শ্রমিকদের হাতে সোনালি চা বাগানের মালিক খুন ‘বিচ্ছিন্ন ঘটনা’ বলেই ব্যাখ্যা করছে চা শিল্পমহল। যদিও উত্তরবঙ্গের চা শিল্প যে খুব একটা ভাল অবস্থায় নেই, তা-ও মেনে নিচ্ছে মালিকপক্ষ ও শ্রমিক ইউনিয়নগুলি।
সোনালি চা বাগানের ঘটনা ‘বিচ্ছিন্ন’ কেন?
চা শিল্পমহলের মতে, ওই বাগানটি যে পদ্ধতিতে চলত, তা অন্য পাঁচটা বাগানের থেকে আলাদা। সাধারণত, চা বাগানের মালিক নিজে সরাসরি শ্রমিক ইউনিয়নগুলির সঙ্গে দাবি-দাওয়া নিয়ে আলোচনায় বসেন না। এ জন্য ইউনিয়নগুলি মালিক পক্ষের সংগঠনের সঙ্গে আলোচনা করে। এ ছাড়াও, দৈনন্দিন মজুরি বণ্টন-সংক্রান্ত বিষয়গুলি সাধারণত বাগান ম্যানেজার বা কর্তৃপক্ষই দেখভাল করেন। কিন্তু সোনালি চা বাগানের মালিক রাজেশ ঝুনঝুনওয়ালা নিজেই মজুরি নিয়ে বচসায় জড়িয়ে পড়েন বলে খবর। তা ছাড়া, এই বাগানটি তরাই ইন্ডিয়ান প্লান্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে বছর তিনেক আগে যুক্ত হলেও অ্যাসোসিয়েশনের দাবি, গত দু’বছর ধরে মালিক পক্ষ তাঁদের সঙ্গে আর কোনও যোগাযোগই রাখেনি। বাগান পরিচালনার প্রথা এ ক্ষেত্রে আদৌ মেনে চলা হয়েছে কিনা, তা নিয়ে সংশয় আছে অনেকের। সে জন্যই সোনালি চা বাগানের ঘটনাকে ব্যতিক্রম বলছেন তাঁরা।
তা হলে কি উত্তরবঙ্গের চা শিল্পে সমস্যা নেই?
আছে, এবং সেটা মেনে নিচ্ছে সব পক্ষই। মালিক পক্ষের বক্তব্য, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের একাধিক ইউনিয়ন বা একই রাজনৈতিক দলের একাধিক শ্রমিক ইউনিয়নের মধ্যে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে পরিস্থিতি অনেক সময় লাগামছাড়া হয়ে পড়ছে। মালিকপক্ষের দাবি, আর পাঁচটা শিল্পের মতোই একাধিক শ্রমিক ইউনিয়নের দাপটে অতিষ্ঠ বহু চা বাগান। মোর্চার প্রভাবে রমরমা বেড়েছে মোর্চা সমর্থিত ইউনিয়নের। তরাই ও ডুয়ার্সে তৃণমূলেরই তিনটি শ্রমিক সংগঠন। বিজেপিরও প্রভাব বাড়ছে। মালিকপক্ষের অভিযোগ, বেতন চুক্তি নিয়ে শ্রমিক ইউনিয়নগুলির দাবি এক এক রকম। গত মার্চ মাসে তিন বছরের পুরনো বেতন চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়েছে। বেতন চুক্তি না হওয়া পর্যন্ত অনিশ্চয়তার বাতাবরণ কাটবে না বলেই তাঁদের দাবি।
শ্রমিক ইউনিয়নগুলির পাল্টা দাবি, আগের বাগান মালিকদের সঙ্গে বর্তমান মালিকদের অনেক অমিল। যেমন তৃণমূল প্ল্যান্টেশন ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির কার্যকরী সভাপতি অলোক চক্রবর্তীর বক্তব্য, “আগে বাগান মালিক নিজেই একজন চা চাষি হিসেবে গণ্য হতেন। ইদানীং সহজ রোজগারের স্বপ্নে অনেক ব্যবসায়ী বাগানের মালিকানা কিনেছেন। কিন্তু অধিকাংশেরই চা চাষ সম্পর্কে কার্যত কোনও ধারণা নেই।” সিটু প্রভাবিত চা বাগান মজদুর ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জিয়াউল আলম আবার বলেন, “বাগানে কাজ করে সংসার চালানো দুঃসাধ্য হয়ে ওঠায় বহু শ্রমিক বাগান ছেড়ে চলে যাচ্ছেন।”
বেতন চুক্তি নিয়ে আগামী ৫ ডিসেম্বর ত্রিপাক্ষিক বৈঠকের ডাক দিয়েছে রাজ্য। আপাতত সে দিকেই তাকিয়ে সব পক্ষ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy