সিঙ্গাপুরের প্রথম প্রধানমন্ত্রী লি কোয়ান ইউ-এর নামে চেয়ার প্রফেসরের পদ হবে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়কে অন্ধকারে রেখে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সিঙ্গাপুরের মাটি থেকে সেই ঘোষণা করে দেওয়ায় শিক্ষাজগতের সঙ্গে যুক্ত অনেকেই বিস্মিত। তাঁদের প্রশ্ন, বিশ্ববিদ্যালয় স্বশাসিত সংস্থা। মুখ্যমন্ত্রী তাদের এড়িয়ে নিজের সিদ্ধান্ত এ ভাবে ঘোষণা করলেন কেন!
মঙ্গলবার সিঙ্গাপুরের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী লি সিয়েন লুং-এর সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানেই কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন চেয়ার গড়ার প্রস্তাব রাখেন তিনি। পরে রাজ্যের অর্থমন্ত্রী জানান, “সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়ে গিয়েছে। যে ভাবে স্বামীজি, নেতাজির নামে চেয়ার হয়েছে, সেই ভাবেই কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে লি কোয়ান ইউ-এর নামে চেয়ার হবে।”
কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে কার নামে, কোন বিভাগে চেয়ার হবে সেটা নির্দিষ্ট প্রস্তাবের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষেরই ঠিক করার কথা। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে খবর, মুখ্যমন্ত্রী সিঙ্গাপুরে গিয়ে যে এমন কোনও ঘোষণা করতে পারেন, সে সম্পর্কে কর্তৃপক্ষের কোনও ধারণা ছিল না। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য রথীন্দ্রনারায়ণ বসু মনে করেন, একটি চেয়ার প্রফেসরের পদ তৈরি হলে ভাল হবে কি মন্দ হবে, সেটা পরের কথা। কিন্তু বিষয়টির মধ্যে স্বচ্ছতা থাকা প্রয়োজন। তিনি বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় যে স্বশাসিত সংস্থা, সেটা মাথায় রাখা দরকার।”
বিশ্ববিদ্যালয়ে চেয়ার প্রফেসরের পদ তৈরির পদ্ধতিটি সাধারণ ভাবে কী? কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক প্রবীণ শিক্ষক জানাচ্ছেন, যে ব্যক্তি বা সংস্থা এই ব্যাপারে আগ্রহী, তারা লিখিত ভাবে প্রস্তাব দেয় উপাচার্যের কাছে। তার পরে বিশ্ববিদ্যালয় বিচার করে দেখে সংশ্লিষ্ট পদ তৈরির জন্য এবং ধারাবাহিক ভাবে তার খরচ চালানোর জন্য কত টাকা প্রয়োজন। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা সংস্থা সেই টাকা দিতে রাজি থাকলে উপাচার্য বিষয়টি সিন্ডিকেটের অনুমোদনের জন্য পেশ করেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়েরই এক আধিকারিক বলেন, “প্রস্তাবটি কোনও সরকারের কাছ থেকে এলে চিন্তা থাকে না। অন্য সূত্রে এলে বিশ্ববিদ্যালয়কে দেখতে হয়, সেই ব্যক্তি বা সংস্থার আয়ের সূত্র নিয়ে কোনও সংশয় বা সন্দেহের অবকাশ রয়েছে কি না।”
এ ক্ষেত্রে সিঙ্গাপুর সরকার বা সে দেশের কোনও সংস্থা এখানকার বিশ্ববিদ্যালয়ে চেয়ার তৈরির আগ্রহ প্রকাশ করেছে, এমনটা ঘটেনি। রাজ্য প্রশাসন সূত্রের দাবি, শুভেচ্ছা বার্তা হিসেবে রাজ্য সরকারই প্রস্তাব দিয়েছে। অতএব কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজ্য সরকার নিজের খরচে সিঙ্গাপুরের প্রাক্তন রাষ্ট্রনায়কের নামে চেয়ার গড়তে চলেছে। এমন বিরল ঘটনায় শিক্ষাজগতের অনেকেই কিছুটা বিস্মিত। রাজ্যের প্রাক্তন উচ্চশিক্ষা মন্ত্রী সুদর্শন রায়চৌধুরীর মতে, বিদেশের মাটিতে এই ঘোষণা করার আগে মুখ্যমন্ত্রীর অবশ্যই কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে কথা বলে নেওয়া উচিত ছিল। কারণ, এ ক্ষেত্রে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের এক্তিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়েরই। তাঁর মন্তব্য, “চেয়ার মানে কেবল একটি অধ্যাপকের পদ নয়, তার অন্য তাৎপর্য রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী সে সম্পর্কে ওয়াকিবহাল বলে মনে হয় না!”
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুরঞ্জন দাস অবশ্য মুখ্যমন্ত্রীর প্রস্তাবকে স্বাগতই জানিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ফরেন পলিসি স্টাডিজ-এ ওই চেয়ার পেলে গবেষণার ক্ষেত্রে সুবিধা হবে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy