ট্যাক্সিচালকদের আন্দোলন থেকে শিক্ষা নিয়ে আগামী ২০ অগস্ট থেকে প্রস্তাবিত ৭২ ঘণ্টার বাস ধর্মঘটের কর্মসূচি সম্পর্কে বাড়তি সতর্ক রাজ্য সরকার। বাসমালিকদের দাবি নিয়ে এ পর্যন্ত যা কিছু আলোচনা হয়েছে, সবই প্রশাসনিক স্তরে। কিন্তু এ বার দলীয় স্তরেও তা নিয়ে কথা শুরু হয়েছে। তৃণমূল কংগ্রেস সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রীর মালদহ সফরের ঠিক আগে দলের এক শীর্ষ নেতা তৃণমূল সমর্থক কয়েক জন বাসমালিককে ডেকে এ নিয়ে আলোচনা করেছেন। বাসমালিকদের কী দাবি, কেন তাঁরা ভাড়া বাড়াতে চান, সে সম্পর্কে সবিস্তার জেনেছেন তৃণমূলের ওই শীর্ষ নেতা। বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নজরে আনা হবে ওই নেতা এমন আশ্বাসও দিয়েছেন।
ওই বৈঠক নিয়ে অবশ্য মুখে কুলুপ বাসমালিকদের। তৃণমূল সূত্রেও এই বৈঠকের কথা প্রকাশ্যে স্বীকার করা হচ্ছে না। এ নিয়ে মন্তব্য করেননি পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্রও। তবে রাজ্য প্রশাসনের এক শীর্ষ আমলা জানান, মুখ্যমন্ত্রী এখনও ভাড়া না-বাড়ানোর সিদ্ধান্তেই অনড়।
তৃণমূল সূত্রের খবর, দলের ওই শীর্ষ নেতার সঙ্গে বৈঠকে বাসমালিকেরা জানিয়েছেন, ২০১২ সালের অক্টোবরে শেষ বার বাসভাড়া বেড়েছিল। তখন ডিজেলের দাম ছিল লিটার-পিছু ৫০ টাকা ৭৮ পয়সা। এখন তা হয়েছে ৬৩ টাকা ২২ পয়সা। এই অবস্থায় ভাড়া বৃদ্ধি না হলে রাজ্যের পরিবহণ শিল্প যে মুখ থুবড়ে পড়বে, তা-ও স্পষ্ট করে দিয়েছেন তাঁরা। বাসমালিকেরা বৈঠকে জানিয়েছেন, গত এক বছরে ১৫ বছরের পুরনো হয়ে যাওয়ায় বহু বাস বাতিল হয়ে গিয়েছে। কিন্তু তার জায়গায় নতুন বাস রাস্তায় নামাননি মালিকেরা। গত ছ’মাসেই কলকাতার রাস্তায় এক হাজারেরও বেশি বেসরকারি বাস কমে গিয়েছে।
গত এক বছরে চার বার বাস ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে বাস-মিনিবাস মালিকদের সংগঠনগুলি। কিন্তু প্রতি বারই সরকারের কোনও না কোনও আশ্বাসে শেষ মুহূর্তে ধর্মঘট তুলে নিয়েছে তারা। সরকারকে যে তারা কোনও ভাবেই বিব্রত করেনি, তৃণমূলের ওই নেতাকে সে কথাও মনে করিয়ে দেন বাসমালিকেরা।
গোপনে দলীয় স্তরে আলোচনা শুরু হলেও শেষ পর্যন্ত তৃণমূলের ওই নেতা বাসভাড়া বাড়ানোর ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রীকে রাজি করতে পারবেন কি না, তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে মালিকদের। তা ছাড়া, তৃণমূল নেতার সঙ্গে বৈঠক করেছেন ওই দলের সমর্থক, বাসমালিক সংগঠনের কয়েক জন নেতা। এর বাইরে যাঁরা রয়েছেন, তাঁরাও সমাধানের ব্যাপারে খুব একটা আশাবাদী নন।
ট্যাক্সিচালকদের আন্দোলন ওই বাসমালিকদের দেখিয়ে দিয়েছে, দাবি আদায়ের অন্যতম পূর্বশর্ত হল একজোট হওয়া এবং অনমনীয় থাকা। তাই ২০ অগস্ট থেকে ৭২ ঘণ্টার ধর্মঘটের জোরদার প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে বাস-মিনিবাসের মালিক সংগঠনগুলি। ধর্মঘটে সব বেসরকারি পরিবহণ মাধ্যমকেই সামিল হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বাসমালিকেরা। ট্যাক্সিচালকদের মতো পুলিশি জুলুম নিয়েও এ বার সরব হওয়ার কথা ভাবছে বাসমালিকদের সংগঠনগুলি। তৃণমূল শীর্ষ নেতার সঙ্গে বৈঠকে ছিলেন না, বাসমালিক সংগঠনের এমন এক নেতার কথায়, “ট্যাক্সিচালকদের আন্দোলনের সাফল্য জমি প্রস্তুত করে দিয়েছে। সেই জমিতে ফসল ফলিয়ে ভাড়া বৃদ্ধির দাবি নিয়ে সরকারের উপরে চাপ বাড়াতে হবে।”
চাপ বাড়ানোর জন্য ট্যাক্সিচালকদের মতো হঠাৎ কোনও কর্মসূচি নেওয়ার কথাও ভাবছেন বাসমালিকদের একাংশ। তাঁদের বক্তব্য, ধর্মঘটের অনেক নিয়ম-কানুন। কিন্তু ট্যাক্সিচালকেরা দেখিয়েছেন, ধর্মঘটের ডাক না দিয়েও ধর্মঘটের মতো পরিস্থিতি তৈরি করা যায়। প্রয়োজনে সেই পথে যেতে চান অনেক বাসমালিক।
বাসমালিক সংগঠনের এক শীর্ষ নেতার বক্তব্য, “সরকারের গড়া বিধায়ক ও মন্ত্রীদের কমিটি ভাড়া বৃদ্ধির প্রয়োজনের কথা স্বীকার করে নেওয়ার পরে সরকার ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেবে বলেই আশা করা গিয়েছিল। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, বাসভাড়া বাড়বে না। এর পরে আন্দোলন ছাড়া পথ নেই।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy