এক দিকে রাজ্যের ভাঁড়ে মা ভবানী। অন্য দিকে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব পড়ে বালি খাদানে।
আগে বালি তুলতে ব্যবসায়ীদের লাইসেন্স দিয়ে রাজস্ব আদায় করত ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর। কিন্তু বছরখানেক আগে ওই দফতরের হাত থেকে এই ক্ষমতা কেড়ে দেওয়া হয় সেচ দফতরকে। কিন্তু তারা এখনও কাজ শুরু করতে পারেনি। বছরখানেক অচলাবস্থা চলায় অন্তত ২০০ কোটি টাকার রাজস্ব হারিয়েছে রাজ্য।
সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য বলেন, “সেচ দফতর লাইসেন্স দেওয়ার নির্দেশ পেলেও তার জন্য আইন দরকার। সেটি হয়নি। তার ফলে লাইসেন্স দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করা যাচ্ছে না। তবে দ্রুত ব্যবস্থা হবে। প্রয়োজনে অর্ডিন্যান্স এনে লাইসেন্স দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করা হবে।”
ভূমি দফতর সূত্রের খবর, আগে এক ব্যবসায়ীকে নদীর বুকে চার একর এলাকা থেকে বালি তোলার লাইসেন্স দেওয়া হতো। লাইসেন্সের মেয়াদ এক বছরের। তিন মাস অন্তর ব্যবসায়ীকে টাকা মিটিয়ে দিতে হতো। লাইসেন্স দেওয়া হতো নিলামে। যিনি সর্বোচ্চ দাম দিতেন, তিনিই লাইসেন্স পেতেন খাদানের। এই পদ্ধতিতে গত কয়েক বছরে ভাল রাজস্ব আদায় হয়েেছে।
কিন্তু বালি খাদানগুলির বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠতে শুরু করেছিল। তার অন্যতম, লাইসেন্স পাওয়া এলাকার বাইরে থেকেও বালি তুলছিলেন বহু ব্যবসায়ী। ভূমি দফতরের কিছু আধিকারিক সেচ দফতরের সঙ্গে কথা না-বলেই বালি তোলার অনুমতি দিচ্ছিলেন বলেও অভিযোগ। ফলে নদীর পাড় ভাঙছিল। চন্দননগরে নদীর পাড়ে একটি আবাসন প্রকল্পে ধস নামার পরে অভিযোগ ওঠে, যত্রতত্র বালি তোলাই এর কারণ। এর পরোক্ষ দায় পড়ে সেচ দফতরের উপরেও।
নড়েচড়ে বসে রাজ্য। বালি তুলতে সেচ দফতরের তত্ত্বাবধানের প্রয়োজনের কথা মেনে নেয় সরকার। সেচ, ভূমি ও অর্থ দফতর যৌথ ভাবে সিদ্ধান্ত নেয়, সেচ দফতরই ঠিক করবে ব্যবসায়ীরা কোথা থেকে বালি তুলবেন। বালি তোলার সময়ে ওই দফতরের বাস্তুকারেরাই নজরদারি চালাবেন। অনিয়ম হচ্ছে কি না দেখবেন। তেমনটা হলে ব্যবসায়ীদের জেল-জরিমানা করা হবে বলেও সিদ্ধান্ত হয়। এর জন্য প্রয়োজনীয় আইন করার কথা বলা হয়েছে।
সেচ দফতরের এক আধিকারিকের বক্তব্য, ভূমি দফতর নতুন করে বালি খাদানের জন্য লাইসেন্স দিতে না-পারলেও তারা যাদের আগেই লাইসেন্স দিয়েছে, সেই সব ব্যবসায়ী বালি তুলতে পারেন। যদিও ওই সব লাইসেন্সের মেয়াদ সাধারণত এক বছরের হওয়ায় অধিকাংশের মেয়াদ ফুরিয়েছে। তবে লাইসেন্স দেওয়া বা নবীকরণ বন্ধ থাকলেও বালি তোলা বন্ধ হয়নি। হাওড়ার জয়পুরের বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, অন্তত ছ’জন ব্যবসায়ী মুণ্ডেশ্বরী থেকে বালি তুলছেন। তাঁদের মধ্যে এক জনের লাইসেন্সের মেয়াদ ফুরিয়েছে ২০১৩-র এপ্রিলে। পাঁচ জনের মেয়াদ শেষ হয়েছে জানুয়ারিতে। এঁদের বক্তব্য, “লাইসেন্স না দিতে পারা রাজ্যের ব্যর্থতা। আমরা তো লাইসেন্স চাই। ভরা মরসুমে বালি না-তুললে তো নির্মাণ কাজই বন্ধ হয়ে যাবে।”
এই চিত্র রাজ্য জুড়ে। সেচমন্ত্রী বলেন, “বিনা লাইসেন্সে বালি তোলা যাবে না। বিনা লাইসেন্সে কেউ বালি তুললে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে এসপিদের। আমি নিজে অভিযান চালিয়ে অন্তত ১০টি খাদান বন্ধ করেছি।” তবে এ ভাবে যে সমস্যা মিটবে না তা তিনি মেনে নিয়েছেন। সেচমন্ত্রী বলেন, “আমরা যাতে কাজ শুরু করতে পারি, তার জন্য দ্রুত আইন দরকার। কিন্তু পরপর ভোটের জন্য এই কাজটি করা যায়নি। এ বারে সেই কাজে হাত দেওয়া হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy