মঙ্গলবারই হাইকোর্টে রাজ্য সরকারের ভূমিকার কড়া সমালোচনা করেছেন প্রধান বিচারপতি মঞ্জুলা চেল্লুর। যদিও সন্ধেয় এক অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে হাসিমুখেই দেখা গেল তাঁকে। ছবি: সুমন বল্লভ
দু’মাস ধরে তিনি পর্যবেক্ষণ করছিলেন বিষয়টি। মাঝেমধ্যে আদালতে বিষয়টি নিয়ে মন্তব্যও করেছেন। কিন্তু মঙ্গলবার নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলেন না। ক্ষোভ উগরে দিলেন কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি মঞ্জুলা চেল্লুর। হাইকোর্টে বিভিন্ন মামলায় গরহাজির থাকা, কম অভিজ্ঞদের পাঠানো, শুনানি পিছনোর চেষ্টা করা বা আরও বিভিন্ন রকমের টালবাহানা নিয়ে রীতিমতো ভর্ৎসনা করলেন সরকার পক্ষের আইনজীবীদের।
এই ক্ষোভের কথা জানার পরে রাজ্যের আইনমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, প্রধান বিচারপতির ঘরে দু’জন প্রবীণ আইনজীবীকে রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আর গরহাজিরার বিষয়টি নিয়ে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী। আইনজীবীদের একটি অংশ ও বিভিন্ন মামলায় ভুক্তভোগীরা অবশ্য মন্ত্রীর এই ঘোষণার পরেও পরিস্থিতি আদৌ বদলাবে কি না সে ব্যাপারে সন্দেহ প্রকাশ করছেন।
এ দিন ঘটনার সূত্রপাত হয় বীরভূমের মাখড়ায় রাজনৈতিক সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে তিন জনের মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে দায়ের হওয়া একটি জনস্বার্থ মামলার শুনানি নিয়ে। বিকেল নাগাদ মামলাটি প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে ওঠে। সে সময় সরকারের পক্ষে কেউ এজলাসে হাজির ছিলেন না। আবেদনকারীর সওয়ালের মাঝপথে এজলাসে ঢোকেন রাজ্যের জিপি (গভর্নমেন্ট প্লিডার) অভ্রতোষ মজুমদার। মাখড়ার ঘটনায় ১৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে আদালতকে জানান তিনি। এর পরেই ক্ষুব্ধ প্রধান বিচারপতি জিপি-র উদ্দেশে বলেন, “সকালে কোনও মামলায় তো আপনাকে দেখা যায়নি! এখন কেন এসেছেন? অন্য কোনও মামলায় তো আপনার কোনও মাথাব্যথা নেই। এই মামলায় কি আপনার কোনও বিশেষ স্বার্থ রয়েছে? এটা কি রাজনৈতিক বিষয় বলেই আপনার এত উৎসাহ?”
সে সময় জিপি-র পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন হাইকোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি তথা রাজ্যের সিনিয়র স্ট্যান্ডিং কাউন্সেল প্রণব দত্ত। তিনি প্রধান বিচারপতিকে সমর্থন করে মন্তব্য করেন, “এটা দুর্ভাগ্যজনক।” সেই সঙ্গে রাজ্যকে শেষ বারের মতো একটা সুযোগ দিতে প্রধান বিচারপতির কাছে অনুরোধও জানান প্রণববাবু।
সওয়ালের সময়ে এজলাসে আইনজীবীদের অনুপস্থিতি নিয়ে পুজোর ছুটির আগেই বিরক্তি প্রকাশ করেছিলেন প্রধান বিচারপতি। এ দিনও সেই প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বিচারপতি চেল্লুর জিপি-কে বলেন, “পুজোর ছুটি শেষে হাইকোর্ট খুলেছে ২৭ অক্টোবর। সে দিন থেকে এক বারও সরকারি কোনও আইনজীবীকে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত একটানা আমার এজলাসে রাখা হয়নি।”
প্রধান বিচারপতির ক্ষোভের আরও একটি কারণ, রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে অপেক্ষাকৃত অনভিজ্ঞদের দাঁড় করানো হচ্ছে তাঁর ঘরের বিভিন্ন মামলায়। বিচারপতি চেল্লুর বলেন, “বহু ক্ষেত্রেই দেখছি সরকারের পক্ষ থেকে তুলনায় নবীন কোনও আইনজীবীকে হাজির করিয়ে আদালতের কাছ থেকে সময় চেয়ে নেওয়া হচ্ছে। নয়তো মামলার শুনানি পিছিয়ে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে। এতে সরকারের উদ্দেশ্য পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে।”
প্রধান বিচারপতির ভর্ৎসনায় কার্যত চুপ হয়ে যান জিপি। প্রধান বিচারপতি জানান, এর আগে তাঁর ডিভিশন বেঞ্চে যখন বিচারপতি অসীম বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন, সেই সময়েও একাধিক বার এ নিয়ে তিনি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন। রাজ্যের এই আচরণ সম্পর্কে হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলকে তিনি অবিলম্বে জানাবেন বলে মন্তব্য করেন প্রধান বিচারপতি।
প্রধান বিচারপতির ক্ষোভ নিয়ে রাজ্যের অতিরিক্ত অ্যাডভোকেট জেনারেল অশোক বন্দ্যোপাধ্যায় কোনও মন্তব্য করতে চাননি। রাজ্যের আইনমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেন, “সিদ্ধান্ত হয়েছে, এ বার থেকে প্রধান বিচারপতির ঘরে দু’জন প্রবীণ সরকারি আইনজীবীকে রাখা হবে।” একই সঙ্গে আইনমন্ত্রী জানান, সব মামলা জিপি-র কাছে থাকে না। যাঁদের কাছে মামলা রয়েছে, তাঁরা কেন হাজির ছিলেন না, সে ব্যাপারে খোঁজখবর নেওয়া শুরু হয়েছে।”
কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী অরুণাভ ঘোষ বলেন, “এটা সরকার পক্ষের আইনজীবীদের রেওয়াজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অন্য এজলাসেও তাঁরা সব সময় হাজির থাকছেন না। সরকার পক্ষের আইনজীবী না থাকলে বিচারপতিকে একতরফা রায় দিতে হয়। কিন্তু বিচার ব্যবস্থায় একতরফা রায় দেওয়াটা তো সঠিক বিচার নয়।”
কলকাতা হাইকোর্টের অন্য এক আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, “এই প্রধান বিচারপতিই নন, প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি অরুণ মিশ্রেরও একই অভিজ্ঞতা হয়েছিল। আসলে মামলা দেওয়া নিয়ে গোষ্ঠী রাজনীতি চলছে কলকাতা হাইকোর্টে। সেই কারণেই এই অবস্থা।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy