ডায়মন্ড হারবারে এ ভাবেই জাতীয় সড়ক জলের তলায় তলিয়ে গিয়েছে। —নিজস্ব চিত্র।
নদীর বাঁধকে ঘিরে সৌন্দর্যায়নের কর্মকাণ্ড, অথচ রাজ্যের সেচ দফতরের অনুমোদন, ‘নো-অবজেকশন সার্টিফিকেট’ (এনওসি) বা ছাড়পত্র ছিল না! বিষয়টি জানানো হয়নি কলকাতা বন্দর কর্তৃপক্ষকেও। দু’দিন আগে জলের তোড়ে সে-সব তো ধুয়েমুছে গিয়েছেই, ধসে পড়েছে ১১৭ নম্বর জাতীয় সড়কের বিশেষ অংশও। মুখ বাঁচাতে পূর্ত দফতর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যান চলাচল স্বাভাবিক করার আশ্বাস দিয়েছে। কিন্তু কেন সেচ ও কলকাতা বন্দরকে না-জানিয়ে এমন গুরুত্বপূর্ণ কাজ শুরু করে দেওয়া হল, সেই প্রশ্নের কোনও জবাব দিতে পারেননি পূর্তকর্তারা।
নবান্ন সূত্রের খবর, নদীবাঁধ সাজাতে উদ্যোগী হয়েছিলেন ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর ইচ্ছাতেই দ্রুত কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ে পূর্ত দফতর। নদীবাঁধে হাত দিতে হলে সেচ দফতরের অনুমোদন প্রয়োজন। কিন্তু এই বিষয়ে সেচ দফতরের কোনও অনুমতি বা পরামর্শ নেওয়া হয়নি।
এমনটা হল কেন? ‘‘এ ব্যাপারে আমার কোনও মন্তব্য নেই। খোঁজ নিয়ে দেখব কী হয়েছে,’’ বলেন সেচমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী। তবে সেচকর্তারা জানাচ্ছেন, যে-কাজ সেচ দফতরের ইঞ্জিনিয়ারদের তত্ত্বাবধানে হওয়া উচিত, সেটা পূর্ত দফতর করলে যা হওয়ার, তা-ই হয়েছে।
পূর্ত দফতরের এক শীর্ষ কর্তার কথায়, ‘‘বন্দরের বিষয়টি বলতে পারব না। তবে সেচ দফতর আমাদের কাজের বিষয়ে জানত। যেখানে বাঁধ ভেঙেছে, সেখানে আগেও দু’বার ভাঙন হয়েছিল।’’ যদিও সেচকর্তাদের একাংশ জানান, তাঁদের অনুমোদন বা তত্ত্বাবধান ছাড়াই কাজ হচ্ছিল।
ডায়মন্ড হারবারের ঘটনায় বিরক্ত কলকাতা বন্দরও। হুগলি নদীর জোয়ারের জল যত দূর ওঠে, তার পর থেকে দু’পাশে ১৫০ ফুট পর্যন্ত এলাকা বন্দরের অধীন। সেখানে কোনও নির্মাণকাজ করতে হলে বন্দরের অনুমতি নেওয়া প্রয়োজন। বন্দরের মেরিন বিভাগের এক কর্তা বলেন, ‘‘আমাদের কিছুই জানানো হয়নি। প্রতিদিন তো পর্যবেক্ষণ সম্ভব হয় না। সরকারি সংস্থাই যদি নিয়ম না-মানে, তা হলে আর কী করার আছে! এ ভাবেই বাঁধ ও রাস্তা ভাঙবে।’’
শুধু সেচ বা বন্দর নয়, পূর্ত দফতরের অন্দরেও এই নিয়ে জল্পনা চলছে। সড়ক বিশেষজ্ঞদের একাংশের ব্যাখ্যা, নদীর ধার ঘেঁষা এলাকায় কোনও নির্মাণকাজ করতে গেলে আগে থেকে কিছু সাবধানি পদক্ষেপ করা উচিত। তার মধ্যে আছে:
১) ‘সয়েল মেকানিজম’— অর্থাৎ জোয়ারের জল নেমে যাওয়ার সময় নদীর পাড় লাগোয়া কিছু অংশের মাটি আলগা হয়ে যেতে পারে। বাড়তি কম্পন বা চাপ পড়লে সংশ্লিষ্ট অংশ ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। নির্মাণকাজ যে-হেতু পাড় লাগোয়া এলাকাতেই হচ্ছে, সেই জন্য জোয়ার-ভাটার প্রকৃতি মাথায় রেখে আগে থেকেই রাস্তাটি রক্ষা করার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া দরকার ছিল। ‘‘১২ মিটার ক্যান্টিলিভার করতে হলে সেই অনুযায়ী আগে থেকে প্রস্তুতি দরকার,’’ বলছেন এক বিশেষজ্ঞ।
২) সংশ্লিষ্ট মহল জানাচ্ছে, এই ধরনের কাজে ‘স্লিপ সার্কেল ক্যালকুলেশন’ জরুরি। অর্থাৎ যে-অংশে ঢাল রয়েছে, সেই অংশে এই প্রক্রিয়া চালানোটাই রীতি। তা করা হলে জাতীয় সড়ককে প্রভাবমুক্ত রেখে ওই নির্মাণকাজ করা যেত।
৩) ‘স্লিপ সার্কেল ক্যালকুলেশন’-এর পরে ‘শিট পাইলিং’-এর (সহজ কথায় ধাতব পাত দিয়ে আড়াল করা) মাধ্যমে নির্মাণস্থল থেকে জাতীয় সড়কের মধ্যে ব্যবধান রাখা সম্ভব। তা হলে জাতীয় সড়কের গায়ে কাজের কোনও রকম অভিঘাত লাগে না।
সংশ্লিষ্ট মহলের বক্তব্য, হুগলি নদীর জলের তোড়ে জাতীয় সড়ক পর্যন্ত যে-ভাবে ভেঙে গিয়েছে, তাতে এই সব নিয়মবিধি অনুসরণ করা হয়েছিল বলে মনে হচ্ছে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy