পাশে: অজয়ের সঙ্গে কথা বলছেন আধিকারিকরা। নিজস্ব িচত্র
মাধ্যমিকের ভূগোল পরীক্ষা দিয়ে বাবার সঙ্গে মোটরবাইকে বাড়ি ফিরছিল এক কিশোর। মাঝরাস্তায় পিছন দিক থেকে একটি ট্রাক ধাক্কা মারে মোটরবাইকে। রাস্তায় ছিটকে পড়ে দুই সওয়ারিই। বৃহস্পতিবার বিকেলে দুর্ঘটনাটি ঘটে পুরাতন মালদহের নারায়ণপুরে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কে। পুলিশ জানায়, স্থানীয় বাসিন্দারা জখম দু’জনকে মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। শুক্রবার ভোরে হাসপাতালে মারা যান ওই পরীক্ষার্থীর বাবা। ছাত্রের ডান হাত ভেঙেছে। তাকে হাসপাতাল থেকে গত রাতেই ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল।
এমন ঘটনায় মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছিল পুরাতন মালদহের ভাবুক রাম মার্ডি হাইস্কুলের পরীক্ষার্থী অজয় সোরেন। শনিবার ইতিহাস ও মাধ্যমিকের বাকি পরীক্ষা কী ভাবে দেবে তা নিয়ে চিন্তায় পড়ে সে।
খবর পেয়ে ওই ছাত্রের পাশে দাঁড়াল মধ্যশিক্ষা পর্ষদ ও মালদহ জেলা প্রশাসন। প্রশাসনিক সূত্রে খবর, শুক্রবার দুপুরে পর্ষদের মাধ্যমিক পরীক্ষার জেলা আহ্বায়ক বিপ্লব গুপ্ত, জেলা প্রশাসনের আধিকারিক অভিষেক চক্রবর্তী ও মাধ্যমিক পরীক্ষার সদর মহকুমার আহ্বায়ক ভিক্টর কুণ্ডু, উত্তীয় পাণ্ডে, প্রভাত কিস্কু ওই ছাত্রের বাড়িতে যান। অজয় তাঁদের সামনে কান্নায় ভেঙে পড়ে। ওই গ্রামেরই নবম শ্রেণির পড়ুয়া সঞ্জিত টুডুকে অজয়ের ‘রাইটার’ হওয়ার জন্য রাজি করানো হয়। এ দিনই সেই সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য পর্ষদে পাঠানো হয়। প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার ‘রাইটার’ নিয়েই ইতিহাস পরীক্ষায় বসবে অজয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ভাবুক গ্রাম পঞ্চায়েতের সৈয়দপুর গ্রামে বাড়ি অজয়ের। তার বাবা ললিন সোরেন। অজয়ের মাধ্যমিকের ‘সিট’ পড়েছে পুরাতন মালদহের সাহাপুর হাইস্কুলে। বাড়ি থেকে পরীক্ষাকেন্দ্র প্রায় দশ কিলোমিটার দূরে। বাবার মোটরবাইকেই পরীক্ষা দিতে যেত অজয়। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবারও বাবার মোটরবাইকে পরীক্ষাকেন্দ্রে যায় অজয়। বাবা পরীক্ষার সময় স্কুলের বাইরে অপেক্ষায় ছিলেন। পরীক্ষা শেষে বাবার সঙ্গে মোটরবাইকেই ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে বাড়ি ফিরছিল ওই কিশোর।
এ দিন অজয় বলে, ‘‘নারায়ণপুরে পিছন দিক থেকে ছোট একটি ট্রাক মোটরবাইকে ধাক্কা মারে। আমরা রাস্তার উপরে ছিটকে পড়ি। বাবার মাথায় চোট লাগে। আমার ডান হাতে। স্থানীয় কয়েক জন আমাদের হাসপাতালে নিয়ে যায়।’’ পুলিশ জানিয়েছে, মৃত ললিনের (৪৫) দেহ এ দিন ময়নাতদন্ত করা হয়।
প্রশাসনিক সূত্রে খবর, সাহাপুর ও রাম মার্ডি স্কুলের তরফে বিষয়টি জানানো হয় পর্ষদ ও প্রশাসনকে। এ দিন দুপুরেই পর্ষদের জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক ও জেলা প্রশাসনের কর্তারা সৈয়দপুরে অজয়ের বাড়িতে যান। মাধ্যমিক পরীক্ষার জেলা আহ্বায়ক বিপ্লব গুপ্ত বলেন, ‘‘মর্মান্তিক ঘটনা। আমরা অজয়ের পাশে আছি। সে ডান হাতে লিখত, কিন্তু সেই হাত ভেঙেছে। আমরা সৈয়দপুর গ্রামের নবম শ্রেণির এক ছাত্রকে রাইটার হিসেবে ঠিক করেছি। আশা করছি শনিবার রাইটার নিয়ে অজয় পরীক্ষা দিতে পারবে।’’
রাম মার্ডি হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক গোপালচন্দ্র দাস বলেন, ‘‘দুর্ঘটনার বিষয়টি প্রশাসন ও মাধ্যমিক পরীক্ষার আহ্বায়ককে জানাই। অজয় ভাল ছাত্র। সে রাইটার নিয়ে পরীক্ষা দিতে চায়। আশা করছি সেই ব্যবস্থা হবে।’’
সাহাপুর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক কিশোর বণিক বলেন, ‘‘পর্ষদ অজয়কে রাইটার নিয়ে পরীক্ষায় বসার অনুমতি দিলে তার জন্য নির্দিষ্ট ব্যবস্থা স্কুলে থাকবে। এই পরিস্থিতিতেও অজয়ের পরীক্ষা দেওয়ার জেদকে কুর্নিস জানাই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy