বীরভূমের সাগর ঘোষ হত্যা মামলায় মঙ্গলবার কলকাতা হাইকোর্টে শুনানির দিন ধার্য ছিল। কিন্তু ‘সিট’ বা বিশেষ তদন্তকারী দলের রিপোর্ট ছাড়াও ওই হত্যাকাণ্ড নিয়ে আরও একটি রিপোর্ট জমা পড়ায় দু’টিই পড়ে দেখার জন্য সময় নেন বিচারপতি। তাই এ দিন আর ওই মামলার শুনানি হয়নি। আজ, বুধবার ফের শুনানি হবে।
সাগর-হত্যার জোড়া রিপোর্ট নিয়ে কৌতূহলের সৃষ্টি হয়েছে। এ দিন বিচারপতি দীপঙ্কর দত্তের এজলাসে মামলটি উঠতেই রাজ্য পুলিশের ডিরেক্টর জেনারেল গোটুর মহারেড্ডি প্রভু রাজাশেখর রেড্ডি এই বিষয়ে তাঁর প্রথম তদন্ত রিপোর্ট সিল করা খামে জমা দেন। ডিআইজি (সিআইডি) দময়ন্তী সেন শারীরিক কারণে ওই তদন্তভার না-নেওয়ায় ডিজি-র নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের স্পেশ্যাল ইনভেস্টিগেশন টিম বা সিট তৈরি করে দিয়েছিলেন বিচারপতি। সেই সিটের প্রথম তদন্ত রিপোর্ট নিয়ে কৌতূহল তো আছেই। কৌতূহল বেড়েছে আবেদনকারীরা এ দিনই একটি পৃথক রিপোর্ট জমা দেওয়ায়।
নিহত সাগরবাবুর ছেলে হৃদয় ঘোষ এই হত্যাকাণ্ডের সিবিআই তদন্ত চেয়ে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। তাঁর আইনজীবী তাপস ঘোষ এ দিন বিচারপতি দত্তের এজলাসে একটি রিপোর্ট জমা দেন। বিচারপতি তাঁর কাছে জানতে চান, তাঁরা কি আলাদা ভাবে কোনও তদন্ত করেছেন? তাপসবাবু জানান, তাঁরা পৃথক ভাবে কোনও ‘তদন্ত’ করেননি। তবে এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে এবং নিজেদের দিক থেকে খোঁজখবর করে যা জানতে পেরেছেন, এই রিপোর্টে তা উল্লেখ করেছেন। তিনি মনে করেন, তাঁদের এই রিপোর্ট তদন্তকারী দলকে সাহায্য করতে পারে। বিচারপতি জানান, সিটের রিপোর্ট তো বটেই, বাদী পক্ষের রিপোর্টটিও পড়ার জন্য তাঁর কিছু সময় লাগবে। সেই জন্য এ দিন ওই মামলার শুনানি স্থগিত হয়ে যায়।
গত বছর ২১ জুলাই চতুর্থ দফার পঞ্চায়েত ভোটের মুখে বীরভূমে পাড়ুইয়ের বাঁধ-নবগ্রামে অবসরপ্রাপ্ত স্কুলকর্মী সাগরবাবু খুন হন। তাঁর ছেলে হৃদয় ঘোষ বিক্ষুব্ধ তৃণমূল প্রার্থী হিসেবে ওই ভোটে দাঁড়িয়েছিলেন। সাগরবাবুর উপরে আক্রমণ হয় ভোটের ঠিক আগের রাতেই। নিহতের বৌমা শিবানী ঘোষের অভিযোগ, আশঙ্কাজনক অবস্থায় শ্বশুরমশাইকে ফেলে রেখে জোর করে তাঁদের দিয়ে সাদা কাগজে সই করিয়ে নিয়েছিল পুলিশ। পরে তারা ওই সাদা কাগজে কয়েক জনের নাম লিখে তাদের গ্রেফতার করে। প্রকৃত অপরাধীদের আড়াল করার অভিযোগ ওঠে।
এফআইআরে বীরভূমের তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডল ও বিকাশ রায়চৌধুরীর নাম ছিল। তাতে তৃতীয় স্থানে যাঁর নাম ছিল, তিনি গ্রেফতার হলেও ওই দু’জন এখনও অধরা। মূল দুই অভিযুক্তকে গ্রেফতার না-করায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বিচারপতি আগেই কিছু মন্তব্য করেছিলেন। হাইকোর্টের আইনজীবীদের একাংশের মতে, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপেই ওই দু’জনকে গ্রেফতার করা যাচ্ছে না, আদালতের মন্তব্যে তা পরিষ্কার।
বিচারপতি দত্ত প্রথমে ওই খুনের তদন্তভার দিতে চেয়েছিলেন ডিআইজি (সিআইডি) দময়ন্তীদেবীকে। হাইকোর্টের নির্দেশে দময়ন্তীদেবীই মধ্যমগ্রামে গণধর্ষণ ও নির্যাতিতার মৃত্যু নিয়ে তদন্ত করছেন। কিন্তু তিনি পাড়ুই কাণ্ডের তদন্তভার নিতে রাজি হননি। অন্য তদন্তকারী অফিসারের খোঁজ পড়ে। দময়ন্তীদেবীর বিকল্প হিসেবে কলকাতা পুলিশের স্পেশ্যাল কমিশনার (২) সৌমেন মিত্র এবং আইজি (সিআইডি) নীরজ সিংহের নাম ওঠে। কিন্তু নামগুলি নিয়ে সরকার পক্ষ এবং আবেদনকারীরা একমত হতে পারেননি। বিচারপতি ১৪ ফেব্রুয়ারি ডিজি-কে মূল তদন্তকারী অফিসার হিসেবে নিযুক্ত করেন। জেলা পুলিশ এবং পরে সিআইডি যে-তদন্ত করেছিল, তাতে হাইকোর্ট অসন্তোষ প্রকাশ করেছিল। বিচারপতি সেই জন্যই ডিজি-র নেতৃত্বে সিট তৈরি করে দেন এবং তদন্ত যাতে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত ও নিখুঁত হয়, তা নিশ্চিত করতে বলেন। সাগর-হত্যা মামলায় ধৃত পাঁচ অভিযুক্তকে এ দিনই ফের জেল-হাজতে পাঠায় সিউড়ির সিজেএম আদালত। ১৮ মার্চ ধৃতদের আবার আদালতে হাজির করানো হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy