ছবি: প্রদীপ আদক
গত জুলাই মাসে ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে রাজ্য নির্বাচন কমিশনার মীরা পাণ্ডের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই বিরোধ গড়িয়েছিল শীর্ষ আদালত পর্যন্ত। এ বার লোকসভা ভোট নিয়ে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বিতর্ক তৈরি করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
রবিবার সন্ধ্যায় কলকাতা ছেড়ে যাওয়ার আগে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার ভি এস সম্পত বলেছিলেন, “একটু অপেক্ষা করুন। কড়া নজর রাখছি, পক্ষপাতদুষ্টদের সরিয়ে দেব।” সম্পতের ঘোষণার কুড়ি ঘণ্টার মধ্যেই সোমবার দিল্লির নির্বাচন দফতর থেকে নবান্নে বার্তা পাঠিয়ে এক জেলাশাসক এবং পাঁচ জেলার পুলিশ সুপারকে সরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ পাঠানো হয়েছে। বদলির তালিকায় দু’জন অতিরিক্ত জেলাশাসকও রয়েছেন। কমিশন জানিয়েছেন, অপসারিত অফিসারদের ‘ফিল্ড পোস্টিংয়ে’ তো বটেই, এমনকী কোনও রকম নির্বাচনী কাজেই পাঠানো যাবে না। তাঁদের কোনও পদে বসাতে হলে কমিশনের আগাম অনুমতি নিতে হবে। নবান্ন সূত্রের খবর, আজ, মঙ্গলবার সকাল এগারোটার মধ্যে সরকারকে কার্যকর করতে হবে কমিশনের এই নির্দেশ।
নির্দেশটি যখন কলকাতায় পৌঁছয়, মুখ্যমন্ত্রী তখন বর্ধমানের জামালপুরে এক নির্বাচনী সভায় গিয়েছেন। মঞ্চে ওঠার আগেই তাঁর একটা ফোন আসে। মঞ্চের এক কোণে গিয়ে কথা বলে নেন তিনি। এর কয়েক মিনিট পরে পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়কে বক্তব্য রাখতে বলে তিনি আবার ফোনে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। তার পর বক্তৃতা শুরুই করেন চড়া মেজাজে।
ওই সভাতেই মমতা বলেন, “রাজ্যকে কোনও ভাবে না জানিয়ে পাঁচ জন অফিসারকে বদলি করা হয়েছে। কারা আসবেন, সেই নামগুলিও রাজ্যকে জানানো হয়নি। নির্বাচন কমিশন আঞ্চলিক দলগুলির বিরুদ্ধে চক্রান্ত করছে। কংগ্রেস এবং বিজেপি-র লোকেদের সুবিধা করে দেওয়ার জন্যই এসপি-দের সরিয়ে দেওয়া হল।” তাঁর বক্তব্য, “বদলি করতে হলে সরকারের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। সরকারকে না জানিয়ে কিছু করা যাবে না।” এর পরে তাঁর ঘোষণা, “হয় মমতা ব্যানার্জি ল অ্যান্ড অর্ডার দেখবে, নয় ইলেকশন কমিশন।” তিনি বলেন, “আমি নির্বাচন কমিশনকে চ্যালেঞ্জ করছি। কোনও অফিসারকে সরাব না, আমি মুখ্যমন্ত্রী থাকা পর্যন্ত। কিছু ঘটলে দায় আপনার (নির্বাচন কমিশনের)।”
পরে রাজ্যের মুখ্যসচিব যে চিঠি পাঠান নির্বাচন কমিশনকে, সেখানেও প্রায় একই যুক্তি দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, এই যে অদলবদল করা হয়েছে, তাতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খারাপ হলে রাজ্য সরকার কোনও দায়িত্ব নেবে না। সব দায়িত্ব কমিশনের। যদিও আইনশৃঙ্খলা রাজ্যের বিষয়, কিন্তু কমিশন এ ভাবে একতরফা সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরে তাদেরই সব দায় বলে জানিয়েছে রাজ্য প্রশাসন।
কমিশনের নির্দেশকে কার্যত উড়িয়ে দিয়ে প্রকাশ্যে কোনও মুখ্যমন্ত্রী সে কথা ঘোষণা করছেন এ ঘটনা অভূতপূর্ব বলেই মনে করছেন প্রশাসনিক কর্তাব্যক্তি থেকে সংবিধান বিশেষজ্ঞরা। রাজ্য প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্তা বলেছেন, “এমন পরিস্থিতি অতীতে হয়নি। বদলি করার ফাইল তৈরি করে মুখ্যমন্ত্রীকে দেওয়া হয়েছে। তিনিই সিদ্ধান্ত নেবেন।” এখন মমতা যদি এই নির্দেশ না মানেন, তা হলে কী হবে? মুখ্যমন্ত্রী নিজেই চ্যালেঞ্জের সুরে সে কথা বলেছেন কমিশনকে, “যদি এই নির্দেশ না মানি, কী করবেন? সাসপেন্ড করবেন? গ্রেফতার করবেন? সরিয়ে দেবেন?” তার পরেই বলেন, “ক্ষমতা থাকলে সরান। মনে রাখবেন, আমি চেয়ারের কেয়ার করি না। আমাকে জেলে ভরবেন?” একই সঙ্গে তাঁর হুঁশিয়ারি, “এত দিন আপনাদের কিছু বলিনি। এই বার লক্ষ্মণগণ্ডী পার করেছেন।” একই সঙ্গে অবশ্য এ-ও বলেন, “এই নির্দেশ সাংবিধানিক হলে মানব, নইলে মানব না।”
মমতার এই হুঁশিয়ারি দিল্লিতে কমিশনের কানেও পৌঁছেছে। এক সাংবাদিক বৈঠকে এই নিয়ে প্রশ্ন করা হলে উপ-নির্বাচন কমিশনার অলোক শুক্ল বলেন, “উপযুক্ত সময়ে নির্বাচন কমিশন উপযুক্ত পদক্ষেপ নেবে।” কিন্তু আমলাদের সরাবেন না বলে যে হুমকি দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী, তিনি কি তা করতে পারেন? সরাসরি এই প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে নির্বাচন কমিশনের ডিজি আশিস শ্রীবাস্তব বলেন, “নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণার পর থেকেই কমিশনের আওতায় চলে আসে রাজ্য প্রশাসন।” মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য নিয়ে কলকাতায় রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী অফিসার সুনীল গুপ্ত সরাসরি কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে তিনি বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্যের সিডি, পেপার কাটিং সংগ্রহ করবে নির্বাচন কমিশন। তার পর সে সব দিল্লিতে পাঠিয়ে কমিশনের সিদ্ধান্ত জানা হবে।”
প্রশ্ন হল, কী করতে পারে কমিশন?
বিশেষজ্ঞরা প্রথমেই সংবিধানের ৩২৪ (১) ধারার কথা বলছেন। সেই ধারায় নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতার ব্যাখ্যা দিয়ে বলা হয়েছে: লোকসভা, বিধানসভা, রাষ্ট্রপতি ও উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ভোটার তালিকা তৈরি থেকে নির্বাচন পরিচালনা পর্যন্ত যাবতীয় কাজের তত্ত্বাবধান, পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। তাদের কাজে প্রশাসন বা আদালত হস্তক্ষেপ করবে না। সংবিধান বিশেষজ্ঞ সুভাষ কাশ্যপের মতে, “নির্বাচন চলাকালীন কমিশনের হাতেই সমস্ত ক্ষমতা থাকে। তারা প্রয়োজনে প্রশাসনিক রদবদল করতেই পারে। কোনও মুখ্যমন্ত্রী তা মানতে রাজি না হলে তিনি সংবিধানবিরোধী কাজ করবেন।” কমিশনের নির্দেশের পরে মুখ্যমন্ত্রী কি ওই আমলাদের পদে রেখে দিতে পারেন? কাশ্যপের জবাব, “কোনও ব্যক্তি চাইলে আইন ভাঙতেই পারেন। সংবিধান বিরোধী কাজও করতে পারেন। প্রত্যেকেরই অধিকার রয়েছে আইন ভাঙার।” সপ্তম, অষ্টম ও নবম লোকসভায় সেক্রেটারি জেনারেলের দায়িত্বে থাকা সুভাষবাবুর বক্তব্য, “এর আগে এ ধরনের কোনও ঘটনা ঘটেছে বলে আমি মনে করতে পারছি না।” কমিশনের এক কর্তা জানান, ভোটের বিজ্ঞপ্তি জারি হওয়ার পর ১৯৫১ সালের ভারতের জনপ্রতিনিধিত্ব আইনের ২৮-এ ধারা মেনে সমস্ত অফিসার এবং কর্মীদের নির্বাচন কমিশনে ডেপুটেশনে পাঠানোর বিজ্ঞপ্তি জারি করতে হয়। এ বারেও রাজ্য সরকার সেই বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। নির্দেশ মানব না, সরকারের এখন আর এ কথা বলার সুযোগ নেই। ওই কর্তা জানান, এ বারেই পঞ্জাব পুলিশের ডিজি, উত্তরপ্রদেশের ১৯ জন জেলাশাসক, ২৩ জন পুলিশ সুপার, বিহারের ৬ জন জেলাশাসক ও এসপি-কে সরিয়ে দিয়েছে কমিশন। পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে পক্ষপাতিত্বমূলক আচরণ করা হচ্ছে না।
অথচ এ দিনের বক্তৃতায় পক্ষপাতিত্বের অভিযোগই তুলেছেন মমতা। বলেছেন, “অধীরকে জেতাতে আলাদা ভোট হচ্ছে মুর্শিদাবাদে। মানসকে জেতাতেও আলাদা দিনে ভোট হচ্ছে। আসানসোলে বিজেপিকে লিড দিতে ছক সাজিয়েছে।” তাঁর অভিযোগ, “গুজরাতে এক দিনে ভোট আর আমাদের এখানে দু’মাস ধরে ভোট হচ্ছে। তার কারণ, নরেন্দ্র মোদী সারা ভারত জুড়ে প্রচার করবেন।” এর পরে মমতার ঘোষণা, “ইনশাল্লাহ্, এ লড়াই একাই জিতব। আজ অন্নপূর্ণা পুজো। দেবীর নামে শপথ করে বলছি, এই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে আমরা জিতব। আপনাদের মুখোশ জনতা খুলে দেবে।” তিনি বলেন, “নির্বাচন কমিশন এক জন অফিসারকে ঠিক করেছে, যাঁর নামে জামিনঅযোগ্য ধারায় মামলা রয়েছে। এই অফিসার কী করে নির্বাচনের দায়িত্বে থাকতে পারেন? নাম করে বলছি, জুৎসি (উপ-নির্বাচন কমিশনার)।”
ঘটনা হচ্ছে, এমন বদলি বা শাসকদলের সঙ্গে কমিশনের সঙ্ঘাতের ঘটনা এর আগে ঘটেছে। ২০১১-তে বিধানসভা ভোটের সময় বিনোদ জুৎসিই ছিলেন এই রাজ্যের দায়িত্বে। তখন তৃণমূলের নালিশ মেনে নিয়ে পূর্ব মেদিনীপুরের এসপি অজিত সরকারকে সরিয়ে দিয়েছিল কমিশন। তারও আগে এক বার ভোটের সময় কমিশনের পর্যবেক্ষকদের হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন সিপিএম নেতা বিমান বসু। তখন কমিশনের তরফে রাজ্যের দায়িত্বে ছিলেন আফজল আমানুল্লা। তিনি পত্রপাঠ দিল্লিতে কমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পশ্চিমবঙ্গে ভোট স্থগিত করে দেওয়া হতে পারে, এমন বিষয়ও আলোচনায় ওঠে। বেগতিক দেখে রাজ্য সরকার কমিশনের সঙ্গে বিষয়টি মিটিয়ে নেয়।
এ ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের তরফে এর মধ্যেই কমিশনকে চিঠি দিয়েছেন মুখ্যসচিব। রাজ্যকে না জানিয়ে এই অদলবদল নিয়ে সরকারের যুক্তি, এখন জেলাগুলিতে নতুন এসপি গিয়ে দায়িত্ব বুঝে নিতে নিতেই ভোট এসে যাবে। পশ্চিম মেদিনীপুর, মুর্শিদাবাদের মতো স্পর্শকাতর জেলাগুলিতে এমন বদলি অবিমৃষ্যকারীর মতো সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে রাজ্যের দাবি। তাদের আরও বক্তব্য, ফলে ওই সব জেলায় যারা গোলমাল বাধাতে চাইছে, তারা সহজেই সক্রিয় হতে পারবে। যে বিবেচনা বোধ কমিশনের দেখানো উচিত, তা এই সিদ্ধান্তে পাওয়া গেল না।
রাজ্যের আরও যুক্তি, এই অদলবদল করতে গিয়ে এমন অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে জেলা পুলিশ প্রধানের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, যাঁর নাম এসপি তালিকাতেই ওঠেনি। এর ফলে পদমর্যাদার বিন্যাস ব্যাহত হবে। রাজ্যের প্রশ্ন, সরকারের সঙ্গে আলোচনা না করে দিল্লি থেকে বসে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হলই বা কী ভাবে?
কমিশনের সঙ্গে এমন সরাসরি সঙ্ঘাতে গেলেন কেন মমতা?
রাজনৈতিক দলগুলির অনেকেই বলছেন, এর আগে পঞ্চায়েত ভোটের সময় রাজ্য নির্বাচন কমিশনার মীরা পাণ্ডের সঙ্গে একই ভাবে সংঘাতে জড়িয়ে পড়েন তিনি এবং শাসকদল তৃণমূল। ভোটের প্রচারে মীরার নাম তুলে আক্রমণও করেছিলেন তৃণমূলের নেতারা। এ বারেও মমতার পরিষ্কার কথা, “আমাকে যদি গ্রেফতার করা হয়, যদি জেলে যাই, সবাই জোড়া ফুলে ভোট দেবেন। বাংলার অসম্মান আমি সহ্য করতে পারব না।” তাঁর সাফ কথা, “এত দিন ভাবছিলাম, এ রাজ্যে আমাদের ৩৫-৩৬টা আসন পেলেই হয়ে যাবে। আজ থেকে ৪২-এ ৪২ পাওয়ার লড়াই শুরু হল।”
এই বক্তৃতাকে উল্লেখ করে অনেকেই বলছেন, কমিশনের সঙ্গে সঙ্ঘাতকে কাজে লাগিয়ে এ বার সহানুভূতি কুড়নোর কাজেই নামবে তৃণমূল। তৃণমূল সূত্রেও খবর, আজ মঙ্গলবার থেকেই এই নিয়ে পুরোদমে প্রচারে যেতে চাইছে তারা। সেখানে তৃণমূল নেতারা বলবেন, কমিশন দাদাগিরি করছে। জাতীয় স্তরে কমিশনের এই ক্ষমতার বিরুদ্ধের প্রস্তাব আনার দাবিও তুলবেন তাঁরা।
এ দিন জামালপুর থেকে দুর্গাপুর যাওয়ার আগে হেলিপ্যাডে দাঁড়িয়ে প্রায় আধ ঘণ্টা তিনি বর্ধমানের এসপি এসএমএইচ মির্জা এবং জেলার তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে কথা বলেন। তৃণমূল সূত্রের খবর, মির্জাকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “অফিসারদের কেন সরিয়ে দেওয়া হল তা আমি লিখিত ভাবে নির্বাচন কমিশনের কাছে জানতে চাইব। যত ক্ষণ পর্যন্ত না আমি কিছু বলছি, তুমি চুপ করে বসে থাকবে।” মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ অবশ্য জানান, হেলিকপ্টার ওড়ার সিগন্যাল না মেলায় মুখ্যমন্ত্রী বিরক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন।
মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য প্রসঙ্গে শিলিগুড়িতে বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী বক্তব্য বিধিভঙ্গের মধ্যে পড়ে। এই বক্তব্য সংবিধান বহির্ভূত, তাঁর এক্তিয়ারের বাইরে ও গণতন্ত্রের পক্ষে বিপজ্জনক।” সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু বলেন, “উনি (মমতা) আইনের তোয়াক্কা করেন না। সেই বার্তাই দিতে চেয়েছেন।” প্রাক্তন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য বলেন, “যিনি কমিশনের কথা মানবেন না বলছেন, তিনি যেন সংবিধানটা পড়েন।” কংগ্রেস নেতা মানস ভুঁইয়ার বক্তব্য, “মুখ্যমন্ত্রীকে বলব মাথা ঠান্ডা রাখুন, উত্তেজিত হবেন না। আপনার অভিযোগ শুনলে মানুষ হাসবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy