Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪

গানের মতোই হিট বাবুল, নিশ্চিত বন্ধুরা

আসানসোলে নিয়ে টাটকা খবরে খুশি ধানকল গলি থার্ড লেন। ছেলেটা অনেক দিন পাড়াছাড়া। কিন্তু উত্তরপাড়া স্টেশন ঘেঁষা সেই পাড়ার গাছপালা-ইট পাটকেল এখনও অবরে-সবরে পুরনো দিনের কথা তোলে। বলে ছেলেটা কিন্তু দিলদরিয়া!

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়
উত্তরপাড়া শেষ আপডেট: ০৯ মার্চ ২০১৪ ০৩:২৬
Share: Save:

আসানসোলে নিয়ে টাটকা খবরে খুশি ধানকল গলি থার্ড লেন।

ছেলেটা অনেক দিন পাড়াছাড়া। কিন্তু উত্তরপাড়া স্টেশন ঘেঁষা সেই পাড়ার গাছপালা-ইট পাটকেল এখনও অবরে-সবরে পুরনো দিনের কথা তোলে। বলে ছেলেটা কিন্তু দিলদরিয়া!

রেললাইনের ধার ঘেঁষে সিএ মাঠ। গ্রীষ্মে ফুটবল, শীতে ক্রিকেট। তিন দশক আগে ছেলেরা কথায়-কথায় কোচিং ক্যাম্পে যেত না। বরং স্কুল থেকে ফিরেই হইহই করে নেমে পড়ত বল পেটাতে। এখনও সে মাঠের পাঁচিল ঘেঁষা শিস তোলা লম্বা ঘাসগুলো মাথা নাড়ে ছেলেটা একটু দুষ্টু ছিল ঠিকই, পাজি ছিল না। কত দিন দেখি না!

সুপ্রিয় বড়াল নামটা জানত ডন বস্কো স্কুলের রেজিস্টার। ফুর্তিতে গান-টান করে, বেশ সুরেই গায়, বন্ধুরা জানত। কিন্তু সে যে রাইচাঁদ বড়ালের বংশের ছেলে, তা বোধহয় কেউই জানত না। কলেজ-টলেজ পাশ দিয়ে দিব্যি বিদেশি ব্যাঙ্কে চাকরি করছিল। গান গেয়ে নামডাকও হয়েছিল একটু-আধটু। কিন্তু কল্যাণজি-আনন্দজির ডাকে সেই ছেলেই যখন বম্বে (মুম্বই নয়!) উড়ে গিয়ে ‘বাবুল সুপ্রিয়’ বনে গেল, পাড়ার লোকের চোখ ছানাবড়া। বন্ধুদের আড্ডায় হইহই।

গঙ্গাতীর ঘেঁষা হুগলির প্রাচীন জনপদ উত্তরপাড়া আদিতে ছিল কংগ্রেসের, মাঝে সিপিএমের হাত ফেরতা হয়ে এখন তৃণমূলের। আর বাবুল নাম লিখিয়েছে মোদীর টিমে। কিন্তু তাতে যে হোমফ্রন্টে বিশেষ হেলদোল হয়েছে, তা নয়। বরং সকলেই দিব্যি খুশি বড় কিছু

একটা তো করছে ছেলেটা। একের পর এক গান হিট করিয়ে এ বার ভোটের বাজারেও ঠিক ফিট হয়ে গিয়েছে। ব্যাঙ্কে কলম পেষার চেয়ে ঢের ভাল!

বাবুলদের আদি বাড়ি ব্যান্ডেলের বড়ালগলিতে। বর্ধিষ্ণু পরিবার। দুর্গাপুজো হত। তবে বাবুলের বেড়ে ওঠা উত্তরপাড়াতেই। বাবা সুনীল বড়ালও ছিলেন বিদেশি ব্যাঙ্কের কর্মী। মা ভাল গাইতেন। মূলত তাঁর কাছ থেকেই গানের অ-আ-ক-খ শেখা বাবুলের। তিনিই ছিলেন প্রেরণা। বড়ালবাড়ির পড়শি, চিকিৎসক সুদীপ্ত ভট্টাচার্য বলেন, “আদ্যোপান্ত মিশুকে ছেলে। ওর বাবা-মা দু’জনেই কিন্তু গান জানতেন। ওকে উৎসাহও দিতেন খুব। সাঙ্গীতিক পরিবেশেই ও মানুষ হয়েছে।”

কিন্তু রাতদিন হারমোনিয়াম নিয়ে প্যাঁ-পোঁ করার ছেলে কি বাবুল? তা হলে মাঠে, গঙ্গার ঘাটে দাপাবে কে? পাড়ায় ‘কল্পতরু সেবাচক্র’ নামে একটি ক্লাব ছিল। ঘটা করে কালীপুজো হত। বাবুল নিজেও খাটাখাটনি কম করেনি। দরকারে হাসপাতাল-শ্মশান করতেও দু’বার ভাবত না বলছেন পুরনো বন্ধুরা। বিখ্যাত হয়ে খুব কি পাল্টে গিয়েছে কি সেই ছেলেটা?

একই সঙ্গে বেড়ে ওঠা মৃদুল সেন এখন ব্যাঙ্কের অফিসার। তিনি ঘনঘন মাথা নাড়েন-- “আরে না না! মুম্বই গিয়ে প্রচুর নামডাক হওয়ার পরেও কয়েক বার এসেছিল এখানে। কিন্তু আলাদা করে কোনও ঠাটবাট দেখিনি। সিএ মাঠে ফুটবল-ক্রিকেট খেলার দিনগুলোয় যেমন ছিল, একেবারে তেমনই। আদ্যোপান্ত সোশ্যাল ছেলে। ও ঠিক সফল হবে।” সুদীপ্ত খেই ধরেন, “মুম্বই যাওয়ার পরে স্বাভাবিক ভাবেই এখানকার সঙ্গে যোগাযোগ কমে গিয়েছে। কিন্তু যে ক’বার এসেছে, দেখেছি ওর স্বভাব এতটুকু বদলায়নি। দেখলেই লোকে ভালবাসবে।”

মানুষের মন জিতে ফিরুক বাবুল এটুকুই চায় ধানকল গলি থার্ড লেন।

অন্য বিষয়গুলি:

babul supriyo goutam bandhopadhyay friends
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy