জামিনের টাকা জুগিয়ে একের পর এক বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীকে বসিরহাট জেল থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছিল এক যুবক। তাতে সন্দেহ হওয়ায় খোঁজখবর করতে গিয়ে পুলিশের সামনে চলে এসেছে ঠিক হাওয়ালার কায়দায় বিশাল অঙ্কের টাকা এ দেশ থেকে বাংলাদেশে পাচার করার চক্র।
টাকার অঙ্কটা এতটাই বেশি যে প্রথমেই চোখ কপালে উঠেছিল উত্তর ২৪ পরগনার পুলিশকর্তাদের। দেখা যায়, হাসনাবাদের প্রত্যন্ত গ্রামের এক বাসিন্দার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতি মাসে কোটিরও বেশি টাকা লেনদেন হচ্ছে। আমির আলি নামে সেই লোকটিকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। তাকে জেরার সূত্রে ধরে তামিলনাড়ু থেকেও তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়। প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, তারা শ্রমিক জোগানের ঠিকাদার। মূলত তামিলনাড়ুর ইরোড জেলায় কাজ করা বাংলাদেশি শ্রমিকেরাই তাদের মাধ্যমে দেশে টাকা পাঠাচ্ছিলেন।
যদিও অতীতে বারবার দেখা গিয়েছে, এই ধরনের বিপুল টাকা চলাচলের সঙ্গে সাধারণত জঙ্গি কার্যকলাপেরও যোগ থাকে। এ ক্ষেত্রেও তেমন কিছু রয়েছে কি না, তা অবশ্য নিশ্চিত নয়।
বুধবার পুলিশ সুপার তন্ময় রায়চৌধুরি বলেছেন, “আপাতত জানা গিয়েছে, বিভিন্ন রাজ্যে কর্মরত বাংলাদেশিদের টাকা প্রতি মাসে তাদের দেশে পাঠানোর কাজ করত চক্রটি। ধৃতদের জেরা করে আরও তথ্য পাওয়ার চেষ্টা চলছে বলে জানা গিয়েছে। জঙ্গি যোগের ব্যাপারেও খোঁজখবর শুরু হয়েছে।”
কী ভাবে ওই চক্রটির হদিস মিলল?
পুলিশ সূত্রের খবর, ‘রাহুল দাস’ নামে এক জন জামিনদার হয়ে বসিরহাটের জেলে আটকে থাকা বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের ছাড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে বলে গত কিছু দিন ধরেই খবর মিলছিল। গত ১২ ডিসেম্বর তাকে আটক করা হয়। জেরায় জানা যায়, সে আসলে বাংলাদেশি, আসল নাম মাসুদ বিল্লা। তার আগে কয়েক দিনের মধ্যে সে গোয়া, অসম, তামিলনাড়ু হয়ে বসিরহাটের হাসনাবাদে এসে ঘাঁটি গেড়েছে। পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। জেরায় মাসুদ দাবি করে, হাসনাবাদের আমির আলির কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা নিয়ে জেল থেকে বাংলাদেশিদের ছাড়াতে হবে বলে তামিলনাড়ুরই কয়েক জন তাকে বরাত দিয়েছিল।
এর পরেই আমির আলিকে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশ সুপার বলেন, “আমির আলির বিভিন্ন ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খতিয়ে দেখা যায়, প্রতি মাসে কোটি টাকারও বেশি লেনদেন হচ্ছে। সে-ই জেরায় জানায়, ওই টাকা তামিলনাড়ু থেকে বাংলাদেশে পাঠানোর জন্য তিন জন তাকে বরাত দিয়েছে।”
তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, শুধু ইরোড এলাকাতেই পঞ্চাশ হাজারেরও বেশি বাংলাদেশি নানা রকম কাজে যুক্ত রয়েছেন। এঁদের টাকা চোরাপথে পাচারের চক্রে আরও অনেকে জড়িয়ে রয়েছে বলে তদন্তকারীদের ধারণা। ধৃত পাঁচ জনকে বসিরহাট আদালতে তুলে নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার পরে বাকিদের খোঁজে পুলিশ বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি শুরু করেছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy