সুকান্ত মজুমদার (বাঁ দিকে), নরেন্দের মোদী (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।
লোকসভা নির্বাচনের আগে ‘মহা-সম্মেলন’! ২০১৯ সালের নির্বাচনের আগে সেই বছরের জানুয়ারি মাসে দিল্লির রামলীলা ময়দানে জাতীয় সম্মেলন হয়েছিল বিজেপির। এ বারও লোকসভা নির্বাচনের আগে ফের একই ভাবে দু’দিনের রাষ্ট্রীয় অধিবেশন করতে চলেছে বিজেপি। সেই সম্মেলনে কি যোগ দিতে পারবেন রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার? এখন এই প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে দলের অন্দরে।
বুধবার পুলিশের সঙ্গে খণ্ডযুদ্ধের মাঝে পড়ে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি সুকান্ত। বৃহস্পতিবারই তাঁকে আইসিইউ থেকে জেনারেল বেডে স্থানান্তরিত করানো হয়েছে। এই অবস্থায় তাঁর পক্ষে কি আদৌ যোগ দেওয়া সম্ভব হবে দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ডাকে আয়োজিত ওই দলীয় কর্মসূচিতে? দলীয় সূত্রের খবর, শনিবার ও রবিবার রাষ্ট্রীয় অধিবেশন রয়েছে দিল্লিতে। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে, অর্থাৎ সুকান্ত যদি এ ভাবে অসুস্থ না হয়ে পড়তেন, তা হলে শুক্রবারই দিল্লি চলে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এই পরিবর্তিত পরিস্থিতে তিনি যাবেন কি না, তা নির্ভর করছে চিকিৎসকেরা কী পরামর্শ দেন, তার উপর।
কলকাতার বেসরকারি হাসপাতালে নিউরোলজি বিভাগে সুকান্তের চিকিৎসা চলছে বর্তমানে। হাসপাতাল সূত্রে খবর, বুধবার রাতে এমআরআই করা হয়েছিল। তার আগে সিটি স্ক্যানও হয়েছিল তাঁর। চোটের কারণে মূলত কোমরে সমস্যা ধরা পড়েছে। আরও চিকিৎসার প্রয়োজন রয়েছে সুকান্তের। চিকিৎসকেরা সব পরীক্ষার রিপোর্ট দেখে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন। তাঁকে তরল খাবার খেতে দেওয়া হচ্ছে। স্নায়ুর চিকিৎসা চলবে তাঁর। বৃহস্পতিবার সকালেও তন্দ্রাচ্ছন্ন ছিলেন সুকান্ত। দলীয় সূত্র জানিয়েছে, শুক্রবার তাঁর স্বাস্থ্যের অবস্থা কেমন থাকে, তার উপর সবটাই নির্ভর করছে। শুক্রবার দলের কর্মসমিতির বৈঠক রয়েছে দিল্লিতে। সেই বৈঠকেও সুকান্তের হাজির থাকার কথা ছিল। কথা ছিল, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীও উপস্থিত থাকবেন। শুভেন্দু ওই বৈঠকে যাবেন কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয়। বিজেপি সূত্রের মত, সব কিছু ঠিক থাকলে সুকান্তও হয়তো যেতেন। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে কর্মসমিতির বৈঠকে যেতে না পারলেও মোদীর ‘ভোকাল টনিক’ শুনতে হয়তো যাবেন তিনি। প্রয়োজনে শুক্রবার গোটা দিন হাসপাতালে বিশ্রাম নিয়ে শনিবারও তিনি বিমানে দিল্লি চলে যেতে পারেন। তবে সবটাই তাঁর স্বাস্থ্যের উপর নির্ভর করছে বলে জানিয়েছে বিজেপির সূত্র।
আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে ৪০০-র বেশি আসন জেতার লক্ষ্য আগেই ঘোষণা করেছে বিজেপি। ২০১৯ সালে শেষ বার যখন বিজেপির রাষ্ট্রীয় অধিবেশন হয়েছিল তখন দলের সাংসদ ছিলেন ২৮২ জন। আর এখন সাংসদ সংখ্যা ৩০৩। দেশের ১২টি রাজ্যে বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী। আরও ছ’টি রাজ্যে বিজেপির সমর্থনে সরকার। ফলে পাঁচ বছর আগের অধিবেশনের থেকেও এ বারের আয়োজন অনেক বড়। ঠিকানাও বদলাচ্ছে। দিল্লির প্রগতি ময়দানে জি-২০ সম্মেলনের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার ভারত মণ্ডপম তৈরি করেছে। সেখানেই বসবে অধিবেশন। শুরুটা নিয়মমাফিক হবে সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডার বক্তৃতা দিয়ে। আর শেষ হবে ভোটের লড়াইয়ে নামার আগে মোদীর বক্তৃতা দিয়ে।
বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে ওই অধিবেশনে যোগ দেবেন দেশের আট হাজারের মতো বিজেপি নেতা। কাদের যেতে হবে সেই নির্দেশ এসে গিয়েছে বাংলাতেও। ১৭ ও ১৮ ফেব্রুয়ারির ওই অধিবেশন জাতীয় কর্মসমিতির সদস্যেরা যোগ দেবেন। বাংলার রয়েছেন সাত জন। এ ছাড়াও জাতীয় পরিষদের সদস্যেরাও থাকবেন। তাঁদের মধ্যে বাংলার ৪২ জন। ডাক পেয়েছেন রাজ্যের ১৬ লোকসভা সাংসদ ও একমাত্র রাজ্যসভা সাংসদ অনন্ত রায়। অনেকগুলি পদে থাকার দৌলতেই যাবেন সাংসদ ও রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। ডাক পেয়েছেন দিলীপ ঘোষ। আবার প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি হিসাবে অধিবেশনে যোগ দেওয়ার কথা তথাগত রায়, রাহুল সিংহের। বিরোধী দলনেতা হিসাবে শুভেন্দু জাতীয় কর্মসমিতির সদস্য। তবে তাঁকে নিয়ে ৬৮ জন বিধায়ককেও ডাকা হয়েছে রাষ্ট্রীয় অধিবেশনে। দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রাষ্ট্রীয় অধিবেশনে যোগ দিতে রাজ্যের বিজেপি বিধায়কদের অনেকেই ইতিমধ্যেই দিল্লির উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন।
প্রত্যেক রাজ্য থেকেই একই স্তরের প্রতিনিধিদের ডাকা হয়েছে। রাজ্য কমিটির পদাধিকারীরা ছাড়াও ডাক পেয়েছেন রাজ্যের কোর কমিটির সদস্যেরা। বাংলার যে কমিটিতে রয়েছেন মিঠুন চক্রবর্তী। আবার শৃঙ্খলারক্ষা, অর্থ, নির্বাচন কমিটির সদস্যদেরও ডাকা হয়েছে। এর পরে প্রতিটি লোকসভা ইনচার্জ, কনভেনার এবং বিস্তারকদের যেতে হবে। বাংলার ক্ষেত্রে যে সংখ্যাটা ১২৬ জন। এ ছাড়াও রাজ্যে লোকসভা আসন ধরে বিজেপির যে ১১টি ক্লাস্টার তার প্রধানরাও যাবেন। যেতে হবে প্রতিটি জো়ন ও বিভাগের প্রধানকেও। জাতীয় মুখপাত্র হিসাবে ডাক পেয়েছেন ভারতী ঘোষ। প্রাক্তন সাংসদ হিসাবে ডাক পেয়েছেন রূপা গঙ্গোপাধ্যায়, স্বপন দাশগুপ্ত। এ ছাড়াও বিজেপির সাতটি মোর্চার সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকদের যেতে হবে। ডাক পেয়েছেন রাজ্যের প্রতিটি শাখার প্রধান এবং প্রধান মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য। রাজ্যে বিজেপির সাংগঠনিক জেলার সংখ্যা ৪৩। প্রতিটির সভাপতি মিলিয়ে রাজ্য থেকে কমপক্ষে ২০০ জনের ডাক রয়েছে রাষ্ট্রীয় অধিবেশনে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy