কৃষ্ণনগরে তাপস। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য
যত দোষ মিডিয়ার! এমনই দাবি তাপস পালের।
কৃষ্ণনগর শহরের রবীন্দ্র ভবনে রবিবার দুপুরে সভা ছিল শাসকদলের মহিলার সংগঠনের। মঞ্চে নেতা-নেত্রী-মন্ত্রীরা। মাইক্রোফোনে তাপস পাল। হঠাৎই বিরোধী দলের পরিবারের মহিলাদের ‘রেপ’ করিয়ে দেওয়া সংক্রান্ত নিজের বিতর্কিত মন্তব্যের সাফাই দিতে গিয়ে মিডিয়ার ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে দলকে আরও বিড়ম্বনায় ফেললেন কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদ!
কী বলেছিলেন তাপস?
গত বছর জুনে চৌমুহা-সহ নদিয়ার নাকাশিপাড়া থানার একাধিক গ্রামে গিয়ে কৃষ্ণনগরের সাংসদ কুকথার ফোয়ারা ছুটিয়েছিলেন। নিজেকে ‘চন্দননগরের মাল’ বলার পাশাপাশি ছিল এলাকার বিরোধী দলের সমর্থক (মূলত সিপিএম) পরিবারের উদ্দেশে মারাত্মক হুমকি— ‘দলের ছেলেদের ঘরে ঢুকিয়ে মহিলাদের রেপ’ করিয়ে দেওয়া কিংবা ‘নিজের রিভলভার থেকে গুলি করে’ মারা। এই হুমকির ভিডিও প্রকাশ্যে আসতেই সারা দেশে আলোড়ন পড়ে। সমালোচনার মুখে পড়েন অভিনেতা-সাংসদ। দলের নেতাকর্মীরাও এড়িয়ে চলতে শুরু করেন। সম্প্রতি কৃষ্ণনগর জেলা আদালতে জামিন পাওয়ার পর থেকে তাঁকে দলের মূলস্রোতে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা শুরু হয়েছিল। ইফতার পার্টি থেকে শুরু করে রাখিবন্ধন উৎসব— নানা অনুষ্ঠানে তাঁকে তুলে ধরছিলেন জেলার তৃণমূল নেতৃত্ব।
কিন্তু, ফের সুর কাটল এ দিন!
এ দিন আচমকাই তাপস বলে বসেন, ‘‘আজ এ কথাটা বলবই। মিডিয়া আমার অর্ধেক কথা দেখিয়ে আমাকে ও দলকে কলঙ্কিত করার চেষ্টা করেছে।’’ পরে বলেন, ‘‘তাতে আমাকে ও আমার দলকে কলঙ্কিত হতে হচ্ছে।’’ বক্তব্যে কোথাও সাংসদ সরাসরি চৌমুহা প্রসঙ্গের কথা তোলেননি। কিন্তু, তাঁর সাফাইয়ের লক্ষ্য যে চৌমুহা-কাণ্ডই, তা বুঝতে অসুবিধা হয়নি মঞ্চে হাজির নেতা-মন্ত্রী কিংবা দর্শকাসনে বসে থাকা হাজার খানেক মহিলা তৃণমূল কর্মীর। কেউ কেউ তো কিছুক্ষণের জন্যে মঞ্চের বাইরে বেরিয়ে যান। কিন্তু, তাপসের আগ বাড়িয়ে এ দিনের করা মন্তব্য যে অস্বস্তিতে ফেলেছে নেতৃত্বকে, তা স্পষ্ট হয়েছে মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের কথায়। তাপসের সামনেই চন্দ্রিমাদেবী বলেন, ‘‘এমন কোনও কাজ করবেন না যাতে দলের সমালোচনা হয়।’’ নেতা-কর্মীদের বড় অংশেরও মত, এ কথা বলে মন্ত্রী আসলে তাপসকেই বার্তা দিয়েছেন।
তাপসের এই মন্তব্যের পরে ‘ড্যামেজ কন্ট্রোল’-এর চেষ্টা করেও বিশেষ সুবিধা করতে পারেননি জেলার মন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাস। তিনি উপস্থিত মহিলা কর্মীদের উদ্দেশে করে বলে ওঠেন, ‘‘তাপস পাল আপনাদের সকলের সঙ্গেই থাকবে। তাই তো?’’ উত্তরে সামনের সারির কয়েক জন মহিলা ‘হ্যাঁ’ বললেও বাকিরা রা কাড়েননি। সভা শেষে মহিলা কর্মীদের কেউ কেউ বলে ফেললেন, ‘‘তা-ও তো চৌমুহায় সাংসদের বক্তৃতার সব ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ্যে আসেনি। যা এসেছে, তাতেই লজ্জার একশেষ হয়েছে। পুরো ভিডিও সামনে এলে না জানি আরও কী কী ঝুলি থেকে বের হত!’’ কী দরকার ছিল এ দিন পুরনো প্রসঙ্গ তোলার? পরে সাংসদকে সে প্রশ্ন করতে তিনি কিছুই মনে করতে পারেননি। টেলিফোনে বলেছেন, ‘‘আমি এমন বলেছি? কই না তো!’’
জেলা তৃণমূলের সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্তেরও দাবি, তাপস অস্বস্তিকর কিছুই বলেননি। যদিও একাধিক অনুগামী মেনেছেন, সাংসদ সাফাই দিতে গিয়ে ফের গণ্ডগোল পাকিয়েছেন। তাঁদের কথায়, ‘‘প্রতিদিন প্রচুর নার্ভের ওষুধ খান দাদা। তবে ভবিষ্যতে আরও সতর্ক থাকবেন বলে আমাদের জানিয়েছেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy