—প্রতীকী ছবি।
বছর পাঁচেক আগে তরুণীর প্রেমে পড়ে উত্তরপ্রদেশের যুবক বলেছিলেন, ‘নিকাহ কবুল হ্যায়’। এর পরে সেই স্ত্রী মানসিক রোগে আক্রান্ত হন। মানসিক সমস্যার ঘোরে অন্য পুরুষের সঙ্গে নিজের অজান্তেই শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে স্বামীর। ভুল বুঝে স্ত্রী নিজেই স্বামীর থেকে ‘তালাক’ চেয়েছিলেন। কিন্তু স্ত্রী-অন্তপ্রাণ যুবক শুধু বলেছিলেন, ‘‘ভালবাসি, ভালবাসি’। আর স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য সর্বত্র ছুটেছিলেন। শেষ পর্যন্ত এসএসকেএমের ‘ইনস্টিটিউট অব সাইকায়াট্রি’-তে এসে কয়েক মাসের চিকিৎসার পরে আপাতত সুস্থ সেই তরুণী। হাসি ফুটেছে স্বামীর মুখেও।
ইনস্টিটিউট অব সাইকায়াট্রি-র অধিকর্তা প্রদীপ সাহা জানান, তরুণী আক্রান্ত হয়েছিলেন নিম্ফোম্যানিয়াক ডিজ়িজ উইথ সাইকোটিক ডাইমেনশনে। ওই রোগে শরীরে অস্বাভাবিক যৌন চাহিদা তৈরি হয়। তরুণীর ক্ষেত্রে দ্বৈত সত্তা কাজ করত। মনস্তত্ত্বের এই পর্যায়কে অন্য ভাবে ব্যাখ্যা করা যায় না। তিনি বলেন, ‘‘আমার দীর্ঘ অভিজ্ঞতায় এ ধরনের মাত্র দু’টি ঘটনা পেয়েছি।’’
ওই যুবক জানান, একটি পারিবারিক অনুষ্ঠানে তাঁদের পরিচয়। এর পরে বিয়ের সিদ্ধান্ত। তাঁর কথায়, ‘‘বিয়ের সাত মাস সব ঠিক ছিল। এক দিন হঠাৎ খুব হিংস্র হয়ে যায়। দেখে মনে হবে, কেউ যেন ভর করেছে।’’ তাঁর দাবি, কারণ অনুসন্ধানে নেমে জানতে পারেন, আট বছর বয়সে তাঁর স্ত্রী চোখের সামনে এক বালককে লরির চাকার পিষ্ট হতে দেখেছিলেন। তার পর থেকে যাবতীয় অদ্ভুত আচরণের সূত্রপাত। যুবকের কথায়, ‘‘ছায়া নামে এক বান্ধবীর গল্প স্ত্রী প্রায় বাড়ির লোকদের বলতেন। পরে খোঁজ নিয়ে জেনেছি, ছায়া নামে কেউ ছিল না। সবটাই কল্পনা। কয়েক মাস অন্তর হঠাৎ করে উগ্র হয়ে যেত। সেই সময়ে আত্মহত্যার চেষ্টাও করত।’’
স্ত্রীর অতীত জানার পরে তাঁকে মনোরোগ চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান যুবক। তবে লাভ হয়নি। স্ত্রীর অসুস্থতা প্রভাব ফেলেছিল দাম্পত্য জীবনে। যুবকটি জানান, তিনি দুবাইয়ে থাকতেন। স্ত্রী থাকতেন দেশে। দু’ জনের মধ্যে ব্যবধান কমলে যদি সমস্যার সমাধান হয়, সেই আশায় স্ত্রীকে নিয়ে তিনি দুবাইয়ে চলেও যান। কিন্তু সমস্যা মেটেনি। উল্টে যুবকটি জানতে পারেন তাঁর অনুপস্থিতিতে একাধিক পুরুষের সঙ্গে স্ত্রীর শারীরিক সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। যুবক বলেন, ‘‘স্ত্রীর বলেছিলেন কেউ যেন ওঁকে ডাকত। ঘরের মধ্যে অন্য কেউ রয়েছে বলে চিৎকার করত। আবার ঘোর কেটে গেলে নিজেই কেঁদে বলত ও আমার জীবন নষ্ট করে দিয়েছে। ওঁকে যেন আমি ছেড়ে দিই।’’
অধিকর্তা প্রদীপবাবুর ব্যাখ্যা, ‘‘অসুস্থ মানুষটি ঘোরের মধ্যে কী করছেন, কার সঙ্গে যাচ্ছেন, তা বোঝার মতো অবস্থায় থাকেন না। উনি যে বিপদে পড়তে পারেন সেই ভাবনাও আসত না। একে বলে অডিটরি হ্যালুসিনেশন। মেয়েটি মনে করত কেউ তাকে ডাকছে। অবচেতন মনে অবাঞ্ছিত দৃশ্য তার চোখের সামনে ভেসে উঠত।’’ যুবকটি জানান, স্ত্রীকে সুস্থ করতে দেশের বড় বড় হাসপাতালে ছুটেও কোনও উপকার পাননি। এসএসকেএমের ‘ইনস্টিটিউট অব সাইকায়াট্রি’তে গত মে মাস চিকিৎসার পরে তরুণী এখন সুস্থ।
স্বামী বলেন, ‘‘অন্য জনের সঙ্গে সম্পর্কের কথা জেনে প্রথমে তেরো দিন কথা বলিনি। যখন বুঝলাম ও অসুস্থ, তখন অভিমান দূরে রেখে ভালবেসেই বুকে জড়িয়ে ধরেছি!’’ অধিকর্তা প্রদীপবাবু যুবকের এ হেন আচরণের প্রশংসা করে বলেন, ‘‘রোগী যা করছেন, সেটা শুধুই অসুখের বশে তা বুঝতে হবে পরিজনদের। এ ক্ষেত্রে ওই যুবক যে ভাবে স্ত্রীর পাশে থেকেছেন তা সত্যিই দৃষ্টান্তের।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy