বিজেপি-র প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদীর নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে নিরাপত্তারক্ষীরা বিমানবন্দরের ভিতরেই ‘জ্যামার’ চালু করে দিয়েছিলেন। আর তাতেই রবিবার সন্ধ্যায় কলকাতা বিমানবন্দরের যোগাযোগ ব্যবস্থা মিনিট দুয়েকের জন্য বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।
বিমানবন্দরের অফিসারদের একাংশ জানাচ্ছেন, এ ভাবে জ্যামার চালু করে দেওয়ায় ওই সন্ধ্যায় দু’মিনিটের জন্য আকাশে থাকা সব বিমানের সঙ্গে এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল বা এটিসি-র যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ওই সময়ের মধ্যে বড়সড় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারত বলে মনে করছেন অফিসারেরা। বিমানবন্দরের এক অফিসার বলেন, “ওই সময় উড়তে থাকা ৫০-৫৫টি বিমানের গতিবিধির উপরে নজরদারি চালানো হচ্ছিল। সবই যাত্রী-বিমান। বিমানগুলিতে ছিলেন কয়েক হাজার যাত্রী।” তাঁর বক্তব্য, ওই সব যাত্রীর জীবনের ঝুঁকি নিয়েই ভিআইপি-র নিরাপত্তায় জ্যামার চালু করে দেওয়া হয়েছিল।
কী ধরনের বিপদ হতে পারত ওই সব বিমান বা তার যাত্রীদের?
এক পাইলটের কথায়, “গড়ে প্রতি ঘণ্টায় ৮০০ কিলোমিটার বেগে বিমান উড়ে যায়। দু’মিনিটে প্রায় ২৫ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিই আমরা। আকাশে এক-একটি মিনিট খুব গুরুত্বপূর্ণ। এটিসি-র সঙ্গে দু’মিনিট যোগাযোগ না-থাকলে অনেক রকম সমস্যা হতে পারে।” তিনি জানান, কোনও বিমানে আচমকা জরুরি অবতরণের পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। মাঝ-আকাশে বিমানের কলকব্জা খারাপ হয়ে গেলে সেটা হতে পারে। আবার কোনও যাত্রী আচমকা অসুস্থ হয়ে পড়লেও প্রয়োজন দেখা দিতে পারে জরুরি অবতরণের। রুট বদলে মুখ ঘুরিয়ে বিমানকে তখন নিকটবর্তী বিমানবন্দরে নামতে হয়। তার জন্য এটিসি-র সঙ্গে নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ অপরিহার্য। দু’মিনিট তখন সেই পাইলটের কাছে অনেকটা সময়।
বিমানবন্দর সূত্রের খবর, উড়ন্ত বিমানকে প্রতি মূহূর্তে এটিসি-র নির্দেশের উপরে নির্ভর করতে হয়। কোন বিমান কত উচ্চতায় উড়বে, তার সামনে বা পিছনে কোন কোন বিমান রয়েছে, তারা কত দূরে রয়েছে বিমানবন্দরের এটিসি-র মনিটরে এই সব কিছুর উপরেই নজর রাখেন অফিসারেরা। সেই অনুযায়ী নিরাপদে উড়তে সাহায্য করা হয় পাইলটদের। দু’মিনিট যোগাযোগ না-থাকা মানে অথৈ শূন্যতায় বিমানকে হাজারো বিপদের মধ্যে ঠেলে দেওয়া।
তা হলে জ্যামার কেন?
ভিআইপি-দের নিরাপত্তায় জ্যামারের বড় ভূমিকা আছে। বিমানবন্দরের অফিসারদের বক্তব্য, জ্যামার ব্যবহারের স্থান ও সময় নির্বাচন করাটাই বড় কথা। কোনও ভিআইপি যখন বিশেষ বিমানে কলকাতায় নেমে বিমানবন্দর থেকেই হেলিকপ্টারে গন্তব্যে উড়ে যান এবং একই ভাবে ফিরে আসেন, তখন জ্যামারের প্রয়োজন হয় না। সমস্যাও হয় না। কিন্তু ভিআইপি সড়কপথে গেলেই সমস্যা দেখা দেয়।
বিমানবন্দর সূত্রের খবর, রবিবার সন্ধ্যায় গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী মোদী লখনউ থেকে বিশেষ বিমানে কলকাতায় পৌঁছন সন্ধ্যা পৌনে ৭টায়। তখন আর হেলিকপ্টার ওড়ার উপায় ছিল না। সড়কপথেই তিনি শ্রীরামপুরে সভা করতে যান। সেখানে সভার পরে রাতেই সেই বিমানে ফিরে যান আমদাবাদ। মোদী সড়কপথে যাবেন বলেই তাঁর বিমান নামার পরে বিমানবন্দরে জ্যামার চালু করে দেওয়া হয়েছিল। উদ্দেশ্য, কেউ যাতে রিমোট ব্যবহার করে বিস্ফোরণ ঘটাতে না-পারে। কিন্তু ওই জ্যামার চালু করে দেওয়ায় আশপাশের যাবতীয় যোগাযোগ ব্যবস্থা নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়।
এই প্রথম নয়। আগেও বিভিন্ন সময়ে একই কারণে জ্যামার চালু করে দেওয়া হয়েছে বিমানবন্দরে। ফলে বিমানের সঙ্গে যোগাযোগ করতে সমস্যা হয়েছে এটিসি অফিসারদের। বিঘ্নিত হয়েছে উড়ন্ত বিমানে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা। ভিআইপি-র নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সংস্থাকে বলে দেওয়া হয়, বিমানবন্দরের চৌহদ্দি পেরিয়ে তবেই যেন জ্যামার চালু করা হয়। মোদীর নিরাপত্তায় আছে ন্যাশনাল সিকিওরিটি গার্ড বা এনএসজি। বিমানবন্দর-কর্তৃপক্ষের তরফে দিন দুয়েক আগে তাদেরও সেই অনুরোধ করা হয়েছিল।
তা সত্ত্বেও বিমানবন্দরের ভিতরেই জ্যামার চালু করা হল কেন?
এনএসজি-র ডিজি জয়ন্তনারায়ণ চৌধুরী সোমবার দিল্লি থেকে বলেন, “এ-রকম হওয়ার কথা নয়। আমাদের কোন অফিসার ওই জ্যামার ব্যবহার করেছিলেন, খোঁজ নেব।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy