Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

জোট-বার্তা উস্কে সভায় গরহাজির দিল্লির নেতা

সোমবার সারদা মামলায় রাজ্য সরকারের হয়ে কপিল সিব্বলের সওয়ালেই তৃণমূলের সঙ্গে সমঝোতার বার্তা দিয়েছিল কংগ্রেস হাইকম্যান্ড। মঙ্গলবার সেই বার্তা আরও স্পষ্ট হল। এক দিকে, সারদা কাণ্ড নিয়ে শহিদ মিনারে প্রদেশ কংগ্রেসের ডাকা সভায় গরহাজির থাকলেন পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতা সি পি জোশী। অন্য দিকে, রাজ্য সরকারের হয়ে মামলা লড়তে নেমে সিব্বল কোনও ভুল করেননি বলেও হাইকম্যান্ডের তরফে স্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিলেন তিনি।

শহিদ মিনারের সভায় অধীর চৌধুরী। মঙ্গলবার। ছবি: সুদীপ আচার্য

শহিদ মিনারের সভায় অধীর চৌধুরী। মঙ্গলবার। ছবি: সুদীপ আচার্য

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা ও নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২১ জানুয়ারি ২০১৫ ০৩:২৮
Share: Save:

সোমবার সারদা মামলায় রাজ্য সরকারের হয়ে কপিল সিব্বলের সওয়ালেই তৃণমূলের সঙ্গে সমঝোতার বার্তা দিয়েছিল কংগ্রেস হাইকম্যান্ড। মঙ্গলবার সেই বার্তা আরও স্পষ্ট হল।

এক দিকে, সারদা কাণ্ড নিয়ে শহিদ মিনারে প্রদেশ কংগ্রেসের ডাকা সভায় গরহাজির থাকলেন পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতা সি পি জোশী। অন্য দিকে, রাজ্য সরকারের হয়ে মামলা লড়তে নেমে সিব্বল কোনও ভুল করেননি বলেও হাইকম্যান্ডের তরফে স্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিলেন তিনি। কংগ্রেস সূত্র জানাচ্ছে, হাইকম্যান্ডের কাছ থেকে সবুজ সঙ্কেত নিয়েই তৃণমূল সরকারের দিকে আইনি সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন সিব্বল। ফলে অধীর চৌধুরীরা যতই শহিদ মিনার ময়দানে দাঁড়িয়ে রাজ্যে কংগ্রেস নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে রাজনীতি করবে বলে ঘোষণা করুন, মমতা বন্দোপাধ্যায়ের সঙ্গে ফের গাঁটছড়া বাঁধার ইঙ্গিত যে সনিয়া গাঁধী দিয়ে রাখলেন, তা নিয়ে সংশয় নেই দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের।

রাজ্য সরকারের হয়ে সিব্বলের সওয়ালের পক্ষে কী যুক্তি দিচ্ছেন কংগ্রেস নেতারা?

সি পি জোশীদের বক্তব্য, সিব্বল কোনো রাজনৈতিক দলের হয়ে মামলা লড়ছেন না। লড়ছেন একটি রাজ্যের সরকারের হয়ে। তা ছাড়া, সরকারের আর্জি হল, সিবিআই-কে যেন রাজনৈতিক কারণে ব্যবহার করা না হয়। এই আর্জিতে সায় দিতে কংগ্রেসের কী আপত্তি থাকতে পারে? ইউপিএ আমলে সিবিআই-কে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলত বিজেপি। তারা সিবিআই-এর নাম দিয়েছিল কংগ্রেস ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন। এখন যদি বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ ওঠে, তা হলে তো কংগ্রেসের খুশি হওয়ারই কথা। ফলে বিজেপির বিরুদ্ধে ওই অভিযোগ প্রমাণে এক জন কংগ্রেস নেতা সক্রিয় হলে অসুবিধা কোথায়!

এই ‘আইনি’ যুক্তির আড়ালে আসল কারণটা যে রাজনৈতিক সেটা অবশ্য একান্তে কবুল করছেন কংগ্রেস নেতারা। তাঁরা বলছেন, কংগ্রেসের এখন যা দশা, তাতে জাতীয় রাজনীতিতে একার পক্ষে বিজেপির মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। সম্প্রতি শীতকালীন অধিবেশনে তৃণমূলের সঙ্গে জোট বেঁধে সংসদ কার্যত অচল করে রেখেছিল কংগ্রেস। ফেব্রুয়ারিতে গুরুত্বপূর্ণ বাজেট অধিবেশন। সেখানেও সরকারকে বিপাকে ফেলতে মমতার দিকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে রাখলেন সনিয়া। তাতে রাজ্য কংগ্রেস যতই বিপাকে পড়ুক না কেন।

বস্তুত, রাজ্য সরকারের হয়ে সিব্বলের সওয়াল যে কংগ্রেসের মমতা-বিরোধী ভোটারদের আরও বেশি করে বিজেপির দিকে ঠেলে দেবে, সে কথা সোমবারই কবুল করেছেন প্রদেশ কংগ্রেস নেতারা। অধীর চৌধুরী তো সিব্বলের প্রতি খড়্গহস্ত হয়ে তাঁকে রাজ্যের কোনও অনুষ্ঠানে আর না-ডাকার ঘোষণা করেছেন। প্রতিবাদে শহিদ মিনারের সভা বয়কট করেছেন দীপা দাশমুন্সি। রাজ্যের কংগ্রেস কর্মীদের মনোবল ধরে রাখতে এ দিনের সভা থেকে দিল্লির নেতৃত্বের প্রতি ফের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন অধীর। তিনি বলেন, “বাংলায় নিজের ক্ষমতায়, নিজের সংগঠনে আগামী দিনে কংগ্রেসকে শক্তিশালী করব। কারও ঘাড়ে উঠে দুনিয়া দেখতে চাই না, এটা দিল্লিকে পরিষ্কার জানিয়ে দিচ্ছি।”

ঘটনাচক্রে এ দিন প্রত্যাশা ছাপিয়ে ভিড় হয়েছিল কংগ্রেসের সমাবেশে। যা দেখে উজ্জীবিত অধীরের ঘোষণা, “বারবার আমাদের শুনতে হয়, কংগ্রেস মৃত, সাইনবোর্ড। কিন্তু কংগ্রেসের মৃত্যু হয় না। কংগ্রেস নিজের ক্ষমতায়, নিজের সংগঠনেই অস্তিত্বের পরিচয় দেবে।”

কিন্তু হাইকম্যান্ডকে হুমকি বা ঘুরে দাঁড়ানোর আহ্বানে আখেরে কতটা কাজ হবে তা নিয়ে সংশয়ে কংগ্রেস নেতারাও। তাঁদের আরও হতাশ করেছে সি পি জোশীর অনুপস্থিতি। জোশী নিজে বলেছেন, সভায় যাওয়ার ইচ্ছা তাঁর ছিল। কিন্তু সকালে ধৌলা কুঁয়ায় যান জট থাকার কারণে ফ্লাইট মিস করেছেন। সাদা পাঞ্জাবির উপরে অফ হোয়াইট শাল গায়ে দিয়ে কংগ্রেস সদর দফতরে বসে তিনি বলেন, “দেখুন না, কলকাতায় যাব বলে বাঙালিদের মতো পোশাক পরেছি। কিন্তু দশ মিনিটের জন্য প্লেনটা ধরতেপারলাম না।” যদিও সারদা কেলেঙ্কারিতে জনস্বার্থ মামলা করে সিবিআই তদন্ত আদায় করা কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নানের দাবি, তাঁদের কাছে আগাম খবর ছিল যে, অস্বস্তি এড়াতেই জোশী কলকাতায় আসবেন না। সিব্বলের সওয়ালের প্রতিবাদে এ দিনের সভায় মান্নানও আসেননি।

কলকাতায় গেলেও যে তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে যে তিনি কিছু বলতেন না, তা এ দিন কবুল করেছেন জোশী। রাহুল-ঘনিষ্ঠ এই নেতা বলেন, “কলকাতায় গেলে সংসদীয় গণতন্ত্র নিয়ে বক্তৃতা দিতাম। কেন্দ্রে মোদী সরকার কী ভাবে সংসদীয় গণতন্ত্রের অবমাননা করছে, তা তুলে ধরতাম।” আর তৃণমূল সরকার? “সে জন্য রাজ্য নেতারা রয়েছেন,” জবাব জোশীর।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE