প্রতীকী ছবি।
মাস চারেক আগে তাঁর সাজা মকুবের সময়ে হাইকোর্টের বিচারপতিরা বলেছিলেন, অনিচ্ছাকৃত একটি খুনের দায়ে যথেষ্ট সাজা পেয়েছেন কবিতা পাইন। এ বার তাঁর মুক্তি পাওয়া উচিত। ১৫ বছর জেল খেটে কবিতা মুক্তি পান। কিন্তু তাঁর জীবনে যে শান্তি ফেরেনি, বৃহস্পতিবার সেটাই কার্যত স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে।
চুঁচুড়ার বাড়িতে সত্তরোর্ধ্ব বৃদ্ধা কবিতাদেবী তাঁর মেয়ের ‘অত্যাচারের’ শিকার হয়েছেন বলে এ দিন পাড়ায় শোরগোল পড়ে। বিকেলে কবিতাদেবীর বাড়িতে যায় পুলিশ। চন্দননগর পুলিশ কমিশনারেটের এক কর্তা বলেন, ‘‘কবিতাদেবী প্রবীণ নাগরিক। ওঁর মেয়ের ব্যবহার নিষ্ঠুর। আমরা মহিলাকে সতর্ক করেছি।’’ সকালে কলকাতায় এক পরিচিতের বাড়ি থেকে ফিরেই কবিতাদেবী দেখেন মেয়ে বাড়িতে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে। ঢোকার উপায় নেই। মেয়ে মায়ের ফোন ধরেননি। কিন্তু স্থানীয় লোক জনের ফোনে মেয়ে বলে দেন, তিনি ফিরতে পারবেন না। অগত্যা না-খেয়ে অপেক্ষা করতে থাকেন বৃদ্ধা। সন্ধ্যায় মেয়ে ফেরার পরে জটিলতা বাড়ে বলে অভিযোগ। তবে মা রাত পর্যন্ত খাতায়-কলমে অভিযোগ করেননি। কেন? এ বিষয়ে কবিতা বলেন, ‘‘আমার তো মেয়ে ছাড়া কেউ নেই। পুলিশে গেলে মেয়ে ভীষণ রেগে যাবে।’’
কবিতার মেয়ে ঈপ্সিতাকে ফোন করা হলে তিনি ঝাঁঝিয়ে বলেন, ‘‘আমাদের পারিবারিক ব্যাপার নিয়ে কিছু বলব না।’’ ১৯৯৬ সালের ৩ সেপ্টেম্বর চুঁচুড়ার গোয়ালটুলিতে কবিতার স্বামী তাপস পাইন মারা যান। তিনি মত্ত অবস্থায় প্রায়ই স্ত্রীকে মারধর করতেন বলে অভিযোগ। ওই রাতে ছেলে মৃগাঙ্কর সঙ্গে বাবার বচসা বাধে। ছেলের দুই বন্ধুও তখন বাড়িতে। পরে তাপসবাবু ঘুমিয়ে পড়েন। তাঁর হার্টের অসুখ ছিল। সকালে দেখা যায়, তিনি মারা গিয়েছেন। কবিতাদেবী ও তাঁর ছেলের নামে খুনের অভিযোগ উঠেছিল। পরে মৃগাঙ্ক দুর্ঘটনায় মারা যান। বাবার মৃত্যুর সময়ে ঈপ্সিতা নাবালিকা ছিলেন। তাঁর বয়ানের ভিত্তিতেই খুনের মামলা সাজায় পুলিশ। ২০০৪ সালে নিম্ন আদালতে কবিতার যাবজ্জীবন সাজা হয়। এত বছর বাদে মামলাটি হাইকোর্টে উঠলে ঘটনাটি অনিচ্ছাকৃত বলে বিচারপতিরা কবিতার সাজা মকুব করেছিলেন। তার পরেই নতুন ভোগান্তি।
এ দিন সকালে কাঁদতে কাঁদতে কবিতা বলছিলেন, ‘‘মেয়ে আমায় খেতে দেয় না। জেল থেকে ফিরে আরও রোগা হয়ে গিয়েছি।’’ বুধবার কাজের খোঁজে একদা বিনা দোষে দীর্ঘ কারাবাসের শিকার অধুনা সমাজকর্মী অপরাজিতা গঙ্গোপাধ্যায়ের বাড়িতে গিয়েছিলেন কবিতা। অপরাজিতা বলেন, ‘‘কবিতাদির জন্য কাজ খোঁজার চেষ্টা চলছিল। ওঁর মেয়ে রাতেও ফোনে মায়ের উপরে চোটপাট করেন। অশান্তির ভয়েই তিনি সাত-সকালে ফিরে যান।’’ কারাবাসের মজুরির টাকার অনেকটাই মেয়েকে দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন কবিতা। আরও কিছু টাকা জেল কর্তৃপক্ষের থেকে প্রাপ্য। হাইকোর্টের আইনজীবী জয়ন্তনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়ের আক্ষেপ, ‘‘কবিতার মতো অনেকেই জেল থেকে বেরিয়েও ভুগে থাকেন। কোনও স্থায়ী পুনর্বাসন প্রকল্পের খুব দরকার।’’ কারামন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাস বলেন, ‘‘বন্দিদের ভবিষ্যত ভেবে মজুরি বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু তাঁদের জীবন কেমন কাটছে তা নিয়মিত খতিয়ে দেখা কঠিন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy