Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

বিচারপ্রার্থীদের নাজেহাল করে ফের কর্মবিরতি

• মেয়ের অপমৃত্যুর মামলায় বারাসত আদালতে হাজির থাকার জন্য ট্রেনে উঠেছিলেন মঙ্গলবার। সারাটা রাত ট্রেনেই কেটে যায়। বিহার থেকে এসে বুধবার দুপুরে খড়দহের এক আত্মীয়ের বাড়িতে উঠেছিলেন মধ্যমগ্রামে গণধর্ষণের পরে আগুনে পুড়ে মৃত কিশোরীর বাবা-মা। কিন্তু বৃহস্পতিবার মামলার সাক্ষ্যগ্রহণই হল না। কারণ, বারাসত আদালতে কর্মবিরতি ছিল!

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৩:২৯
Share: Save:

• মেয়ের অপমৃত্যুর মামলায় বারাসত আদালতে হাজির থাকার জন্য ট্রেনে উঠেছিলেন মঙ্গলবার। সারাটা রাত ট্রেনেই কেটে যায়। বিহার থেকে এসে বুধবার দুপুরে খড়দহের এক আত্মীয়ের বাড়িতে উঠেছিলেন মধ্যমগ্রামে গণধর্ষণের পরে আগুনে পুড়ে মৃত কিশোরীর বাবা-মা। কিন্তু বৃহস্পতিবার মামলার সাক্ষ্যগ্রহণই হল না। কারণ, বারাসত আদালতে কর্মবিরতি ছিল!

• বামনগাছির প্রতিবাদী যুবক সৌরভ চৌধুরী খুনের মামলাটিরও শুনানির কথা ছিল বৃহস্পতিবার। সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য অফিস থেকে ছুটি নিয়ে অন্য ছেলের সঙ্গে এসেছিলেন সৌরভের বাবা। কিন্তু সেই বিচারও বন্ধ রইল এ দিন। কারণ, বারাসত আদালতে কর্মবিরতি ছিল!!

• মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ, আর্থিক কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত ব্যবসায়ী শিবাজি পাঁজার জামিনের বিরোধিতা করতে বারাসতে উচ্চ আদালতের (জেলা জজ কোর্ট) দ্বারস্থ হয়েছিল দিল্লি পুলিশের তদন্তকারী দল। বৃহস্পতিবার সেই কাজটাও হল না। কারণ, বারাসত আদালতে কর্মবিরতি ছিল!!!

‘অদৃষ্ট’কে দুষতে দুষতে ফিরে গেলেন মধ্যমগ্রামের লাঞ্ছিতা কিশোরীর মা-বাবা এবং বামনগাছির পুত্রহারা বাবা। আর্থিক কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত ব্যবসায়ীর জামিন সংক্রান্ত মামলার শুনানির দিনও পিছিয়ে গেল ৪ মার্চ পর্যন্ত। ফলে সব কাজ ফেলে কলকাতাতেই বসে থাকতে হচ্ছে দিল্লি পুলিশের তদন্তকারী অফিসারদের।

অথচ সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ, কোনও পরিস্থিতিতেই বিচারপ্রার্থীদের স্বার্থ ক্ষুণ্ণ হয়, এমন কিছু করা চলবে না। কিন্তু এ দিন তার উল্টো ঘটনাই ঘটল বারাসত জেলা আদালতে। এক আইনজীবীর মৃত্যুতে ওই আদালতে কর্মবিরতি পালন করলেন বার এবং অ্যাডভোকেট অ্যাসোসিয়েশনের আইনজীবীরা। ফলে শুধু উপরের ওই তিনটি মামলা নয়, আটকে রইল আরও হাজার দুয়েক মামলা। ভোগান্তি বাড়ল বিচারপ্রার্থীদের।

এমন ঘটনা বারাসত আদালতে নতুন নয়। উত্তর ২৪ পরগনা পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘২০১৪ সালে শুধু এমন মৃত্যুর কারণে বারাসত জেলা আদালত প্রায় ৭০ দিন বন্ধ ছিল। এটাই আমাদের কর্মসংস্কৃতি!’’

বিচারপ্রার্থীরাও বলছেন একই কথা। মধ্যমগ্রামে গণধর্ষণ কাণ্ডে মৃত কিশোরীর বাবা বলেন, “আমাদের উপর দিয়ে যে-ঝড় যাচ্ছে, তা যেন কারও না-হয়। মেয়ের মৃত্যুর শোকের সঙ্গে নিত্যদিনের হয়রানি সহ্য করতে হচ্ছে। বিচারের নামে তারিখের পর তারিখ, তারিখের পর তারিখ পড়ছে। সব কাজ ছেড়ে বিহার থেকে এসে ঘুরে যেতে হচ্ছে। কবে যে বিচার পাব, জানি না!” বামনগাছির নিহত প্রতিবাদী সৌরভের দাদা সন্দীপ একই সুরে বললেন, ‘‘বারবার এ-রকম চলতে থাকলে আর সাক্ষ্য দেওয়ার মানসিকতা থাকে কি?’’

সুবিচারের আশায় অর্থ ও সময় ব্যয় করে মানুষ আদালতের দ্বারস্থ হন। সেই বিচারালয়েই শোকের নামে এমন কর্মবিরতির রেওয়াজ কেন? জানুয়ারিতেই কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি মঞ্জুলা চেল্লুরের হস্তক্ষেপে সেখানে কর্মবিরতির ডাক উপেক্ষা করে কাজ করে দৃষ্টান্ত গড়েছেন অনেক বিচারপতি এবং কৌঁসুলি। হাইকোর্ট কড়া মনোভাব দেখিয়ে কাজ চালু রাখতে পারলে নিম্ন আদালত একই পথে হাঁটবে না কেন, সেই প্রশ্ন উঠছে। বিচারপ্রার্থীদের প্রশ্ন, আইনজীবীরা হুটহাট কর্মবিরতি ডাকবেন আর আমাদের কি এ ভাবেই ফিরে যেতে হবে দিনের পর দিন?

অচিরেই বিচারপ্রার্থীদের হয়রানির অবসান ঘটবে, এমন কোনও আশা দিচ্ছে না আইনজীবী সমিতি। আইনজীবীদের সংগঠন ডিস্ট্রিক্ট অ্যাডভোকেট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি রণজিৎ সাহা জানান, কর্মবিরতি করা যাবে না, সুপ্রিম কোর্টের এমন কোনও নির্দেশ তাঁরা পাননি। “কোনও আইনজীবীর মৃত্যু হলে কর্মবিরতির রেওয়াজ চলছে বহু দিন ধরেই। তবে এতে যে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি হয়, সেই বিষয়ে আমি সহমত। আমি জানিয়ে দিয়েছি, আমার মৃত্যুর পরে যেন কর্মবিরতি করা না-হয়,” বলেন রণজিৎবাবু।

কৌঁসুলি সমিতির এক কর্মকর্তার এমন ঘোষণায় যে সুরাহা হওয়ার নয়, বিচারক ও আইনজীবীরা তা জানেন। সমস্যাটা যে গভীর, বারাসত জেলা আদালতের জেলা ও দায়রা বিচারক অমিতাভ চট্টোপাধ্যায় সেটা বিলক্ষণ বুঝেছেন। তাই কর্মবিরতি এবং সেই কারণে বিভিন্ন মামলা আটকে যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে এ দিন বিকেলে একটি বৈঠক ডাকেন তিনি।

কী আলোচনা হল সেই বৈঠকে?

‘‘কোনও আইনজীবীর মৃত্যুতে আদালত বন্ধ থাকবে কি না, সেই বিষয়ে আমরা বৈঠক করে বিচারককে জানাব বলেছি। আশা করছি, শীঘ্রই সমাধান মিলবে,” বললেন সরকারি আইনজীবী শান্তময় বসু।

অন্য বিষয়গুলি:

barasat court
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy