Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

বড়মা তৃণমূলের হাতে বন্দি, বিঁধলেন রাহুলও

লোকসভা উপ-নির্বাচনের দিন যত এগিয়ে আসছে, বনগাঁয় ‘বড়মা’কে নিয়ে বিজেপি-তৃণমূলে টানাটানি তত বাড়ছে। ‘বড়মা’, অর্থাৎ সারা ভারত মতুয়া মহাসঙ্ঘের প্রধান উপদেষ্টা, ৯৬ বছরের বীণাপাণি ঠাকুর। যাঁকে নিজেদের পক্ষে রাখতে পারলে মতুয়া-ভোট পাওয়া অনেকটাই নিশ্চিত হয়ে যাবে বলে মনে করে বিজেপি-তৃণমূল দু’পক্ষই।

মনোনয়ন পত্র জমা দেওয়ার আগে বড়মাকে প্রণাম বিজেপি প্রার্থী সুব্রত ঠাকুরের। ছবি:নির্মাল্য প্রামাণিক।

মনোনয়ন পত্র জমা দেওয়ার আগে বড়মাকে প্রণাম বিজেপি প্রার্থী সুব্রত ঠাকুরের। ছবি:নির্মাল্য প্রামাণিক।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বনগাঁ শেষ আপডেট: ২৫ জানুয়ারি ২০১৫ ০৩:১০
Share: Save:

লোকসভা উপ-নির্বাচনের দিন যত এগিয়ে আসছে, বনগাঁয় ‘বড়মা’কে নিয়ে বিজেপি-তৃণমূলে টানাটানি তত বাড়ছে।

‘বড়মা’, অর্থাৎ সারা ভারত মতুয়া মহাসঙ্ঘের প্রধান উপদেষ্টা, ৯৬ বছরের বীণাপাণি ঠাকুর। যাঁকে নিজেদের পক্ষে রাখতে পারলে মতুয়া-ভোট পাওয়া অনেকটাই নিশ্চিত হয়ে যাবে বলে মনে করে বিজেপি-তৃণমূল দু’পক্ষই।

তাই বীণাপাণিদেবীর জন্য এ বার মুখ খুললেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহও। সদ্য দলে যোগ দেওয়া বীণাপাণিদেবীর ছোট ছেলে মঞ্জুলকৃষ্ণের সুরেই তৃণমূলের বিরুদ্ধে শনিবার বারাসতে রাহুলবাবুর অভিযোগ, “বড়মাকে তৃণমূল গ্রেফতার করে জেলখানার মতো বন্দি করে রেখেছে। তাঁকে দিয়ে তৃণমূল যা ইচ্ছে তা-ই বলিয়ে নিচ্ছে।” এর পাল্টা হিসেবে জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, “রাহুলবাবুর কথার কোনও প্রতিক্রিয়া দেওয়ার প্রয়োজন মনে করছি না। উনি আগে পঞ্চায়েতে জিতে আসুন। উনি তো একটা ভাঁড়। ওঁর কথার কী উত্তর দেব!”

মঞ্জুলের ছেলে সুব্রতই এ বার ওই কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী। তাঁর বিরুদ্ধে তৃণমূল প্রার্থী ‘বড়মা’র বড় পুত্রবধূ মমতা ঠাকুর। শুরু থেকেই এ নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা টান টান। কিন্তু একই বাড়ির দুই সদস্য ভোটের ময়দানে পরস্পরের বিরুদ্ধে নেমে যাওয়ায় সাধারণ মতুয়া ভক্তদের অনেকেই বিরক্ত। তাঁদের সেই বিরক্তি যাতে ভোটের বাক্স পর্যন্ত না পৌঁছয়, তার জন্য চেষ্টার কসুর করছেন না দু’পক্ষের নেতারাই।

গত ১৬ জানুয়ারি তৃণমূল নেতাদের উপস্থিতিতে বীণাপাণিদেবী তাঁর বড় পুত্রবধূকে আশীর্বাদ করে বলেছিলেন, “ওঁকে যেন মতুয়া-ভক্তেরা জয়ী করেন।” একই সঙ্গে তিনি জানিয়েছিলেন, মঞ্জুলের সঙ্গে তাঁর কোনও সম্পর্ক নেই। যা শুনে সে দিনই মঞ্জুল বলেছিলেন, “মায়ের বয়স হয়েছে। সব কিছু মনে থাকে না।” তাঁর অভিযোগ ছিল, “তৃণমূল ভোটের তাগিদে বড়মাকে দিয়ে যা ইচ্ছে বলিয়ে নিচ্ছে। ঠাকুরবাড়িতে বিভাজনের চেষ্টা করেছে। ওরা বড়মাকে আটকে রেখেছে।”

শনিবার মতুয়া-ভোট ভাগাভাগি প্রসঙ্গে বলতে গিয়েই ‘বড়মা’কে নিয়ে তৃণমূলের বিরুদ্ধে ওই অভিযোগ তোলেন রাহুলবাবুও। মমতা ঠাকুরকে ইঙ্গিত করে তাঁর দাবি, “বাইরে থেকে এসে কেউ মতুয়াদের উত্তরাধিকারী হতে পারেন না। সুব্রতই মতুয়াদের আসল উত্তরাধিকারী। ওঁকেই মতুয়ারা ভোট দেবেন।”

তৃণমূল প্রার্থী মমতা পাল্টা বলেন, “রাহুলবাবুকে অনুরোধ করব, তিনি যেন মতুয়াদের ধর্মগ্রন্থ পাঠ করেন। তা হলে খুশি হব।”

এ দিন থেকেই ওই কেন্দ্রের জন্য মনোনয়ন শুরু হয় বারাসতে জেলাশাসকের দফতরে। কয়েক হাজার বিজেপি কর্মী-সমর্থক সেখানে হাজির ছিলেন। সকালে দলের নেতা কে ডি বিশ্বাস এবং বাবা মঞ্জুলকৃষ্ণের সঙ্গে ৬৩টি গাড়ির কনভয় নিয়ে মনোনয়ন জমা দিতে যাওয়ার আগে সুব্রত বীণাপাণিদেবীকে প্রণাম করেন। বীণাপাণিদেবী তাঁকে আশীর্বাদ করলেও পরে বলেন, “সুব্রতকে আশীর্বাদ করছি। তবে, জিতবে মমতা।”

সুব্রত অবশ্য দাবি করেন, ‘বড়মা’ তাঁকে জেতার জন্যই আশীর্বাদ করেছেন। সুব্রত তাঁর জেঠা, প্রয়াত তৃণমূল সাংসদ কপিলকৃষ্ণ ঠাকুরের সমাধিস্থলে গিয়েও শ্রদ্ধা জানান। আশীর্বাদ নেন কপিকৃষ্ণের প্রথম পক্ষের মেয়ে সিলভিয়ার কাছ থেকেও। কপিলকৃষ্ণের মৃত্যুতেই ওই কেন্দ্রে উপ-নির্বাচন হচ্ছে।

এ দিন মনোনয়ন জমা দিয়েছেন ওই কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী দেবেশ দাস এবং ‘নির্দল’ হিসেবে দাঁড়ানো সুব্রত বিশ্বাস। সুব্রতবাবুকে তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে জেলাশাসকের দফতরে ঢুকতে দেখা যায়। ওই কেন্দ্রের জন্য বনগাঁর রেলবাজারের বাসিন্দা বছর ঊনত্রিশের কুন্তল মণ্ডলকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেছে কংগ্রেস।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE