স্কুলে চাকরির দাবিতে বিক্ষোভ সফল প্রার্থীদের। শুক্রবার ধর্মতলায়। —নিজস্ব চিত্র।
স্কুল সার্ভিস কমিশন বা এসএসসি-র চূড়ান্ত মেধা-তালিকায় নাম থাকা সত্ত্বেও চাকরি পাননি রানাঘাটের রুমা দাস। বৃহস্পতিবার তাঁর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। চাকরি না-পেয়েই তিনি এই পথ বেছে নিয়েছেন বলে অভিযোগ। দায়ী করা হচ্ছে কমিশনকে। কিন্তু নিয়ম মেনে যে রুমার চাকরির সুপারিশ করা সম্ভব ছিল না, শুক্রবার সাংবাদিক বৈঠক ডেকে সেই ব্যাখ্যা দিলেন এসএসসি-কর্তৃপক্ষ। সেই সঙ্গে জানান, রুমার মৃত্যুতে তাঁরা মর্মাহত।
এসএসসি-র চেয়ারম্যান সুবীরেশ ভট্টাচার্য বলেন, “ইংরেজি (পাশ)-র শিক্ষিকা হিসেবে চাকরি পাওয়ার জন্য আবেদন করেছিলেন রুমা।
কিন্তু ওঁর বিএড প্রশিক্ষণ ছিল না। মেধা-তালিকায় ওঁর স্থান ছিল ২৮১ নম্বরে। কিন্তু কাউন্সেলিংয়ে ২৫১ পর্যন্ত চাকরির সুপারিশ করা হয়। তাই রুমা ডাক পাননি।” সেই সঙ্গেই সুবীরেশবাবু জানান, ওই তালিকার ৩১১তম স্থানে থাকা এক জনের চাকরির সুপারিশ করা হয়েছে। ওই প্রার্থী একটি স্কুলের পার্শ্বশিক্ষক। পার্শ্বশিক্ষকদের জন্য যে-১০% পদ সংরক্ষিত, সেখানেই ওই প্রার্থীর নাম সুপারিশ করা হয়েছে।
সুবীরেশবাবু বৃহস্পতিবার বলেছিলেন, রুমার মৃত্যু এক দিকে দুঃখজনক, অন্য দিকে অপরিণত মানসিকতার সিদ্ধান্ত। কারণ, চতুর্থ দফার কাউন্সেলিং চলছে। লোকসভা নির্বাচনের পরে তা ফের শুরু হবে। কাউন্সেলিং প্রক্রিয়ায় কী হয়, তা না-জেনেই রুমা এমন পদক্ষেপ করলেন কেন, সেই প্রশ্নও তোলেন কমিশন-কর্তৃপক্ষ। শুক্রবার এসএসসি-প্রধান জানান, চতুর্থ কাউন্সেলিংয়ে ইতিমধ্যে ডাকা হয়েছে ১০০৩ জনকে। তাঁদের মধ্যে ৮৫২ জনের নাম চাকরির জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। আরও ২৮২টি পদ শূন্য। ওই ৮৫২ জনের মধ্যে কেউ চাকরি নিতে না-চাইলে খালি পদের সংখ্যা বাড়বে। ২০১২-য় ৪৬ হাজার ৪০১টি শিক্ষক-পদের জন্য পরীক্ষা নেয় এসএসসি। সুবীরেশবাবু এ দিন জানান, তিনটি কাউন্সেলিংয়ে ২৬ হাজার ৯৬৯ জনের চাকরি হয়েছে।
ওই পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে চূড়ান্ত মেধা-তালিকায় নাম থাকা সত্ত্বেও হাজার তিনেক প্রার্থী চাকরির সুযোগ পাননি। তাঁদের অভিযোগ, মেধা-তালিকায় নীচের দিকের অনেক প্রার্থী চাকরি পেলেও তাঁরা বঞ্চিত। এসএসসি-র এ দিনের হিসেবে দেখা যাচ্ছে, ওই প্রার্থীদের মধ্যে ১১০০ জন চাকরির সুযোগ পাবেন। হাজার দুয়েক প্রার্থী বাকি থেকে যাবেন।
সুবীরেশবাবুই জানাচ্ছেন, চতুর্থ কাউন্সেলিংয়ের শেষেও ১৮ হাজার ৭৫৮টি পদ ফাঁকা থাকবে। সেই সব পদে কি মেধা-তালিকায় নাম থাকা হাজার দুয়েক প্রার্থীকে চাকরির সুযোগ দেওয়া যায় না?
কমিশন-প্রধান বলেন, “অঞ্চল, ক্যাটিগরি, বিষয় ইত্যাদির ভিত্তিতে চাকরির সুপারিশ করে এসএসসি। সেগুলি মেলালে দেখা যাচ্ছে, যে-সব পদ ফাঁকা থেকে যাবে, সেখানে ওই দু’হাজার প্রার্থীর নাম সুপারিশ করা সম্ভব নয়।” নিজেদের বক্তব্য পরিষ্কার করে বোঝাতে বিষয়, ক্যাটিগরি (সংরক্ষিত বা অসংরক্ষিত পদ), অঞ্চল অনুযায়ী মেধা-তালিকা ওয়েবসাইটে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রাজ্যপালের কাছেও পেশ করা হয়েছে বলে জানান চেয়ারম্যান।
মেধা-তালিকায় নাম থাকা সত্ত্বেও শিক্ষকতার সুযোগ না-পাওয়া প্রার্থীরা সকলের চাকরির দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন চালাচ্ছেন। টানা ২১ দিন অনশন করে, কখনও প্রতীকী ভিক্ষা, কখনও রক্ত দিয়ে চিঠি লিখে চাকরির দাবি জানিয়েছেন তাঁরা। রুমার মৃত্যুর প্রতিবাদে এ দিন তাঁরা কলেজ স্ট্রিট থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত মিছিলও করেন। ধর্মতলায় পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি হয় তাঁদের। রুমার মৃত্যুর প্রতিবাদে এ দিন রানাঘাটে মৌনী মিছিল করে সিপিএমের ছাত্র-যুব সংগঠন।
আন্দোলনকারীরা জানান, এসএসসি তথ্য দিয়ে যা-ই জানাক না কেন, সব সফল প্রার্থীর চাকরির দাবিতে তাঁদের আন্দোলন চলবে। এক আন্দোলনকারী বলেন, “সুবীরেশবাবু এক-এক বার এক-এক রকম তথ্য দেন। ওঁর বক্তব্যকে গুরুত্ব দিই না।”
শুধু এসএসসি-র নিয়ম মেনে কাউন্সেলিংয়ের ফলেই যে পদ শূন্য থাকা সত্ত্বেও হাজার দুয়েক প্রার্থী চাকরি পাবেন না, তা-ই নয়। ন্যাশনাল কাউন্সিল ফর টিচার এডুকেশন (এনসিটিই) প্রশিক্ষণহীন প্রার্থীদের নিয়োগের মেয়াদ না-বাড়ালে চাকরির সুযোগ না-পাওয়া প্রার্থীর সংখ্যা বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। কারণ, আন্দোলনকারীদের অনেকেরই প্রশিক্ষণ নেই।
এ বছর ৩১ মার্চের পরে বিএড প্রশিক্ষণহীন প্রার্থীদের শিক্ষক-পদে নিয়োগ করা যাবে না বলে জানিয়েছিল এনসিটিই। ভোট প্রক্রিয়া মিটলে ফের চতুর্থ কাউন্সেলিং শুরু হবে। কিন্তু তত দিনে এনসিটিই-র দেওয়া ছাড়ের সময়সীমা পেরিয়ে যাবে। প্রশিক্ষণহীনদের চাকরিতে নিয়োগের মেয়াদ বাড়ানোর জন্য আবেদন জানিয়ে এনসিটিই-কে চিঠি দিয়েছে রাজ্য সরকার। এনসিটিই এখনও তার জবাব দেয়নি। সরকারের আবেদনে সাড়া না-মিললে প্রশিক্ষণহীন প্রার্থীদের ভবিষ্যতে কাউন্সেলিংয়ে ডাকা যাবে না বলে এ দিন জানান চেয়ারম্যান।
বদলি ২৮০০০ পদে
এই প্রথম সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলে ২৮ হাজার পদে সাধারণ বদলির সুযোগ দেওয়া হবে শিক্ষকদের। কত পদে বদলি হবে, তা নিয়ে স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি) এক-এক সময়ে এক-এক রকম তালিকা প্রকাশ করায় বিভ্রান্ত হন প্রার্থীরা। শেষে ২৮ হাজার পদে এই বদলির সুযোগ মিলবে বলে এসএসসি-র চেয়ারম্যান সুবীরেশ ভট্টাচার্য শুক্রবার জানান।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy