Advertisement
০৮ নভেম্বর ২০২৪

অন্য রাজ্যে দল পাঠাতে পারি, চ্যালেঞ্জ মুখ্যমন্ত্রীর

রাজ্যে সন্ত্রাস-কবলিত এলাকায় কেন্দ্রীয় দল পাঠানো নিয়ে এ বার বিজেপি-র সঙ্গে সংঘাতের মাত্রা চড়াল তৃণমূল। কিছু দিন আগেই সন্দেশখালি ঘুরে গিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তথা দলের সর্বভারতীয় সভাপতি রাজনাথ সিংহকে রিপোর্ট দিয়েছিল বিজেপি-র প্রতিনিধিদল।

পাশে আছি। নিহত দলীয় সমর্থকের দুই মেয়ের সঙ্গে বিজেপির প্রতিনিধি দল। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী।

পাশে আছি। নিহত দলীয় সমর্থকের দুই মেয়ের সঙ্গে বিজেপির প্রতিনিধি দল। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী।

নিজস্ব সংবাদদাতা
ইলামবাজার ও কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ জুন ২০১৪ ০৩:২২
Share: Save:

রাজ্যে সন্ত্রাস-কবলিত এলাকায় কেন্দ্রীয় দল পাঠানো নিয়ে এ বার বিজেপি-র সঙ্গে সংঘাতের মাত্রা চড়াল তৃণমূল। কিছু দিন আগেই সন্দেশখালি ঘুরে গিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তথা দলের সর্বভারতীয় সভাপতি রাজনাথ সিংহকে রিপোর্ট দিয়েছিল বিজেপি-র প্রতিনিধিদল। তখন তৃণমূল নেতৃত্বের প্রতিক্রিয়া ছিল, রাজনৈতিক ভাবে যে কেউই তাদের কাজ করতে পারে। রবিবার বিজেপি-র আর একটি কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদল এসেছিল বীরভূমের ইলামবাজারে। কিন্তু এ রাজ্যে সন্ত্রাসের অভিযোগকে বিজেপি ক্রমশই তাঁদের বিরুদ্ধে হাতিয়ার করছে বুঝে এ বার কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়ে পাল্টা হুঁশিয়ারির পথে গিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

দলের সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি তথা রাজ্যসভার সাংসদ বলবীর পুঞ্জ, সাংসদ কীর্তি আজাদ, সংখ্যালঘু মোর্চার সর্বভারতীয় সভাপতি আব্দুল রশিদ আনসারিকে নিয়ে বিজেপি-র কেন্দ্রীয় দল রবিবার যখন কলকাতায় নেমে ইলামবাজারের পথে, তখনই কেন্দ্রের শাসক দলকে চ্যালেঞ্জ ছুড়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর বক্তব্য, “এখানে ওরা দল পাঠাচ্ছে। এখানে তো কিছু হয়ইনি! এই রকম চলতে থাকলে আমাদেরও ৩৪ জন লোকসভার, ১২ জন রাজ্যসভার সাংসদ আছেন। আমরাও দিল্লিতে দল পাঠাতে পারি। প্রয়োজনে অন্য রাজ্যেও ঘটনা ঘটলে পাঠিয়ে দিতে পারি।” মুখ্যমন্ত্রীর ইঙ্গিত ছিল বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলির দিকেই। শুধু তা-ই নয়, রায়দিঘিতে তৃণমূল কর্মীদের খুনের ঘটনা এবং পরের দিন সকালেই বিজেপি-র কেন্দ্রীয় দলের রাজ্যে আসার মধ্যেও যোগসূত্র খুঁজে পেয়েছেন তিনি। একই সঙ্গে তৃণমূলের টুইটার হ্যান্ডলে তাঁর মন্তব্য, “কেন্দ্র তার নিজের কাজ করবে। বাংলার সরকারের কাজে কেন্দ্রের হস্তক্ষেপ করা উচিত নয়।” আইনশৃঙ্খলা যে রাজ্য সরকারের এক্তিয়ারভুক্ত বিষয়, মুখ্যমন্ত্রী বোঝাতে চেয়েছেন সে কথাই।

এমন হুঁশিয়ারির প্রেক্ষিতে বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ অবশ্য পাল্টা বলেছেন, “এটা (রায়দিঘি-ইলামবাজার যোগ) মুখ্যমন্ত্রীর অলীক কল্পনা! উনি নিজের দলের ভিতরে তাকান, তা হলেই সব বুঝতে পারবেন। বিজেপি খুনোখুনির রাজনীতির অবসান চায়।” বিজেপি নেতৃত্বের আরও বক্তব্য, ইলামবাজারে দল পাঠানোর ঘোষণা হয়েছিল রায়দিঘির ঘটনার অনেক আগেই। তা ছাড়া, এখানে কেন্দ্রীয় দল আসছে আক্রান্ত কর্মী-সমর্থকদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য। বিজেপি-শাসিত রাজ্যে তৃণমূল কোথায়? কাদের জন্য দল পাঠাবেন তৃণমূল নেত্রী? রাজ্যে বিজেপি-র উত্থানে আতঙ্কিত হয়েই মুখ্যমন্ত্রী এমন হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বলেও গেরুয়া শিবিরের অভিমত।

কেন্দ্রীয় দলকে নিয়ে বিজেপি-র রাজ্য নেতা শমীক ভট্টাচার্য, তথাগত রায়, রীতেশ তিওয়ারিরা এ দিন ইলামবাজারের কানুর গ্রামে গিয়ে কিছু দিন আগে নিহত দলীয় সমর্থক রহিম শেখের পরিবারে কাছে বিশদে ঘটনা শোনেন। পরে বলবীর বলেন, “এই অন্যায় আমরা সহ্য করব না। প্রয়োজনে আমাদের রক্ত ঝরুক, কিন্তু বাংলাকে হিংসামুক্ত করব!” মুখ্যমন্ত্রী যতোই বিজেপি-র বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ আনলেও বলবীরদের কাছে কিন্তু তৃণমূলের বিরুদ্ধেই সরব হয়েছেন নিহতের স্ত্রী হাজারা বিবি, দুই মেয়ে আমিনা বিবি ও শামিমা খাতুন, ভাগ্নি জিন্নাত বিবি। বাবার মৃত্যুর পর থেকে তাঁর দুই ছেলে ঘরছাড়া বলে অভিযোগ জানান রহিমের স্ত্রী। অভিযোগ প্রত্যাহার করে নিতে তাঁদের উপর প্রতিনিয়ত তৃণমূল চাপ দিচ্ছে, দাবি করে তাঁরা বলেন, “তৃণমূল লোক পাঠাচ্ছে। লক্ষাধিক টাকার বিনিময়ে অভিযোগ প্রত্যাহার করে নিতে বলছে।” সাংসদ কীর্তি জানিয়েছেন, প্রয়োজনে তাঁরা প্রধানমন্ত্রীকেও অভিযোগ জানাবেন।

তৃণমূলের নেতা তথা রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ অবশ্য এমন অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়ের আজ, সোমবার কানুর গ্রামে যাওয়ার কথা বলেও তৃণমূল সূত্রের খবর। ঘটনাচক্রে, প্রতিনিধিদল আসার আগেই অভিযুক্ত এক তৃণমূল সমর্থককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বোলপুরের এসিজেএম সঙ্ঘমিত্রা পোদ্দার তাকে ১৪ দিন জেল হাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।

অন্য বিষয়গুলি:

challange of mamata bandyopadhay ilambazar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE