নিয়ম মেনেই হর্ন বাজিয়েছিলেন চালক। তা সত্ত্বেও লাইনের উপর থেকে সরে যাননি মহিলা। তাতেই সন্দেহ হয়েছিল ট্রেনচালকের। গতি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকায় ব্রেক কষে ট্রেন দাঁড় করিয়ে দেন তিনি। তাঁর সন্দেহ যে অমূলক ছিল না তা প্রমাণিত হল কয়েক মুহূর্তেই। মহিলা আত্মহত্যার পরিকল্পনা নিয়েই যে সেখানে দাঁড়িয়েছিলেন তা জানতে পারলেন চালক। এবং বকাবকিও করলেন। চালকের বকাবকি শুনে ক্ষণিকের জন্য তিনি লাইন থেকে সরেও গিয়েছিলেন। কিন্তু ফের চালক ট্রেন চালু করে গতি বাড়াতে মহিলা সেই ট্রেনের সামনেই ঝাঁপ দিলেন।
শনিবার সকালে সন্ডালিয়া থেকে বারাসত স্টেশনের মাঝের ওই ঘটনায় তাজ্জব হয়ে যান ইছামতী লোকালের যাত্রীরা। চলন্ত ট্রেনের সামনে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যার ঘটনার সঙ্গে নিত্যযাত্রীরা অনেকেই পরিচিত। কিন্তু চালক ট্রেন দাঁড় করিয়ে আত্মঘাতী হতে চাওয়া এক মহিলাকে বাঁচার জন্য বোঝাচ্ছেন, এমন ঘটনায় এ দিন অবাক হয়ে যান ইছামতী লোকালের যাত্রীরা।
তাঁরা জানান, বারাসত-হাসনাবাদ শাখার বেলিয়াঘাটা স্টেশন ছেড়ে ভিড়ে ঠাসা যাত্রী নিয়ে তখন ইছামতী লোকাল ছুটছে সন্ডালিয়ার দিকে। রেল সূত্রে খবর, দু’টি স্টেশনের মধ্যে দূরত্ব আট কিলোমিটার। কিন্তু ঘটনাটি ঘটে সন্ডালিয়া স্টেশনের চার কিলোমিটার আগে। যাত্রীরা জানান, তাঁরা হঠাৎই শুনতে পান, ট্রেনটি বারবার হর্ন বাজাচ্ছে। আচমকাই ঝাঁকুনি দিয়ে ট্রেন থেমে যেতেই সামনের দিকে থাকা যাত্রীরা দেখেন, রেললাইনে দাঁড়িয়ে থাকা এক মাঝবয়সী মহিলাকে চালক বকাবকি করছেন। কয়েক মিনিট পরে অবশ্য তাঁরা ওই মহিলাকে রেললাইনের পাশে সরে যেতে দেখেন। পরে আবার ট্রেন চলতে শুরু করে।
পূর্ব রেল সূত্রে খবর, এর খানিক ক্ষণ পরেই যাত্রীদের চিৎকার শুনতে পান রেলের গার্ড এন এম পণ্ডিত। তিনি দেখতে পান, মাঝবয়সী এক মহিলা চলন্ত ট্রেনের চাকার নীচে ঝাঁপ দিয়ে আত্মঘাতী হয়েছেন। চালক যাঁকে বকাবকি করেছিলেন ওই মহিলাই তিনি, গার্ডকে তা জানান যাত্রীরা।
ট্রেনযাত্রী রামেল আহমেদ হাড়োয়া রোড স্টেশন থেকে উঠেছিলেন বারাসত যাবেন বলে। তিনি বলেন, ‘‘ট্রেন থামতেই মুখ বাড়িয়ে দেখি, চালক মহিলাকে বলছেন, ‘কেন মরতে যাচ্ছেন। পুলিশ জানলে আপনাকে শাস্তি দেবে। বাড়ি ফিরে যান।’ তার পরে ওই মহিলা রেললাইন থেকে সরেও দাঁড়ালেন। কিন্তু পরে ফের তিনি ঝাঁপ দেন।’’
পূর্ব রেলের বারাসত শাখার আধিকারিকেরা জানান, ওই চালক ঘটনার কথা জানিয়ে নোট দিয়েছেন। সন্ডালিয়ার স্টেশন ম্যানেজার কাজল কুন্ডু জানান, এক মহিলা ট্রেনে কাটা পড়েছেন বলে ইছামতী লোকালের গার্ড জানিয়েছেন। রাত পর্যন্ত ওই মহিলার পরিচয় জানা যায়নি। তাঁর দেহটি ময়না-তদন্তে পাঠানো হয়েছে।
কিন্তু ওই মহিলা আত্মঘাতী হওয়ার মানসিকতা নিয়েই দাঁড়িয়েছিলেন বুঝতে পেরেও ট্রেনচালক কেন তাঁকে নিরাপদ হেফাজতে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করলেন না?
পূর্ব রেলের এক পদস্থ আধিকারিক বলেন, ‘‘চালকের এর চেয়ে বেশি কিছু করার এক্তিয়ার ছিল না। তাঁর
নিজের কেবিনে মহিলাকে ওঠালে আইনি জটিলতা হত। কেন তিনি ট্রেন দাঁড় করিয়েছেন, তাঁকে সেই ব্যাখ্যাও দিতে হবে।’’
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের YouTube Channel - এ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy