গোটা দেশ থেকে ঝুলিতে যখন সাকুল্যে ৪৪টি আসন, তখন পশ্চিমবঙ্গে ৬টির মধ্যে চারটি রক্ষা করা গিয়েছে। অথচ তার পরেও দলের তিন বিধায়ক তৃণমূলের ২১ জুলাইয়ের মঞ্চে গিয়ে শাসক দলে সামিল হয়েছেন। আরও দুই বিধায়ক এবং এক প্রাক্তন সাংসদকে নিয়ে জল্পনা চলছে। যুব কংগ্রেসের রাজ্য সভাপতি সদলবলে যোগ দিয়েছেন তৃণমূলে। উত্তর দিনাজপুরে দলের জেলা পরিষদ সদস্যেরা তৃণমূলের সঙ্গে রফা করছেন বলে খবর আসছে। এমন অবিরাম ভাঙনের মুখে শেষ পর্যন্ত নড়েচড়ে বসল কংগ্রেস হাইকম্যান্ড! পশ্চিমবঙ্গে দলের অবস্থা নিয়ে প্রদেশ কংগ্রেসের অভিজ্ঞ নেতাদের মতামত শুনতে চাইছেন দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।
কেন দলে দলে লোক কংগ্রেস ছেড়ে যাচ্ছে, সেই প্রশ্নে প্রদেশ কংগ্রেসের অন্দরেই অবশ্য দু’রকম মত আছে। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর মতে, “কেউ যদি মনে করে তৃণমূলে যোগ দিয়ে দেশোদ্ধার করবে, তা হলে তারা করুক!” তাঁর বক্তব্য, সাধারণ কর্মী-সমর্থকেরা কংগ্রেসের সঙ্গেই আছেন এবং তাই এই ব্যাপারে বাড়তি উদ্বেগের কিছু নেই। আবার অন্য একাংশের আশঙ্কা, যে যাচ্ছে যাক বলে বসে থাকলে গোটা দলটাই এক দিন ফাঁকা হয়ে যাবে! তাই অবিলম্বে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব মিলে আত্মসমীক্ষার প্রয়োজন। পরিস্থিতি ক্রমেই সঙ্গীন হয়ে উঠছে বুঝে এ বার সক্রিয় হয়েছে এআইসিসি। প্রদেশ স্তরের শীর্ষ নেতাদের কাছ থেকে তারা সব যুক্তিই শুনতে চাইছে। তবে পথে নামা ছাড়া যে গত্যন্তর নেই, তা বুঝেও কে কোথায় কী ভাবে আন্দোলন করবে, তা-ই নিয়ে দলের মধ্যেই জারি রয়েছে চাপান-উতোর!
কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব যেমন মতামত চেয়েছেন বর্ষীয়ান নেতা সোমেন মিত্রের। তাঁর কথায়, “দিল্লি জানতে চেয়েছে। আমার মতে, দল ছাড়ার ঘটনা নিশ্চয়ই দুঃখজনক। তবে শাসক দল প্রত্যক্ষ ভাবে বা কোথাও পুলিশের চাপ দিয়ে অনেককে বাধ্য করছে তৃণমূলে যোগ দিতে।” দলের একাংশের আশঙ্কা, যুব সভাপতি-সহ এক নাগাড়ে এমন দলত্যাগ চৌরঙ্গি ও বসিরহাট দক্ষিণের বিধানসভা উপনির্বাচনেও প্রভাব ফেলতে পারে। সোমেনবাবু অবশ্য এই দু’টি বিষয়কে যোগ করতে রাজি নন। তাঁর মতে, “এই ছেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সাধারণ মানুষের সম্পর্ক নেই। নির্বাচনের ফল যেমন হওয়ার, তেমনই হবে!”
এআইসিসি-র সাধারণ সম্পাদক এবং পশ্চিমবঙ্গের ভারপ্রাপ্ত নেতা সি পি জোশী অবশ্য দলত্যাগ-বিতর্কে মন্তব্য করেননি। তবে আনন্দবাজারের তরফে যোগাযোগ করা হলে রবিবার এআইসিসি-র এই সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, “কারা দল ছাড়ছেন, তাঁদের মধ্যে কারা প্রকৃত নেতা, কারাই বা তাঁদের অনুগামী এ সব বিষয়ে দিল্লিতে বসে আমার কিছু বলা ঠিক নয়। প্রদেশ নেতৃত্বই এটা ভাল বলতে পারবেন।” প্রদেশ নেতৃত্বের সেই মত শোনারই প্রক্রিয়া এখন শুরু হয়েছে।
প্রায় সোমেনবাবুর সুরেই পুলিশের খাতায় মামলা, কিছু প্রাপ্তির প্রলোভন এবং কিছু ক্ষেত্রে ভয় মূলত এই তিন কারণকেই দলত্যাগের কারণ হিসাবে চিহ্নিত করছেন প্রাক্তন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য। তাঁর বক্তব্য, “দিল্লি কারণ অনুসন্ধানে নেমেছে। সবাই বীতরাগ থেকে কংগ্রেস ছাড়ছেন, এমন নয়। এখনও কংগ্রেসের জন্য কাজ করার মতো কর্মী বাহিনী আছে। তাঁদের কী ভাবে সংহত করে এই অবস্থা মোকাবিলা করা যায়, তার জন্য অবশ্যই প্রদেশ সভাপতি এবং সর্বভারতীয় নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলে দিশা ঠিক করতে হবে।”
আর এক প্রাক্তন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি মানস ভুঁইয়ার সঙ্গে ইতিমধ্যেই এক প্রস্ত কথা বলেছেন জোশী। তবে মানসবাবু নিজের উদ্যোগেই জোশীর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছেন বলে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির মন্তব্যে আবার নতুন জটিলতা তৈরি হয়েছে! প্রদেশ কংগ্রেসের এক নেতার কথায়, “এই ধরনের মন্তব্যে দলটা সম্পর্কেই ভুল বার্তা যায়। মানসবাবুকে ডাকা হয়েছে কি না, ফোনের কললিস্ট পরীক্ষা করলেই তো বোঝা যাবে!” আবার অধীর-ঘনিষ্ঠ এক নেতার ক্ষোভ, “মানসবাবু আসলে দ্বৈত ভূমিকা পালন করে চলেছেন। ২০১৬-য় যাঁরা তৃণমূলের সাহায্য ছাড়া জিততে পারবেন না, তাঁদের আচরণেই নানা রকম এ দিক-ও দিক লক্ষ করা যাচ্ছে!” মানসবাবু অবশ্য এই নিয়ে পাল্টা মন্তব্যে নারাজ। দিল্লি থেকে তিনি এ দিন বলেছেন, “দলের নেতৃত্বের বিরুদ্ধে কোনও মন্তব্য করা আমার রাজনৈতিক ধর্ম-বিরোধী।”
আপাতত প্রদেশ নেতৃত্বের লক্ষ্য, ২৯ অগস্ট শিলিগুড়িতে ‘উত্তরকন্যা অভিযান’ থেকে আন্দোলন কর্মসূচির বোধন। আগের দিন, ২৮ অগস্ট ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবসে কলকাতায় মহাজাতি সদন চত্বরে সমাবেশ। কাল, মঙ্গলবার দলের বিধায়কদের নিয়ে বৈঠকে বসছেন প্রদেশ সভাপতি অধীর। মানসবাবু অবশ্য মঙ্গলবারের বৈঠক এবং শিলিগুড়ির কর্মসূচিতে থাকতে পারবেন না বলে জানিয়ে রেখেছেন। ২৮ তারিখ তিনি উদযাপন করবেন সবং কলেজের গেটে!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy