সুব্রত ঠাকুরের (ডান দিকে) অনশনে এলেন বিজেপি নেতা কৃষ্ণমূর্তি বান্ডি (মাঝে)। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক
বিজেপি-র প্রতিনিধি দলের আশ্বাসে অনশন তুললেন তৃণমূল সরকারের মন্ত্রী মঞ্জুল ঠাকুরের পুত্র সুব্রত। সব ঠিক থাকলে আজ, বুধবার মতুয়াদের দাবি-দাওয়া নিয়ে বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহের সঙ্গে বৈঠক হওয়ার কথা সারা ভারত মতুয়া মহাসঙ্ঘের সাধারণ সম্পাদক সুব্রত ঠাকুরের। বনগাঁ লোকসভায় উপনির্বাচনের আগে যে ঘটনাকে ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ বলে মনে করছেন মতুয়াদেরই একাংশ।
২০০৩ সালে এনডিএ জমানার নাগরিকত্ব আইন সংশোধনের দাবি-সহ আরও কিছু দাবি-দাওয়া আছে মতুয়াদের। তা নিয়েই ২৭ নভেম্বর থেকে অনশন শুরু করেন সুব্রত ও তাঁর অনুগামীরা। রবিবার ঠাকুরনগরে রেল অবরোধও করেন তাঁরা। ওই দিনই বিজেপি-র সভা উপলক্ষে কলকাতায় ছিলেন দলের সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ। সভায় তিনি মতুয়াদের নিয়ে কোনও বার্তা দেননি। কিন্তু ওই দিনই বিজেপি-র তরফে ঠাকুরনগরের ঠাকুরবাড়িতে জানিয়ে দেওয়া হয়, সারা ভারত তফসিলি জাতি মোর্চার সাধারণ সম্পাদক কৃষ্ণমূর্তি বান্ডি মঙ্গলবার আসবেন সুব্রতদের সঙ্গে দেখা করতে।
ঠাকুরবাড়ির গুরুচাঁদ ভবনে সুব্রত, তাঁর ভাই শান্তনু-সহ কয়েকজনের সঙ্গে ঘণ্টা দেড়েক রুদ্ধদ্বার বৈঠকের পরে বান্ডি এ দিন দাবি করেন, “অমিত শাহ ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে কথা বলেই এখানে এসেছি। আমিও তফসিলি সম্প্রদায়ের। সেই অর্থে দেখতে গেলে আমি আর মতুয়ারা ভাই-ভাই। উদ্বাস্তুদের নাগরিকত্বের দাবিতে যে আন্দোলন তাঁরা করছেন, সে ব্যাপারে আমাদের নৈতিক সমর্থন আছে।” বিজেপি-র উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সভাপতি কামদেব দত্ত জানান, আজ, বুধবার রাহুল সিংহের সঙ্গে বৈঠক আছে সুব্রতর। কুড়ি দিনের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও তাঁর বৈঠকের ব্যবস্থা করা হবে।
এর পরেই মা ছবি ঠাকুরের হাত থেকে ফলের রস খেয়ে অনশন ভাঙেন সুব্রত। তিনি বলেন, “গত ৬৭ বছর ধরে মতুয়ারা উদ্বাস্তুদের নাগরিকত্বের দাবি নিয়ে আন্দোলন চালাচ্ছেন। কুড়ি দিনের মধ্যে যদি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক না হয়, তা হলে বৃহত্তর আন্দোলনে যাব।” রাহুলবাবুর সঙ্গে বৈঠক নিয়ে অবশ্য মন্তব্য করেননি তিনি। তবে বিজেপি-র একটি সূত্রের দাবি, অনশনে বসার দু’দিন আগেই রাহুলবাবুর সঙ্গে রাজ্য বিজেপি-র সদর দফতরে দেখা করে গিয়েছেন সুব্রত। তা নিয়ে দু’তরফেই উচ্চবাচ্য করা হয়নি। বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি বলেন, “সুব্রত বৈঠকে এলে নিশ্চয়ই কথা হবে।”
এমনিতেই প্রয়াত সাংসদ তথা জেঠামশাই কপিলকৃষ্ণ ঠাকুরের স্ত্রী মমতাবালার সঙ্গে সুব্রত এবং মঞ্জুল ঠাকুরের বিরোধ দীর্ঘদিন ধরেই প্রকাশ্যে রয়েছে। মমতাবালা ইতিমধ্যে আলাদা কমিটি গড়ে সারা ভারত মতুয়া মহাসঙ্ঘের সঙ্ঘাধিপতি হয়েছেন। তৃণমূল জেলা নেতৃত্বের একাংশের প্রচ্ছন্ন সমর্থনও তিনি পাচ্ছেন বলে দলেরই একাংশের দাবি। সেই পরিস্থিতিতেই গাইঘাটা পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূল সদস্য সুব্রত বিজেপি-র দিকে ঝুঁকছেন কি না, তা নিয়ে মতুয়া-মহল তো বটেই আলোচনা চলছে শাসক দলের অন্দরে।
পাশাপাশি, মতুয়া-অন্দরের কোন্দলের সুযোগ নিতে চোখে পড়ছে বিজেপি-র তৎপরতাও। সম্প্রতি হাবরায় গিয়ে দলের রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ বলে এসেছেন, “তৃণমূল নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থে মতুয়া-পরিবারকে ব্যবহার করে এসেছে।”
তবে তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক প্রকাশ্যে বিজেপি-র এ দিনের দৌত্যকে গুরুত্ব দিতে নারাজ। তিনি বলেছেন, “মতুয়ারা জানেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁদের সঙ্গে আছেন এবং থাকবেন।” খোদ সুব্রত এ নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি। তাঁর বাবা মন্ত্রী মঞ্জুল ঠাকুর বলেছেন, “আমার এ ব্যাপারে কোনও বক্তব্য নেই।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy