ক্ষমতায় এসে বিরোধীদের বলেছিলেন মুখে লিউকোপ্লাস্ট লাগাতে! সরকারের সাড়ে তিন বছরের মাথায় নিজের দলের জন্যই লিউকোপ্লাস্ট খুঁজতে হচ্ছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে!
সরাসরি লিউকোপ্লাস্টের কথা বলেননি, কিন্তু দলের বিধায়কদের ক্যামেরার সামনে মুখ বন্ধ রাখার ফরমান দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। রাগত স্বরে জানতেও চেয়েছেন, এত কথা কীসের? এত বলারই বা কী আছে? দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মুখ খোলার হাওয়া রোজই ছড়িয়ে পড়ছে শাসক দলের তৃণমূল স্তরে, এক জেলা থেকে অন্য জেলায়। বিপদের গন্ধ পেয়েই বিধায়কদের যে এ ভাবে সতর্ক করতে হচ্ছে, সহজেই অনুমেয়।
বিধানসভার শীতকালীন অধিবেশন শুরু হওয়ার দিনে তৃণমূলের পরিষদীয় দলের বৈঠক ছিল শুক্রবার। আগে থেকে বিশেষ ঘোষণা না থাকলেও সেই বৈঠকে হাজির হন মুখ্যমন্ত্রী। বৈঠকে ঢুকেই ঝড়ের বেগে বিধায়কদের মুখে কুলুপ আঁটার নির্দেশ জারি করে এবং আরও গুটিকতক পরামর্শ দিয়ে দ্রুত প্রস্থানও করেছেন। মুখ্যমন্ত্রীর মূর্তি দেখে এ দিনের মতো অন্তত গুটিয়ে গিয়েছেন বিধায়কেরাও। ক’দিন আগেই বর্ধমানে দলের নেতাদের একাংশের বিরুদ্ধে তোলাবাজির অভিযোগ করে তিরস্কৃত বিধায়ক তপন চট্টোপাধ্যায় যেমন মুখ্যমন্ত্রী বেরোনোর পর সংবাদমাধ্যমের সামনে নাম বলতেও অস্বীকার করেছেন! শাসক দলের বিধায়কদের গম্ভীর মুখ দেখে বিরোধীদের কেউ কেউ বিধানসভার লবিতে টিপ্পনী কাটেন, “অভিযোগের কিনারা নেই। উল্টে ধমক খেয়ে অভিযোগকারীরা নিজেদের নাম ভুলে যাচ্ছেন!”
দু’দিন আগেই পৈলানে দলীয় কর্মিসভায় মমতা বলেছিলেন, “দলীয় বিষয়ে অভিযোগ থাকলে নির্দিষ্ট অভিযোগ করুন। কাউকে ফাঁদে ফেলবেন বলে অভিযোগ করবেন না!” যদিও হুঁশিয়ারিতে কাজ হওয়ার লক্ষণ দেখা যায়নি। ক’দিনে শিশির অধিকারী, অখিল গিরি, তপনবাবুর মতো সাংসদ-বিধায়কেরা যেমন প্রকাশ্যে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে সতর্কিত হয়েছেন, তেমনই “যারাই লঙ্কায় যায়, তারাই রাবণ হয়” বলে মন্তব্য করে শোরগোল ফেলেছেন পুরুলিয়ার তৃণমূল নেতা অঙ্কুর বাউড়ি। এ সবের রেশ নিশ্চয়ই থেকে গিয়েছিল মুখ্যমন্ত্রীর মাথায়। নইলে এ দিন আর কাউকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে মুখে তালাচাবি লাগাতে বলবেন কেন!
তৃণমূলের এক বিধায়কের কথায়, “মুখ্যমন্ত্রী বৈঠকে ঢুকছেন দেখে আমরা সবাই অভ্যাসবশত নমস্কার জানাতে উঠে দাঁড়িয়েছিলাম। উনি ঢুকতে ঢুকতেই শুভেচ্ছা জানালেন। আর তার পরেই বলে দিলেন, এত কথা কীসের? ক্যামেরার সামনে মুখটা বন্ধ রাখুন না! কিছু বলার থাকলে দলকে বলবেন। সব কিছুর একটা সিস্টেম আছে!” মুখ্যমন্ত্রীর এই মেজাজ বজায় ছিল নবান্নেও। সেখানে মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে মুখ্যমন্ত্রীকে প্রশ্ন করা হয়, তাঁর দলের লোকজনই এখন সরকারের নেতা-মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করছেন। এ ব্যাপারে তাঁর বক্তব্য কী? মুখ্যমন্ত্রী প্রথমে বলেন, এখানে রাজনৈতিক বিষয়ে কথা হচ্ছে না। তাঁকে বলা হয়, অভিযোগ সরকারেরই নেতা-মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে। প্রশ্নকর্তা সাংবাদিক আনন্দবাজারের জেনে এ বার মুখ্যমন্ত্রী জবাব দেন, “আপনাদের তো ওই ছাড়া কোনও বিষয় নেই!”
বিধানসভায় বিধায়কদের বৈঠকে ছিলেন পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়, দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়ও। পার্থবাবু পরে বলেন, বিধানসভার রেওয়াজ মেনে প্রশ্ন করার সুযোগ বেশি পাবেন বিরোধীরা। স্বল্প সুযোগ কাজে লাগিয়ে ঠিক মতো প্রশ্ন করতে বলা হয়েছে শাসক দলের বিধায়কদের। দলের একাংশের ব্যাখ্যা, ভরা বিধানসভায় ‘বেয়াড়া প্রশ্ন’ করে তাঁরা যাতে দল বা সরকারের অস্বস্তির কারণ না হন, কৌশলে সেটাই বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে বিধায়কদের। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য মুখ্যমন্ত্রী থাকার সময়ে বাম বিধায়কেরা এই ধরনের বৈঠকে নানা ক্ষোভ, দাবি বা প্রশ্ন তোলার সুযোগ পেতেন। তৃণমূল বিধায়কেরা এ দিনও সে সুযোগ পাননি! বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, সবাইকে মনে রাখতে হবে তাঁরা ১, জনগণই ৯৯। মানুষের স্বার্থেই এলাকায় ও বিধানসভায় কাজ করতে হবে বিধায়কদের। অধিবেশনে আসতে হবে নিয়মিত। কিন্তু নির্দিষ্ট দিনে তাঁর গরবহাজিরা নিয়েই তো যত প্রশ্ন! বিধানসভা ছাড়ার সময়ে মুখ্যমন্ত্রী বলে গিয়েছেন, “এত কথা এই নিয়ে! এ বার থেকে আসব।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy