডাকেন না এ রকম ক্ষেত্রে শাখা সম্পাদক পরিবর্তন আবশ্যিক।’ শাখার ওই বিশেষ অধিবেশনে দলের সাংগঠনিক খুঁটিনাটি নিয়ে আলোচনার উপরেই বাড়তি জোর দিতে চাইছে সিপিএম। দলের এক নেতার কথায়, “পার্টি কংগ্রেসের আগে তো রাজনৈতিক আলোচনার প্রচুর সুযোগ রয়েছে। কিন্তু সাংগঠনিক আলোচনা শাখা স্তরে যত বেশি হবে, ততই পার্টি শক্তিশালী হবে।”

অন্য বিষয়গুলি:

cpm tmc atri mitra
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE