Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪

টাকা কি অসম্মানকে ভুলিয়ে দিতে পারে? প্রশ্ন তুলে ধর্ষণের ‘ক্ষতিপূরণ’ ফেরালেন তরুণী

অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করা, ৩২ বছরের ওই তরুণীর পদক্ষেপ সাড়া ফেলেছে পশ্চিমবঙ্গের নারী আন্দোলনের কর্মীদের মধ্যে।

গ্রাফিক: তিয়াসা দাস।

গ্রাফিক: তিয়াসা দাস।

সোমা মুখোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ অক্টোবর ২০১৯ ০৪:০৩
Share: Save:

দেশের ক’জন ধর্ষিতা যথাযথ বিচার পেয়েছেন? বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তো দোষীরা বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়ায়। আর ধর্ষিতাকে থাকতে হয় মুখ লুকিয়ে। তা হলে আর ক্ষতিপূরণ কীসের? শুধু কিছু টাকা কি এই অবিচার, অসম্মানকে ভুলিয়ে দিতে পারে? এই প্রশ্ন তুলে হরিয়ানা সরকারের দেওয়া ধর্ষণের ‘ক্ষতিপূরণের’ টাকা নিতে অস্বীকার করলেন পশ্চিমবঙ্গের এক তরুণী। আদতে পূর্ব মেদিনীপুরের বাসিন্দা ওই তরুণী আপাতত দিল্লিতে হাফওয়ে হোম-এ রয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, যত দিন অপরাধীরা সাজা না পাচ্ছে, তত দিন তিনি ওই টাকা নেবেন না।

এই সিদ্ধান্তে পরিবারের কাউকে পাশে পাননি তিনি। নিজের গ্রাম থেকে অনেক দূরে, ভিন রাজ্যের একটি পুনর্বাসন কেন্দ্র থেকে চলছে তাঁর লড়াই। সেখান থেকে তিনি বলেছেন, ‘‘কিছু টাকা দিয়েই যে ধর্ষিতার জীবন বদলে দেওয়া যায় না, তা সবাইকে বুঝতে হবে। দোষীদের শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত আমার শান্তি নেই।’’

অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করা, ৩২ বছরের ওই তরুণীর পদক্ষেপ সাড়া ফেলেছে পশ্চিমবঙ্গের নারী আন্দোলনের কর্মীদের মধ্যে। সমস্যার গভীরে গিয়ে তিনি যে ভাবে তাঁর প্রতিবাদ সরকারি স্তরে পৌঁছে দিতে পেরেছেন, তার ফল সুদূরপ্রসারী হবে বলেই আশা অনেকের।

একটি প্লেসমেন্ট এজেন্সির মাধ্যমে দিল্লির একটি পরিবারে পরিচারিকার কাজ করতেন ওই তরুণী। সেখানে মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাঁকে ভর্তি করা হয়েছিল গুরুগ্রামের বেসরকারি মানসিক হাসপাতালে। অভিযোগ, সেখানেই ২০১৭ সালে পৃথক ভাবে পাঁচ জন কর্মী ধর্ষণ করে তাঁকে। এদের মধ্যে দু’জন পূর্ব মেদিনীপুরের বাসিন্দা। তদন্তে নেমে পুলিশ পাঁচ জনকেই গ্রেফতার করে। তরুণীকে ভর্তি করা হয় দিল্লির এক সরকারি মানসিক হাসপাতালে। সেখানে সুস্থ হয়ে ওঠেন তিনি। অন্য দিকে, ধর্ষণ প্রমাণিত হলেও গুরুগ্রামের আদালতে উপযুক্ত প্রমাণের অভাবে ছাড়া পেয়ে যায় পাঁচ অভিযুক্তই।

ধর্ষণের ঘটনা প্রমাণিত হওয়ায় হরিয়ানা সরকারের তরফে তাঁকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর পরেই বেঁকে বসেন তরুণী। জানিয়ে দেন, ক্ষতিপূরণ তিনি নেবেন না। হাল-ও ছাড়বেন না। তাই নিম্ন আদালতের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তিনি।

এ রাজ্যে মানসিক রোগীদের নিয়ে কাজ করা একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ওই তরুণীর সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছে। তাঁর বাড়িতেও যোগাযোগ করেছে তারা। কিন্তু তরুণীর বাবা জানিয়ে দিয়েছেন, মেয়েকে ফেরত নেওয়া কোনও ভাবেই সম্ভব নয়। কেন? তাঁর বক্তব্য, মেয়ের জন্য অনেক ঝামেলা সহ্য করতে হয়েছে।

অভিযুক্তদের মধ্যে দু’জন পূর্ব মেদিনীপুরের বাসিন্দা। তাদের লোকজন বাড়িতে চড়াও হয়ে ভাঙচুর চালিয়েছে। এই ঝামেলা ভবিষ্যতেও ঘটুক, তা তাঁরা চান না।

ওই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের তরফে অদিতি বসু বলেন, ‘‘এই টাকাটা দিয়ে কেউ ওঁকে দয়া করছে না। কিন্তু এটাও ঠিক যে, টাকাটা প্রত্যাখ্যান করছেন বলেই বিষয়টা এ ভাবে সামনে আসছে। এই মুহূর্তে আপনজন বলতে ওঁর কেউ নেই। যা-ই ঘটুক না কেন, আমরা পাশে থাকব।’’

দিল্লির ওই হাফওয়ে হোম-এর মনোবিদ সুদীপ্তা মজুমদার জানিয়েছেন, এক সময়ে ‘বাইপোলার ডিসঅর্ডার’-এর শিকার ওই তরুণী এখন সুস্থ। নিজের বিচারবুদ্ধি প্রয়োগ করেই তিনি যাবতীয় সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। দিল্লির সমাজকল্যাণ দফতরের কর্তারা জানিয়েছেন, ক্ষতিপূরণ প্রত্যাখ্যানের এমন নজির তাঁদের জানা নেই। তাঁরা চান, আইনি পথে মেয়েটিকে সাহায্য করতে। একই কথা হরিয়ানার সমাজকল্যাণ দফতরের আধিকারিকদেরও। আর সমাজকর্মী রত্নাবলী রায় বলেন, ‘‘পরিবার, সমাজ, আইন, সর্বত্র এক জন মনোরোগীকে ধাক্কা খেতে হয়। মহিলা মনোরোগীদের ক্ষেত্রে এই বিদ্বেষ আরও বেশি। তাই প্রশাসনের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে মেয়েটির প্রতিবাদ শিক্ষণীয় হয়ে থাকবে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Rape Crime
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy