ছেঁড়া মাদুর, তেলচিটে পড়া বালিশ আর লোম ওঠা একটি কম্বল, সম্বল বলতে এটুকুই। ছোট মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে নদিয়ার নবদ্বীপে চৈতন্যদেবের লীলাক্ষেত্রে থাকতে শুরু করেছেন একা মা। বছর ত্রিশের বধূর দাবি, স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করেছেন। সেই অভিমানে হাওড়ার বাড়ি ছেড়ে দিয়েছেন তিনি। মেয়েকে নিয়ে চলে এসেছেন মায়াপুরের গঙ্গাতীরের জঙ্গলে।
বেশ কিছু দিন ধরে নবদ্বীপ প্রাচীন মায়াপুরের শচীমাতা ঘাট সংলগ্ন জঙ্গলে এক মহিলাকে থাকতে দেখছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। বধূর সঙ্গে রয়েছেন একটি মেয়ে। কৌতূহলী কেউ কেউ নামধাম জিজ্ঞাসা করায়, যুবতী জানিয়েছেন তাঁর নাম রিয়া দাস। বাড়ি হাওড়া জেলায়। কেন এখানে? রিয়া বেশি কিছু বলতে চাননি। ছোট মেয়ে পিউ বলতে থাকে মায়ের দুঃখের কাহিনি।
নাবালিকা মেয়ের কথায়, ‘‘মা ভালবেসে বিয়ে করেছিল বাবাকে। কিছু দিন আগে বাবা আবার একটা বিয়ে করেছে। আমাদের অবশ্য বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয়নি। অভিমানে মা নিজেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসেছে। আমিও চলে এসেছি মায়ের সঙ্গে।’’
রাত বাড়লেই গঙ্গালাগোয়া জঙ্গলে অসাধু লোকেদের আনাগোনা বাড়ে। সাপের ভয় তো আছেই। তবে সে সব নিয়ে ভ্রুক্ষেপ নেই দুখিনী রিয়ার। স্থানীয় কয়েক জন রিয়া এবং নাবালিকা মেয়েকে অন্যত্র থাকার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কিন্তু তা সবিনয় প্রত্যাখ্যান করেছেন মহিলা। তাঁর কথায়, ‘‘ঠাকুর যেখানে আমার ঘর কেড়েছে, তখন তার পায়েই ঠাঁই নেব। অন্য কোথাও যাব না।’’ তাঁর বিশ্বাস, তাঁকে সমস্ত বিপদ থেকে রক্ষা করবেন ঈশ্বর। ছোট মেয়ে বলে, ‘‘খুব একটা অসুবিধা হচ্ছে না। একটা ত্রিপল হলেই সমস্যা মিটে যেত।’’ আর খাওয়া-দাওয়া? মা-মেয়ে মায়াপুরের বিভিন্ন মন্দির ঘুরে ঘুরে ভিক্ষা করছেন। তাতে কোনও দিন খাবার জুটছে, কোনও দিন শুধু জল খেয়ে শুয়ে পড়েন দু’জন।
আরও পড়ুন:
অহিংসা আর প্রেমের বাণী প্রচার করে গিয়েছেন চৈতন্যদেব। সেই চৈতন্য লীলাভূমিতে স্বামীর বিরুদ্ধে বধূর অহিংস প্রতিবাদ নজর কাড়ে পুলিশেরও। নিরাপত্তার কথা ভেবে বুধবার দু’জনকে বুঝিয়ে শুনিয়ে থানায় নিয়ে গিয়েছে পুলিশ।