শিক্ষা বাজেটের দিন স্কুল সার্ভিস কমিশনের (এসএসসি) নিয়োগ নিয়ে বিধানসভার ভিতরে-বাইরে প্রশ্নের মুখে পড়তে হল রাজ্য সরকারকে। মেধা তালিকায় নাম থাকা সত্ত্বেও নিয়োগ না পেয়ে এক এসএসসি উত্তীর্ণ প্রার্থীর আত্মহত্যা নিয়ে বিরোধীদের প্রশ্নের মুখে মন্ত্রীর জবাবে বুধবার বিভ্রান্তি ছড়াল বিধানসভায়। আবার এসএসসি-র নিয়োগেই দুর্নীতির অভিযোগে মিছিল করায় গ্রেফতার করা হল এসএসসি-রই তৎকালীন সচিব অমিতেশ বিশ্বাসকে।
বিধানসভায় শিক্ষা দফতরের বাজেট-বিতর্কে অংশ নিয়ে এ দিন ফরওয়ার্ড ব্লকের তরুণ বিধায়ক আলি ইমরান রাম্জ (ভিক্টর) এসএসসি-র নিয়োগ ঘিরে অনিয়মের অভিযোগ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তাঁর বক্তব্য ছিল, ২০১১ সালে এসএসসি পাশ করে প্যানেলে নাম থাকা সত্ত্বেও যে ৩, ১৭৬ জন প্রার্থী নিয়োগ না পেয়ে আন্দোলন করছেন, তাঁদের মধ্যেই এক জন রুমা দাস গত এপ্রিলে আত্মহত্যা করেছেন। দক্ষিণ-পূর্ব জোন থেকে তিনি পরীক্ষা দিয়েছিলেন। বিধায়কের অভিযোগ, মেধা তালিকায় ২৮১ নম্বরে থেকেও রুমা নিয়োগ পাননি। অথচ ২৯৩, ৩০১ বা ৩০৬-এর মতো র্যাঙ্কে থাকা প্রার্থীরা চাকরি পেয়েছেন। যোগ্যতা থেকেও চাকরি না-পাওয়ায় যিনি আত্মহত্যা করেছেন, তাঁকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে কেন মামলা রুজু হবে না প্রশ্ন তোলেন ভিক্টর।
জবাবি ভাষণে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় প্রথমে জানান, রুমা দাস নামে ওই প্রার্থী চাকরি করছেন। ভিক্টর প্রতিবাদ করে বলেন, যিনি মারা গিয়েছেন, তিনি আবার চাকরি করবেন কী করে? সামলে নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী এর পরে জানান, ওঁকে নিয়োগপত্র দেওয়া হয়েছিল। তার পরেও তাঁর আত্মহত্যা দুর্ভাগ্যজনক। মন্ত্রীর বক্তব্যের সঙ্গে সহমত না হলেও বাম বিধায়কেরা তখন আর বিশেষ প্রতিবাদ করেননি। অধিবেশন শেষ হওয়ার পরে শিক্ষামন্ত্রী আবার ভিক্টরকে জানান, যে রুমা দাস চাকরি পেয়েছেন, তিনি তফসিলি জাতিভুক্ত। যিনি আত্মহত্যা করেছেন, তিনি অনগ্রসর সম্প্রদায়ভুক্ত (ওবিসি)। এই জন্যই ব্যাপারটা নিয়ে ভুল বোঝাবুঝি হচ্ছে। কিন্তু ভিক্টরের বক্তব্য, সাধারণ, তফসিলি জাতি ও উপজাতিভুক্ত সব মিলিয়েই এসএসসি-র মেধা তালিকা তৈরি হয়। সেখানে ২৮১ নম্বরে এক জনই থাকবেন। অন্য কোনও রুমা দাসের প্রশ্ন তো এখানে অপ্রাসঙ্গিক! ভিক্টরের অভিযোগ, “আসলে সত্য আড়াল করতে গিয়ে সরকার এক এক বার এক এক রকম বলছে!”
শিক্ষামন্ত্রী পার্থবাবু অবশ্য পরে ব্যাখ্যা দিয়েছেন, তিনি ঠিকমতো বুঝতেই পারেননি কী জানতে চাওয়া হচ্ছে তাঁর কাছে! পার্থবাবুর বক্তব্য, “আমি ভেবেছিলাম, রুমা দাস কেন চাকরি পেয়েছেন, এটাই প্রশ্ন উঠছে। তার জবাব দিয়েছি।” কিন্তু প্রশ্ন তো ছিল, যোগ্যতায় নীচের দিকে থাকা অন্য প্রার্থী চাকরি পেলেন, আর মেধা তালিকায় নাম থেকেও চাকরি না পেয়ে রুমা কেন আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে বাধ্য হলেন, তা-ই নিয়ে! পার্থবাবুর মতে, এই অভিযোগের তেমন সারবত্তা নেই। বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রের পাল্টা বক্তব্য, “কোনও প্রশ্নেরই সদুত্তর আমরা শিক্ষামন্ত্রীর জবাবে পাইনি!”
বিধানসভার ভিতরে যখন এমন বিভ্রান্তি, এসএসসি-র প্রাক্তন সচিব অমিতেশবাবু তখন টেট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শ’খানেক প্রার্থীকে নিয়ে বিক্ষোভ কর্মসূচি নিয়েছিলেন। তাঁর অভিযোগ, ন্যাশনাল কাউন্সিল ফর টিচার এডুকেশনের (এনসিটিই) নিয়মানুসারে এসএসসি-র পরীক্ষায় নিয়োগ হয়নি। পুরো নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি হয়েছে। পরীক্ষার্থীদের নিয়ে তাঁরা ময়ূখ ভবনের সামনে থেকে এসএসসি দফতরের দিকে মিছিল করা শুরু করলে ঘটনাস্থল থেকেই পুলিশ তাঁদের গ্রেফতার করে। পরে অবশ্য তাঁদের জামিনে ছেড়ে দেওয়া হয়।
অমিতেশবাবু এ দিন বলেন, “৮২ হাজার ৫১৭ জন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত উত্তীর্ণ প্রার্থী থাকা সত্ত্বেও ১৯ হাজার ২৬৯ জন প্রশিক্ষণহীনদের বেআইনি ভাবে প্যানেলভুক্ত করা হয়েছে। এসএসসি কর্তৃপক্ষকে তার জবাব দিতে হবে। জনস্বার্থ-বিরোধী কাজ ওঁরা করতে পারেন না!” এসএসসি পরীক্ষার অনিয়ম নিয়ে সংবাদমাধ্যমে মুখ
খোলা এবং তার পরে নকল চাবি দিয়ে জোর করে দফতরে ঢোকার ঘটনার জেরে অমিতেশবাবুর বিরুদ্ধে আগেই থানায় অভিযোগ দায়ের হয়েছিল। নবান্ন সূত্রের খবর, সাসপেন্ড করার করার পাশাপাশি তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্তের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy