বিরোধী দলনেতা হওয়ার পরে মুকুল রায়, দিলীপ ঘোষ, রবিশঙ্কর প্রসাদদের অভিনন্দন শুভেন্দু অধিকারীকে। নিজস্ব চিত্র।
বাংলার এবং সেই সঙ্গে সম্ভবত গোটা দেশের সংসদীয় গণতন্ত্রের ইতিহাসে তৈরি হল নতুন নজির। একই কেন্দ্র থেকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে এসে যুযুধান দুই প্রার্থী একই বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী এবং বিরোধী দলনেতা নির্বাচিত হলেন এই প্রথম!
রাজ্যের বিরোধী দলনেতা হিসেবে শুভেন্দু অধিকারীকেই সোমবার আনুষ্ঠানিক ভাবে বেছে নিল বিজেপি। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ ও কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে বিজেপির নবনির্বাচিত বিধায়কেরা দলনেতার পদে শুভেন্দুর নামেই সায় দিয়েছেন। বিজেপিতে যোগ দিয়ে নন্দীগ্রাম কেন্দ্রে প্রার্থী হয়ে শুভেন্দু হারিয়েছিলেন তৃণমূল প্রার্থী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। নির্বাচনের ফল নিয়ে আদালতে যাওয়ার কথা অবশ্য বলে রেখেছেন মমতা। তৃতীয় বার রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তিনি ইতিমধ্যেই শপথ নিয়েছেন। এ বার বিধানসভার স্পিকারের কাছে বিজেপির চিঠি যাওয়ার পরে আনুষ্ঠানিক ভাবে বিরোধী দলনেতার কার্যভার গ্রহণ করবেন নন্দীগ্রামের বিধায়ক শুভেন্দু। ব্রিগেডে ২০১৪ সালে লোকসভা ভোটের আগে সভা করতে এসে নরেন্দ্র মোদী যা বলেছিলেন, তারই প্রসঙ্গ টেনে বিজেপির এক নেতার মন্তব্য, ‘‘নন্দীগ্রামের দু’হাতেই লাড্ডু!’’
শুভেন্দুই বিরোধী দলনেতা হওয়ায় শেষ পর্যন্ত ‘দলবদলু’ মুখের উপরেই ভরসা রাখতে হল গেরুয়া শিবিরকে। তবে বিজেপি শিবিরের বক্তব্য, তাদের সামনে অন্য উপায়ও বিশেষ ছিল না। আর এক উল্লেখযোগ্য নেতা মুকুল রায় (তিনিও ‘দলবদলু’) পদের দৌড় থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন স্বেচ্ছায়। বিধায়কদের নিয়ে বৈঠকে এ দিন শুভেন্দুর নাম প্রথম প্রস্তাব করেন মুকুলবাবুই। পাঁচ বছর আগেও জিতে আসা পুরনো মুখ বলতে বিজেপির হাতে ছিল মনোজ টিগ্গার নাম। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী মমতার বিরুদ্ধে ‘ওজনদার’ নেতা বাছতে গেলে মনোজ বিবেচনায় আসেন না। আবার নন্দীগ্রামে ‘জায়ান্ট কিলার’ হওয়ার পরে শুভেন্দুকে দলে ‘মর্যাদা’ দিতেই হত। নব্য বিজেপির চাপে আদি নেতা-কর্মীদের অসম্মানের অভিযোগে ভোটে বিপর্যযের পরে মুখর দলের প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি তথাগত রায়ও শুভেন্দুর নির্বাচনকে ‘১০০% ঠিক সিদ্ধান্ত’ বলে বর্ণনা করেছেন। মনোজকে প্রধান বিরোধী দলের সচেতক করা হয়েছে।
বিরোধী দলনেতা নির্বাচিত হওয়ার পরে শুভেন্দু বলেছেন, বিধানসভার ভিতরে ও বাইরে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লড়াই করবেন সকলকে সঙ্গে নিয়ে। সরকারের ভুল-ত্রুটি চিহ্নিত করবেন আবার গঠনমূলক কাজে সহযোগিতাও করবেন। সেই সঙ্গেই মনে করিয়ে দিয়েছেন, বামফ্রন্টের ‘২৩৫-এর দম্ভ’ তিনি দেখেছেন। সে সময়ে তৃণমূলের ২৯ জন বিধায়কের মধ্যে তিনিও ছিলেন। এখন প্রথম কাজ, ভোটের পরে লাগাতার ‘সন্ত্রাসের’ মুখে পড়া বিজেপির কর্মী-সমর্থকদের পাশে দাঁড়ানো। শুভেন্দুর কথায়, ‘‘প্রথামাফিক একটা অনুষ্ঠান হচ্ছে। মালা পরানো হচ্ছে, পরছি। কিন্তু মন ভাল নেই। শুধু বিরোধী দলকে ভোট দেওয়ার অপরাধে প্রায় লক্ষ মানুষ ঘরছাড়া। দেশের মধ্যেই এক রাজ্যের মানুষ অন্য রাজ্যে গিয়ে শরণার্থী হচ্ছেন!’’
হেস্টিংসে বিজেপির কার্যালয়ে এ দিন বিজেপির বৈঠকে ছিলেন রবিশঙ্কর, কেন্দ্রীয় নেতা ভূপেন্দ্র যাদব, কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয়, রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ প্রমুখ। মুকুলবাবু পরিষদীয় দলনেতার পদে শুভেন্দুর নাম প্রস্তাব করেন প্রথমে। আরও ২২ জন বিধায়ক একই প্রস্তাব সমর্থন করেন। জানতে চাওয়া হয়, বাকিদের কাছে অন্য কারও নামে প্রস্তাব আছে কি না। কেউ অন্য কোনও নাম প্রস্তাব করেননি। তখন শুভেন্দুকেই দলনেতা ঘোষণা করা হয়।
একই কেন্দ্র থেকে মুখ্যমন্ত্রী ও বিরোধী দলনেতা নির্বাচিত হওয়ার ঐতিহাসিক নজিরের সূত্রেই পরে শুভেন্দুর মন্তব্য, ‘‘তৃণমূল নেত্রী ২০১১ সালে ভোটে দাঁড়াননি। মুখ্যমন্ত্রী হয়ে পরে উপনির্বাচনে জিতে এসেছিলেন। কিন্তু ভোটে পরাজিত হয়েও মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ স্বাধীনতার পরে বাংলায় কখনও হয়নি! এটাও কিন্তু ঐতিহাসিক!’’
বিজেপি সূত্রের ইঙ্গিত, বাংলায় সরকার গড়তে দল ব্যর্থ হওয়ার পরে কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক এবং মুকুল-ঘনিষ্ঠ নেতা কৈলাসকেও সম্ভবত অব্যাহতি দেওয়া হবে। সেই দায়িত্ব পেতে পারেন দলের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক, পঞ্জাবের তরুণ চুঘ। যিনি বাংলায় বিরোধী দলনেতা বাছাইয়ে কেন্দ্রের অন্যতম পর্যবেক্ষক ছিলেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy