নিজের দলের সঙ্গে সম্পর্ক ছেদের কথা ঘোষণা করে এ বার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভূয়সী প্রশংসা করলেন সিপিএমের প্রাক্তন সাংসদ লক্ষ্মণ শেঠ!
দলের সদস্যপদ আর নবীকরণ করতে চান না জানিয়ে আগেই সিপিএম রাজ্য সম্পাদক বিমান বসুকে চিঠি পাঠিয়েছিলেন লক্ষ্মণবাবু। তবু জেলা কমিটির সিদ্ধান্ত মেনে বুধবার দলের পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর দুই সদস্য কলকাতায় এসে তাঁর সঙ্গে কথা বলেন। কিন্তু তাঁদের খালি হাতে ফিরিয়ে দিয়ে সংবাদমাধ্যমে মমতার বন্দনায় মুখর হন পূর্ব মেদিনীপুরের এক সময়ের দোর্দণ্ডপ্রতাপ এই সিপিএম নেতা!
নন্দীগ্রাম নিখোঁজ মামলায় অভিযুক্ত লক্ষ্মণবাবুর আস্তানা এখন কালীঘাটে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির অদূরেই। সংবাদমাধ্যমকে এ দিন তিনি বলেছেন, প্রশাসক হিসাবে মমতা ক্রমশ উন্নতি করছেন। পাহাড় ও জঙ্গলমহলে শান্তি ফিরিয়েছেন। প্রাক্তন সাংসদের কথায়, “মুখ্যমন্ত্রীর বুকের পাটা আছে, মানতে হবে!” তাঁর দাবি, পাহাড়ে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে ভাবে বলেছেন বাংলাকে ভাগ হতে দেবেন না, বাম আমলে সেই রকম দৃঢ়তা দেখানো যায়নি।
এ কথার উত্তরে সিপিএম রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য শ্যামল চক্রবর্তী বলেন, “ওর স্মৃতিশক্তি বোধহয় কমে যেতে শুরু করেছে! বাম আমলে পাহাড় নিয়ে যে চুক্তি হয়েছিল, সেখানে গোর্খাল্যান্ডের কোনও উল্লেখ ছিল না। ১৯৮৬ থেকে নেপালিভাষী ৪২ জন কমরেড খুন হয়েছেন শুধু বাংলাকে ভাগ হতে দেব না, পাহাড়ে এই কথা বলার জন্য।” জঙ্গলমহল প্রসঙ্গে তাঁর মন্তব্য, “ওখানে শান্তি তো আসবেই। যারা অশান্তি করতো, তারা এখন তৃণমূল করছে! বা সরকারের আশ্রয়ে আছে!” লক্ষ্মণবাবুর এ দিনের মন্তব্যের জন্য তাঁর
কৈফিয়ত চাওয়া হয়েছে বলেও শ্যামলবাবু জানান।
এর পরে দলে লক্ষ্মণের ভবিষ্যত্ কী? সিপিএম সূত্রের ইঙ্গিত, লক্ষ্মণবাবুর পরিণতি আর এক বিদ্রোহী নেতা আব্দুর রেজ্জাক মোল্লার মতোই হতে চলেছে। অনেকেরই ধারণা, লক্ষ্মণ নিজে তাঁর বহিষ্কারের পথ সুগম করতেই এ দিন পরিকল্পিত ভাবে মুখ খুলেছেন। এ দিন প্রশ্নের জবাবে লক্ষ্মণবাবু নিজেই বলেছেন, “৩১ মার্চের পরে এই সিপিএম পার্টির সঙ্গে আমার কোনও সম্পর্ক থাকবে না।” ওই দিনই সিপিএমে সদস্যপদ নবীকরণের শেষ তারিখ। তবে এ দিনের ঘটনার পরে তার আগেই লক্ষ্মণবাবুর ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারে আলিমুদ্দিন। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য গৌতম দেব এ দিন কটাক্ষ করে বলেন, “উনি (লক্ষ্মণ) এখন কোন দলে আছেন, খোঁজ নিতে হবে! কাগজে বিজ্ঞাপন দেননি ঠিকই। তবে শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে একটা লোক খুঁজছেন মমতা বন্দ্যেপাধ্যায়! লক্ষ্মণ শেঠ কি সেই কাজটা করতে পারবেন?”
লক্ষ্মণবাবুকে হারিয়েই তমলুক থেকে পাঁচ বছর আগে সাংসদ হয়েছিলেন শুভেন্দু। তিনি এ নিয়ে প্রথমে মন্তব্য করতে না-চাইলেও পরে বলেছেন, “লক্ষ্মণবাবুর শংসাপত্রের জন্য আমরা কেউ অপেক্ষা করে নেই! সবাই জানেন তা! তবে তিনি যে সামান্য শুভবুদ্ধি দিয়ে সত্যিটা স্বীকার করেছেন, সেটাই বড় কথা!” এই ‘শুভবুদ্ধি’র উত্স? সিপিএম এবং তৃণমূল, দু’দলেই গুঞ্জন, নন্দীগ্রাম মামলায় নিজেকে বাঁচাতেই ‘দিদি’র হাত ধরতে চাইছেন লক্ষ্মণ!
সিপিএমের অন্যতম ‘বাহুবলী’ বলে পরিচিত লক্ষ্মণবাবুকে নিয়ে দলে অনেক দিন ধরেই অস্বস্তি থাকা সত্ত্বেও কোনও চূড়ান্ত পদক্ষেপ করা হয়নি। এমনকী লক্ষ্মণ নিজে সদস্যপদ নবীকরণ করতে চান না বলে জানানোর পরেও হাল ছাড়েনি সিপিএম। এ দিন সদস্যপদের কাগজপত্র নিয়ে লক্ষ্মণবাবুর কলকাতার বাড়িতে গিয়েছিলেন পূর্ব মেদিনীপুরের দুই নেতা প্রশান্ত প্রধান ও প্রশান্ত পাত্র। কিন্তু লক্ষ্মণবাবু তাঁদের ফিরিয়ে দেন। তার পর সংবাদমাধ্যমে মুখ খোলেন। সেখানে তাঁর বিরুদ্ধে দলীয় তদন্ত প্রক্রিয়া নিয়ে বিমান বসু যে সব কথা বলেছেন, তাকে ‘কৌশল’ বলে কটাক্ষ করেন লক্ষ্মণবাবু।
বিঁধতে ছাড়েননি প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকেও। সম্প্রতি একটি সাক্ষাত্কারে বুদ্ধবাবুর বক্তব্যের সূত্র ধরেই এ দিন লক্ষ্মণবাবুর তোপ, “আমাদের দলের নীতি কংগ্রেস এবং বিজেপি-র থেকে সমদূরত্ব। এক দিকে সমদূরত্বের কথা বলব আবার কংগ্রেসকে সমর্থনের কথাও বলব, এটা কী ভাবে হতে পারে!”
এই ভাবে দলের বিরুদ্ধে সরব হওয়ার পর লক্ষ্মণকে বহিষ্কার করা ছাড়া উপায় থাকল না বলেই মনে করা হচ্ছে। দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের কথায়, “জেলায় সংগঠনে কিছু প্রভাব পড়লেও লক্ষ্মণবাবুকে বহিষ্কার করলে জনমত বরং আমাদের দিকেই থাকবে। অনেকে প্রশ্ন করছেন, কেন এখনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে না? একটা তদন্ত কমিশনের কাজ চলাকালীন নিয়মগত কিছু অসুবিধা আছে বলেই এত দিন কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি।” লক্ষ্মণবাবুর স্ত্রী তমালিকা পণ্ডা শেঠ অবশ্য সদস্যপদ নবীকরণ করিয়েছেন বলে দলীয় সূত্রের খবর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy