Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪

দু’যুগ বিচার না-পেয়ে পত্রবোমা হাইকোর্টে

মামলা লড়ছেন দীর্ঘ ২৪ বছর ধরে। কিন্তু বিচার মেলেনি। সেই ক্ষোভে তিনি কলকাতা হাইকোর্টের তিনটি বাড়িই উড়িয়ে দিতে চান। ওই তিন বাড়িতে বোমা রেখেও দিয়েছেন। সেগুলো ফাটবে শুক্রবার বেলা ২টোয়। কথাগুলো লেখা ছিল হাইকোর্টের মহিলা শৌচাগারের দেওয়ালে সাঁটানো একটি চিঠিতে। শুক্রবার দুপুরে ওই চিঠি নজরে পড়ার পরেই হুলস্থুল পড়ে যায় পুলিশমহলে। শুরু হয় তল্লাশি। শেষ পর্যন্ত অবশ্য বোমা বা বিপজ্জনক অন্য কিছু মেলেনি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ মার্চ ২০১৪ ০৩:৫৭
Share: Save:

মামলা লড়ছেন দীর্ঘ ২৪ বছর ধরে। কিন্তু বিচার মেলেনি। সেই ক্ষোভে তিনি কলকাতা হাইকোর্টের তিনটি বাড়িই উড়িয়ে দিতে চান। ওই তিন বাড়িতে বোমা রেখেও দিয়েছেন। সেগুলো ফাটবে শুক্রবার বেলা ২টোয়।

কথাগুলো লেখা ছিল হাইকোর্টের মহিলা শৌচাগারের দেওয়ালে সাঁটানো একটি চিঠিতে। শুক্রবার দুপুরে ওই চিঠি নজরে পড়ার পরেই হুলস্থুল পড়ে যায় পুলিশমহলে। শুরু হয় তল্লাশি। শেষ পর্যন্ত অবশ্য বোমা বা বিপজ্জনক অন্য কিছু মেলেনি।

কিন্তু চিঠিতে ক্ষোভের যে-বিস্ফোরণ ঘটেছে, তার অভিঘাত হাজারো বিচারপ্রার্থী থেকে শুরু করে আদালত, পুলিশ, আইনজীবী, সাধারণ মানুষ পর্যন্ত সকলের কাছেই কমবেশি পৌঁছে গিয়েছে। বিচারে বিলম্বের জন্য বহু আবেদনকারীর জীবন কী ভাবে বিপর্যস্ত হয়ে যাচ্ছে, তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়ে যায় আইনজীবী মহলে। কৌঁসুলিদের একাংশের বক্তব্য, কলকাতা হাইকোর্টে এখন প্রায় চার লক্ষ মামলা জমে রয়েছে। মামলার ফয়সালা না-হওয়ায় অজস্র বিচারাধীন বন্দি জেলে দিন কাটাতে বাধ্য হচ্ছেন। বিচারে সুরাহা হবে, এই আশায় নিদারুণ দুর্দশায় দিন গুনছেন অনেকে।

আইনজীবীদের একাংশ বলছেন, ১০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে মামলা চলছে, এমন নজিরও আছে। সম্প্রতি মধ্য কলকাতার অন্নপূর্ণা মন্দির সংক্রান্ত মামলাটি ৬০ বছর পার করেছে। এখন তৃতীয় প্রজন্ম সেই মামলা লড়ছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মের আগে শুরু হয়েছিল শোভাবাজার রাজবাড়ির মামলা। মামলা লড়তে লড়তে হতাশ হয়ে পড়ার নজিরও রয়েছে হাইকোর্টে। এ দিনের বিস্ফোরক চিঠিটি তেমনই কোনও হতাশ আবেদনকারীর হতে পারে বলে মনে করছেন কেউ কেউ।

ওই চিঠির সূত্র ধরে হাইকোর্টে কোনও বোমা মেলেনি ঠিকই। কিন্তু পত্রলেখক অভিযোগকারীর বক্তব্য নিয়ে কেউ কোনও প্রশ্ন তোলেননি। কয়েক জন আইনজীবীর মতে, বছরের পর বছর মামলা চলতে থাকায় আবেদনকারীরা যে অধৈর্য হয়ে পড়ছেন, এ দিনের ওই চিঠি তারই প্রমাণ। মামলার নিষ্পত্তি বিলম্বিত হতে থাকলে ক্ষোভের এমন প্রকাশ আরও দেখা যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন অনেকেই।

পুলিশও তা-ই মনে করছে। তবে বিচারপ্রার্থীদের ক্ষোভ ছাড়াও অন্য একটি আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। সেটা হল, উচ্চ আদালতে নিরাপত্তা-ব্যূহের এমনই হাল যে, সেখানে মেয়েদের শৌচাগারের দেওয়ালে অনায়াসে এমন চিঠি সেঁটে দেওয়া যায়! তা হলে তো বোমাও রেখে যেতে পারে যে-কেউ!

মাসখানেক আগেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক থেকে কলকাতা ও রাজ্য পুলিশকে সতর্ক করে দিয়ে বলা হয়েছিল, যে-কোনও সময়ে কলকাতা হাইকোর্টে জঙ্গি হানা হতে পারে। নাশকতা ঘটানোর জন্য গাড়িবোমা ব্যবহার করার সম্ভাবনা বেশি। সেই সতর্কবার্তা পেয়েই কলকাতার স্পেশ্যাল কমিশনার (২) সৌমেন মিত্র হাইকোর্টের নিরাপত্তা কমিটির সঙ্গে এই নিয়ে আলোচনা করেন। কিছু নিয়মকানুনও ঠিক হয়। ওই বৈঠকে নিরাপত্তা কমিটির হয়ে বিচারপতি অসীম বন্দ্যোপাধ্যায়, বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় ও বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী ছিলেন। ডাকা হয়েছিল বার অ্যাসোসিয়েশন ও বার লাইব্রেরির প্রতিনিধিদেরও। এর মধ্যেই শুক্রবারের ঘটনা।

এ দিন খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই কলকাতা পুলিশের ডিসি (ডিডি-২), ডিসি (রিজার্ভ ফোর্স) এবং ডিসি (সেন্ট্রাল) হাইকোর্টের শতবার্ষিকী হলে যান। বম্ব স্কোয়াড পৌঁছয় বেলা ৩টে নাগাদ। প্রথমে শতবার্ষিকী ভবনে তল্লাশি শুরু হয়। তার পরে হাইকোর্টের নতুন ভবনে। সব শেষে প্রায় সাড়ে ৪টে নাগাদ হাইকোর্টের মূল ভবনে তল্লাশি শুরু করে পুলিশ। কলকাতা পুলিশের তরফে দায়িত্বপ্রাপ্ত হাইকোর্টের অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার (১) মুকুল পালিত বলেন, “ভুল ইংরেজিতে লেখা ওই চিঠিতে বোমা বিস্ফোরণের হুমকি দেওয়া হয়েছিল। তবে তল্লাশিতে কিছু মেলেনি।”

পুলিশ জানায়, মহিলা শৌচাগারে কে চিঠি সাঁটাল, তা জানা যায়নি। চিঠিতে কোন মামলার কথা বলা হয়েছে, জানা যায়নি তা-ও। কারণ, চিঠির নীচে কারও নাম-ঠিকানা লেখা নেই। সবিস্তার তদন্ত চলছে।

অন্য বিষয়গুলি:

high court
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy