জখম বৃদ্ধকে নিয়ে ওলিদ। ছবি: ফেসবুক
দুর্ঘটনায় জখম বৃদ্ধের শুশ্রূষায় ছুটে যেতে এক মুহূর্তও ভাবেননি। ভাবেননি, পরীক্ষা কেন্দ্রে দেরিতে পৌঁছলে কী হবে। শেষমেশ দেরিই হয়ে গেল। সেই কারণে শেখ ওলিদ আলিকে বসতে দেওয়া হল না কলেজ শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষায়।
কাঁথির শ্রীরামপুরের বাসিন্দা ওলিদ প্রাণিবিদ্যায় স্নাতকোত্তর। অরাজনৈতিক ছাত্র সংগঠন স্টুডেন্টস্ ইসলামিক অর্গানাইজেশনের পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সভাপতি এই যুবক সাত বছর ধরে হাওড়ার উলুবেড়িয়ার আল আমিন মিশন কলেজে অতিথি শিক্ষক। অধ্যাপক হওয়ার স্বপ্ন নিয়েই রবিবার কাকভোরে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন ওয়েস্ট বেঙ্গল কলেজ সার্ভিস কমিশনের ‘সেট’ দিতে। পরীক্ষা কেন্দ্র ছিল পাঁশকুড়া বনমালী কলেজে।
ওলিদ জানাচ্ছেন, সকাল ৮টা ৪০ মিনিটে তিনি মেচেদায় ৪১ নম্বর জাতীয় সড়কের আন্ডারপাসে নামেন। তখনই পথচারী এক বৃদ্ধ মোটবাইকের ধাক্কায় রাস্তায় পড়ে যান। ওলিদ বলেন, ‘‘কেউ সাহায্যের জন্য আসেনি। ১০০ ডায়ালে ফোন করে পুলিশের সাড়া না মেলায় নিজেই বৃদ্ধকে নার্সিংহোমে নিয়ে যাই।’’ তার পরে ওই বৃদ্ধের থেকে মোবাইল নম্বর জোগাড় করে তাঁর পরিজনকে খবর দেন ওলিদ। তত ক্ষণে ৯টা বেজে গিয়েছে। পরীক্ষা শুরু সাড়ে ন’টায়। পাঁশকুড়ার ট্রেন ধরতে ছোটেন মেচেদা স্টেশনে। পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছন ১০টারও পরে। ওলিদ জানালেন, দেরি হওয়ায় তাঁকে পরীক্ষা কেন্দ্রে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। মোবাইল ক্যামেরায় তোলা বৃদ্ধের ছবি দেখিয়ে ওলিদ বোঝানোর চেষ্টা করেন, কেন তাঁর দেরি হয়েছে। কলেজের অধ্যক্ষ পর্যন্ত বিষয়টি পৌঁছলেও পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পাননি।
আরও পড়ুন: রাতের লোকালে যাত্রীর বুকে লেখা ফোন নম্বর, খোঁজ করতেই বেরিয়ে এল করুণ কাহিনি
প্রশ্ন হল, ভাইরাল হওয়া ছবিটি তুললেন কে? ওলিদের দাবি, ‘‘নার্সিংহোমে ঢোকার মুখে এক জন ছবি তোলেন। নার্সিংহোম থেকে বেরোনোর সময় বুঝতে পারি, পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছতে দেরি হয়ে যাবে। সেই জন্য ওই ভদ্রলোকের কাছ থেকে ছবিটি নিই।’’ পরে ওলিদের সংগঠনের সূত্রে ছবিটি ভাইরাল হয়।
কলেজ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় পাঁচ মিনিট দেরিতে এলেই পরীক্ষার্থীকে ঢুকতে দেওয়া যায় না। ওলিদের বিষয়টি তাঁরা বুঝেছিলেন। কিন্তু তাঁদের কিছু করার ছিল না।
পরীক্ষা দিতে না-পারায় ওলিদের আক্ষেপ নেই। আহত বৃদ্ধ শেখ নুরজামানকে দেখতে সোমবার তিনি কাঁথির মুকুন্দপুরেও গিয়েছিলেন। গিয়ে জেনেছেন, রবিবার নাতির ওষুধ কিনতে মেচেদায় গিয়েছিলেন নুরজামান। এখন তাঁর শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল।
ওলিদ বলছেন, ‘‘চাকরির পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ তো আবার আসবে। কিন্তু মানুষ হিসেবে জীবনের একটা বড় পরীক্ষায় তো উতরে গেলাম!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy