সুপারের সামনে ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন প্রসূতির স্বামী। নিজস্ব চিত্র
সকাল সাড়ে ৮টা থেকে উঠেছিল প্রসব-যন্ত্রণা। অভিযোগ, ডাকলেও আসেননি ডাক্তার। সোমবার বেলা ১১টার পরে, বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে মৃত্যু হল সদ্যোজাত শিশুকন্যা এবং মায়ের। তদন্ত শুরু করেছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সুপার সুব্রত রায়ের দাবি, খবর পেয়েই ডাক্তার প্রসব করান। কিন্তু মা ও শিশুকে বাঁচানো যায়নি।
পাত্রসায়রের বলরামপুর গ্রামের বুলা বারিকের (২৬) স্বামী সুশান্ত জানান, তাঁদের পাঁচ বছরের একটি মেয়ে রয়েছে। দ্বিতীয় বার অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার পরে বিষ্ণুপুর হাসপাতালের ডাক্তার পার্থজিৎ ঘোষকে বাইরের চেম্বারে দেখাচ্ছিলেন বুলাদেবী। পার্থজিৎবাবুর পরামর্শ মতো রবিবার সকাল ১০টা নাগাদ বুলাকে ভর্তি করানো হয় প্রসূতি বিভাগে।
ননদ শ্যামলী দাসের দাবি, ভর্তির পর থেকে কোনও ডাক্তার বুলাকে দেখেননি। এ দিন সকাল ৮টা নাগাদ বুলার প্রসববেদনা ওঠে। শ্যামলীর অভিযোগ, ‘‘বারবার বললেও কোনও ডাক্তার আসেননি। বাচ্চাটার মাথা বেরিয়ে আসছিল। নার্স আর আয়ারা হাঁটু দিয়ে বৌদির পেটে চাপ দেয়।’’ প্রসূতি ওয়ার্ডের ‘লগবুক’ অনুযায়ী, বেলা ১১টা ৩ মিনিটে সদ্যোজাতের মৃত্যু হয়। তখন সেখানে উপস্থিত ডাক্তার সুশান্ত রায়। মৃত্যুর কারণ—গলায় নাড়ি পেঁচিয়ে যাওয়া। বেলা ১১টা ২০ মিনিটে মৃত্যু হয় মায়ের। সুপারের দাবি, বুলাদেবীর মৃত্যু হয়েছে গর্ভথলির জল রক্তে মিশে যাওয়ায়।
বুলাদেবীর স্বামী সুশান্ত বারিক প্রান্তিক চাষি। তাঁর ক্ষোভ, ‘‘বাচ্চা মারা গেলেও নাড়ি কাটা হয়নি। ও ভাবেই পড়েছিল মা-মেয়ে। ডাক্তার আগে এলে হয়তো দু’জনকেই বাঁচানো যেত!’’ ঘটনার পর বিক্ষোভ শুরু করেন বুলাদেবীর পরিজন। পৌঁছয় পুলিশ-প্রশাসন। সুপার বলেন, ‘‘খোঁজ নিয়ে জেনেছি, ডাক্তার সুশান্ত রায় ওয়ার্ডে ছিলেন। ‘কল’ পেয়েই পৌনে ১১টা নাগাদ প্রসব করান। তদন্তে সত্য জানা যাবে।’’ পার্থজিৎ ঘোষ ফোনে বলেন, ‘‘রবি আর সোমবার আমার ‘ডিউটি’ ছিল না। রেজিস্টার দেখলেই প্রমাণ হয়ে যাবে।’’ হাসপাতালে চিকিৎসক সুশান্তবাবুর দেখা মেলেনি। বাড়িতে গেলে এক মহিলা দাবি করেন, তিনি হাসপাতালে রয়েছেন। সুশান্তবাবু ফোন ধরেননি, জবাব আসেনি মেসেজেরও।
কিছু দিন আগে বিষ্ণুপুর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ডাক্তার না থাকায় বিনা চিকিৎসায় পড়েছিলেন বিডিও (বিষ্ণুপুর)। সে ঘটনায় এক ডাক্তারকে শো-কজ় করা হয়েছে। সে কথা মনে করিয়ে বিজেপির বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি স্বপন ঘোষের মন্তব্য, ‘‘প্রাতিষ্ঠানিক প্রসবে জোর দেওয়া হচ্ছে। অথচ, সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের এই হাল!’’
বিষ্ণুপুর-স্বাস্থ্য জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক রমেন্দ্রনাথ প্রামাণিক বলেন, ‘‘কলকাতায় রয়েছি। জানি না কী হয়েছে। তবে প্রাতিষ্ঠানিক প্রসবের ক্ষেত্রে এই নজিরে বেশ ক্ষতি হল।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy