বিজেপির রাজ্য সহ সভাপতি সুভাষ সরকারের নেতৃত্বে দুর্গাপুরে মিছিল।
যে জমি আন্দোলনকে হাতিয়ার করে রাজ্যে ক্ষমতায় এসেছে তৃণমূল, অন্ডাল বিমাননগরী নিয়ে সেই অস্ত্রেই তাদের ঘায়েল করতে কোমর বেঁধেছে বিজেপি।
সিঙ্গুরের সঙ্গে অন্ডালের আন্দোলন গুলিয়ে ফেলা ঠিক নয়, বলেছিলেন রাজ্যের শ্রমমন্ত্রী। তার সপ্তাহ তিনেকের মধ্যেই অন্ডালের ‘অনিচ্ছুক’ জমিদাতাদের মিছিলে সিঙ্গুর থেকে লোক এনে শাসক শিবিরকে বার্তা দিল বিজেপি। বুধবার এই রকম শ’পাঁচেক জমিদাতা, বর্গাদার ও খেতমজুর মিছিল করে মহকুমাশাসক (দুর্গাপুর) কস্তুরী সেনগুপ্তকে নানা দাবিতে স্মারকলিপি দেন। নেতৃত্বে ছিলেন সুভাষ সরকার, কৃষ্ণা ভট্টাচার্য-সহ বিজেপি নেতানেত্রীরা। সেখানে সিঙ্গুরের ‘কৃষি জমি রক্ষা কমিটি’ ব্যানার নিয়ে হাঁটেন কয়েক জন। তাঁদের মধ্যে দু’জন নিজেদের সেখানকার ‘অনিচ্ছুক চাষি’ বলেও দাবি করেন। তবে সিঙ্গুর কৃষিজমি রক্ষা কমিটির আহ্বায়ক তথা কৃষি প্রতিমন্ত্রী বেচারাম মান্নার দাবি, অন্ডালের জমি রক্ষা কমিটির কেউ তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। তাই কমিটির কারও সেখানে যাওয়ার প্রশ্ন নেই।
সিঙ্গুরের মতো অন্ডালেও বিমাননগরীর জন্য জমি অধিগ্রহণ হয় বাম আমলে। ২ নম্বর জাতীয় সড়কের পাশে প্রায় ১০৯ একর জমির ছ’শোর বেশি মালিক চেক নেননি। ‘অন্ডাল ব্লক জমি রক্ষা কমিটি’র দাবি, ক্ষতিপূরণ পাননি হাজার তিনেক খেতমজুর ও বর্গাদার। ওই জমি মালিকদের অভিযোগ, ২০০৭ সালে জমি নিলেও এখনও বিমানবন্দর চালু হয়নি। অথচ, রিয়েল এস্টেট ব্যবসা শুরু হয়েছে। কমিটির সম্পাদক সুশীল ঘোষের দাবি, “জাতীয় সড়ক লাগোয়া জমির ক্ষতিপূরণ অন্য জায়গার থেকে বেশি হওয়া উচিত ছিল। তা হয়নি। সে জন্যও অনেকে চেক নেননি।”
ইতিমধ্যে অন্ডালের এই অনিচ্ছুক জমিদাতাদের হয়ে মাঠে নেমেছে বিজেপি। অক্টোবরের শেষে এই জমিদাতাদের প্রসঙ্গে রাজ্যের শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটক জানান, এক বার জমি অধিগ্রহণ করা হলে তা ফেরত দেওয়ার আইনি সংস্থান নেই। অথচ, সিঙ্গুরে ‘অনিচ্ছুক’ চাষিদের জমি ফেরাতে নতুন আইন করার সময়ে রাজ্যের আইনমন্ত্রী ছিলেন মলয়বাবুই। এ নিয়ে বিতর্ক শুরু হওয়ায় মলয়বাবু দাবি করেন, তাঁর বক্তব্যের অপব্যাখ্যা হয়েছে। সিঙ্গুর ও অন্ডালের আন্দোলন এক নয়।
সম্প্রতি অন্ডাল জমি রক্ষা কমিটি ও বিজেপি নেতারা বৈঠক করে নিজেদের দাবিদাওয়া নিয়ে প্রশাসনের দ্বারস্থ হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। সিঙ্গুরের কিছু অনিচ্ছুক চাষিকেও এই কর্মসূচিতে সামিল করার সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা। কমিটির সম্পাদক সুশীলবাবুর দাবি, তাঁদের ডাকে সাড়া দিয়ে সিঙ্গুরের কয়েক জন অনিচ্ছুক চাষি এ দিন মিছিলে যোগ দেন। তাঁদের নিয়ে আসেন সিঙ্গুরের বিজেপি নেতা সৌরেন পাত্র ও রাজকুমার পাঠক।
নিজেদের সিঙ্গুরের অনিচ্ছুক চাষি বলে
দাবি করে এই মিছিলে হেঁটেছিলেন এই দু’জনও।
মিছিলে দু’জন নিজেদের নাম ভোলানাথ দোলুই ও বরুণ ঘোষ বলে দাবি করে জানান, তাঁরা সিঙ্গুরের অনিচ্ছুক চাষি। বরুণবাবু নিজেকে বাজেমেলিয়া গ্রামের ও ভোলানাথবাবু বেড়াবেড়ির বাসিন্দা বলে দাবি করেন। তাঁদের বক্তব্য, “সিঙ্গুরে কারখানা হলে মানুষ কাজ পেতেন। এখন জমির যা অবস্থা, ফেরত পেলেও চাষ হবে না।” তাঁরা দাবি করেন, অন্ডালে জমি নিয়ে বিমানবন্দর গড়ার বদলে প্রোমোটারি হচ্ছে বলে শুনেছেন। তাই পাশে দাঁড়াতে এসেছেন। সিঙ্গুরের কৃষিজমি রক্ষা কমিটির আহ্বায়ক বেচারামবাবু অবশ্য বলেন, “এখানকার অনিচ্ছুকরা ওদের সঙ্গে গিয়েছেন, এটা বিজেপির দিবাস্বপ্ন।” বিজেপির রাজ্য সহ-সভাপতি সুভাষবাবুর পাল্টা দাবি, “সিঙ্গুরের যে চাষিরা এসেছিলেন, তাঁরা নিজেদের আসল নাম বলেননি। কারণ, তৃণমূল ওঁদের চাপে রাখছে।”
মিছিল শেষে জমি বলপূর্বক না নেওয়া, বর্গাদার ও খেতমজুরদের এককালীন ৬ লক্ষ করে ক্ষুদ্র সঞ্চয় প্রকল্প করে দেওয়া-সহ ছ’টি দাবিতে মহকুমাশাসককে স্মারকলিপি দেওয়া হয়। বিজেপি নেতা সুভাষবাবু বলেন, “অন্ডালের জমিমালিক, খেতমজুর ও বর্গাদারদের বঞ্চিত করা হয়েছে। প্রশাসনকে তা জানানো হল।” এ দিন আসানসোলে এক সভায় কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় অভিযোগ করেন, “রাজ্য সরকারের কোনও নির্দিষ্ট জমিনীতি নেই। তার ফলে সব পক্ষই ভুগছেন।”
শ্রমমন্ত্রী মলয়বাবু গোটা বিষয়টি নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তৃণমূলের অন্ডাল ব্লক-সভাপতি কাঞ্চন মিত্রের বক্তব্য, “রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে অন্ডালের প্রকল্প নিয়ে অকারণ বিভ্রান্তি তৈরি করছে বিজেপি।”
বুধবার বিকাশ মশানের তোলা ছবি।
ফের পিছোল সিঙ্গুর-শুনানি
টাটাদের আবেদনে সুপ্রিম কোর্টে সিঙ্গুর মামলার চূড়ান্ত শুনানি ফের পিছিয়ে গেল। বুধবার প্রধান বিচারপতি এইচ এল দাত্তূর বেঞ্চে টাটাদের তরফে আর্জি জানানো হয়, তাঁদের আইনজীবী দিল্লির বাইরে। তাই এই মামলার শুনানি যেন পিছিয়ে দেওয়া হয়। আদালত পরবর্তী শুনানির দিন ২৭ জানুয়ারি ধার্য করেছে। বারবার কেন শুনানি পিছিয়ে যাচ্ছে, সেই প্রশ্ন তুলে রাজ্য সরকারের তরফে এ দিন আপত্তি জানানো হয়েছিল। বিচারপতি নির্দেশ দেন, এই শেষবারের মতো শুনানির দিন স্থগিত রাখা হচ্ছে। সিঙ্গুরের জমি টাটাদের থেকে ফেরত নিয়ে কৃষকদের মধ্যে ফিরিয়ে দেওয়ার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য, তা আটকাতেই টাটা মোটর্স সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy