রাজ্যের পুলিশকে ‘ট্রিগার মত্ত’ বলে অভিযোগ করে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রমণ করেছেন শুভেন্দু অধিকারী। ফাইল চিত্র
পুলিশের উপর অত্যাচারের অভিযোগ ছিল। এ বার কালিয়াগঞ্জে অভিযোগ উঠল পুলিশি অত্যাচারের। বুধবার রাতে এক যুবকের মৃত্যু ঘিরে নতুন করে তেতে উঠল গত কয়েক দিন ধরে আলোচনার শীর্ষে থাকা উত্তর দিনাজপুরের কালিয়াগঞ্জ। অভিযোগ, রাতে পুলিশের গুলিতে মৃত্যু হয়েছে ওই যুবকের।
বুধবার রাতে উত্তর দিনাজপুরের কালিয়াগঞ্জ সংলগ্ন রাধিকাপুর পঞ্চায়েতের চাঁদগ্রামে ঘটেছে এই ঘটনা। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, রাত দুটো নাগাদ পুলিশের পোশাকে বেশ কয়েক জন একটি গাড়িতে চেপে হাজির হন স্থানীয় পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য বিষ্ণু বর্মণের বাড়িতে। তিনি সেই সময়ে বাড়িতে ছিলেন না। তাঁকে না পেয়ে প্রথমে এক বয়স্ক ব্যক্তিকে মারধর করতে করতে গাড়িতে তোলা হয়। তার পর গুলিও চালান পুলিশের পোশাকধারীরা। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, সেই গুলির আঘাতেই মৃত্যু হয় বিষ্ণুর ভাইপো মৃত্যুঞ্জয় বর্মণের।
এই ঘটনায় রাজ্যের পুলিশকে ‘ট্রিগার মত্ত’ বলে অভিযোগ করে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা পুলিশমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রমণ করেছেন শুভেন্দু অধিকারী। বিধানসভার বিরোধী দলনেতা তথা বিজেপি বিধায়কের দাবি, বিষ্ণু একজন বিজেপি কর্মী। পুলিশ তার বাড়িতে হামলা চালিয়েছে। গুলি করে খুন করেছে মৃত্যুঞ্জয় নামে ওই যুবককে।
বৃহস্পতিবার টুইটারে শুভেন্দু লিখেছেন, ‘‘প্রশাসনিক সন্ত্রাস সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছেছে। রাজ্যে যখন আগুন জ্বলছে, চূড়ান্ত বিশৃঙ্খলার পরিস্থিতি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তখন সম্রাট নিরোর মতো আনন্দে মেতে রয়েছেন। গত সপ্তাহেই সাংবাদিক বৈঠকে কালিয়াগঞ্জের মানুষের বিরুদ্ধে তিনি যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন। তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই এই ঘটনা। ওঁকে এই হত্যার দায় নিতে হবে।’’ যদিও বুধবার নবান্নে সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী কালিয়াগঞ্জের মানুষের বিরুদ্ধে কিছু বলেননি। বরং কালিয়াগঞ্জে ছাত্রীর মৃত্যু নিয়ে গন্ডগোল প্রসঙ্গে তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘‘সরকার নিহত বাচ্চা মেয়েটির পরিবারের পাশে আছে। তদন্তও হবে। কিন্তু যে ভাবে কালিয়াগঞ্জে পুলিশের উপর বিজেপি গুন্ডামি চালিয়েছে, এমনকি, মহিলা পুলিশদেরও মারধর করেছে, তারও আলাদা করে কড়া তদন্ত হবে। দোষীদের দলমত নির্বিশেষে গ্রেফতার করার নির্দেশ দিয়েছি পুলিশকে।’’
অন্য দিকে, শুভেন্দুর অভিযোগের পাল্টা তৃণমূল মুখপাত্র শান্তনু সেন নাম না করে বিজেপিকে কটাক্ষ করে বলেন, ‘‘ওঁরা যে মৃত্যু নিয়েও রাজনীতি করে তার প্রমাণ কালিয়াগঞ্জে ছাত্রীর মৃত্যু ঘিরে পুলিশের উপর হামলার ঘটনা। এ ক্ষেত্রেও তা-ই করছে।’’
যদিও বুধবার রাতে রাধিকাপুর পঞ্চায়েত এলাকার ওই ঘটনা নিয়ে পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। উত্তর দিনাজপুরের পুলিশ সুপার সানা আখতারের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করেছিল আনন্দবাজার অনলাইন। কিন্তু তিনি ফোন ধরেননি।
স্থানীয় সূত্রে খবর, বুধবার রাতে গুলিতে নিহত মৃত্যুঞ্জয়ের বয়স ৩৩। কর্মসূত্রে তিনি শিলিগুড়িতে থাকতেন। দিন কয়েক আগেই কালিয়াগঞ্জের বাড়িতে এসেছিলেন একটি বিয়ের অনুষ্ঠান উপলক্ষে। রাতে পুলিশ এসেছে শুনে বাড়ির বাইরে বেরিয়ে এসেছিলেন তিনি। তখনই গুলি লাগে তাঁর। বিষ্ণুর এক বয়স্ক আত্মীয় বলেন, ‘‘পুলিশ এসেছে শুনে ওরা (মৃত্যুঞ্জয়-সহ বাড়ির কয়েক জন) দরজার বাইরে বেরিয়েছিল। বারণ করেছিলাম। ওরা ফিরেও এসেছিল। কিন্তু পাশের বাড়ির একটি মেয়ে চিৎকার করে বলছিল ‘জামাইবাবুকে নিয়ে গেল।’ সেই চিৎকার শুনেই ওরা আবার যায়। তখনই গুলি চলে।’’
ঘটনাস্থলে পর পর দু’বার গুলি চলার অভিযোগ করেছেন চাঁদগ্রামের বাসিন্দারা। একটি গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। অন্যটি লাগে মৃত্যুঞ্জয়ের গায়ে। স্থানীয়দের দাবি, প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই লুটিয়ে পড়েন তিনি। পুলিশ চলে গেলে তাঁকে নিয়ে হাসপাতালে যান তাঁরা। চিকিৎসকেরা জানিয়ে দেন, আগেই মৃত্যু হয়েছে যুবকের। পরে বৃহস্পতিবার সকালে পুলিশের একটি গাড়ি এসে মৃত্যুঞ্জয়ের দেহ নিয়ে যায় বলে দাবি করেছেন তাঁর প্রতিবেশীরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy