Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪
Saumitra Khan

সুর চড়িয়েও মন্ত্রিত্ব মিলছে না! দলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেওয়া সৌমিত্রের ‘সুরবদল’ মোদীর শপথে

‘সুর বদলালেও’ মন্ত্রী হচ্ছেন না সৌমিত্র! অন্তত খবর তেমনই। বাংলা থেকে দু’জন মন্ত্রী হতে চলেছেন। তাঁরা হলেন— বালুরঘাটে জেতা সুকান্ত মজুমদার এবং বনগাঁ থেকে জেতা শান্তনু ঠাকুর।

সৌমিত্র খাঁ।

সৌমিত্র খাঁ। —ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
বিষ্ণুপুর শেষ আপডেট: ০৯ জুন ২০২৪ ১৮:২৫
Share: Save:

লোকসভা ভোটে বিজেপির ভরাডুবির পরেই দলীয় নেতৃত্বের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছিলেন সৌমিত্র খাঁ। প্রকাশ্যে প্রশংসা করেছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের। বিষ্ণুপুর থেকে এ বারও নিজে জেতায় (টানা তিন বার) কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন এনডিএ সরকারের মন্ত্রিসভায় জায়গাও চেয়েছিলেন। এই সব ঘটনাপ্রবাহের জেরেই রাজ্য-রাজনীতিতে গুঞ্জন তৈরি হয়েছিল, মোদী সরকারে মন্ত্রিত্ব না পেলে পুরনো দল তৃণমূলে ফিরে যেতে পারেন বিষ্ণুপুরের জয়ী বিজেপি প্রার্থী। কিন্তু রবিবার মোদীর শপথের আগে সৌমিত্র নিজেই সেই জল্পনা ওড়ালেন। ফেসবুক পোস্টে জানালেন, তিনি বিজেপিতেই থাকবেন। মোদীর নেতৃত্বে ‘বিকশিত ভারত’-এর স্বপ্নপূরণের লক্ষ্যে কাজ করে যাবেন!

রাজ্য জুড়ে সবুজ ঝড়ের মধ্যেই বিষ্ণুপুর থেকে জিতেছেন সৌমিত্র। ব্যবধান কমলেও শেষ পর্যন্ত ম্যাচ বার করে এনেছেন! জয়ের পর থেকেই বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে তাঁকে মন্ত্রিত্বের দাবি করতে দেখা গিয়েছে। বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘আমি তিন বারের সাংসদ। মন্ত্রী হওয়ার দাবি রাখছি।’’ সৌমিত্রের মন্তব্য নিয়ে ঘরে-বাইরে বিতর্ক হয়। ভোটে ভরাডুবির পর দলীয় নেতার অমন মন্তব্যে অস্বস্তিতেও পড়তে হয়েছে পদ্মশিবিরকে। যদিও মোদীর শপথের আগের দিন কার্যত সুরবদল করলেন সৌমিত্র। শনিবার রাতের ফেসবুক পোস্টে তিনি দাবি করেন, বিজেপিতে যোগদানের পর কিছু মানুষ তাঁর বদনাম করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। এ বারও মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা হয়েছে। তাঁদের উদ্দেশে সৌমিত্রের বার্তা, ‘‘যাঁরা পর্দার আড়ালে থেকে এই খেলাটি খেলছেন, তাঁদের জন্য আমি বলতে চাই যে, সৌমিত্র খাঁ কখনওই বিক্রি হবে না এবং রক্তের শেষ বিন্দু পর্যন্ত বাংলার মানুষের জন্য লড়াই করে যাবে।’’ সেই সঙ্গে তিনি লিখেছেন, ‘‘আমি বিজেপির সঙ্গে রয়েছি এবং শ্রী নরেন্দ্র মোদীজির নেতৃত্বে মানুষের সেবা করতে থাকব। যাতে আমরা বিকশিত ভারতের স্বপ্ন পূরণ করতে পারি।’’

‘সুর বদলালেও’ মন্ত্রী হচ্ছেন না সৌমিত্র! অন্তত খবর তেমনই। বাংলা থেকে দু’জন মন্ত্রী হতে চলেছেন। বিজেপি সূত্রেই খবর, তাঁরা হলেন— বালুরঘাটে জেতা দলের রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার এবং বনগাঁ থেকে জেতা শান্তনু ঠাকুর। যদিও সৌমিত্রের ঘনিষ্ঠ মহলের দাবি, এখানে সুর বদলানোর কিছু নেই! সৌমিত্র দল নিয়ে খারাপ কিছু বলেননি। নেতৃত্বের একটি অংশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন মাত্র। তা বাদ দিলে সৌমিত্র মোদীরই সৈনিক। দল যাতে ভাল ফল করে, সৌমিত্র সেটাই চেয়ে এসেছেন। দলবদলের জল্পনার কোনও অর্থ নেই!

২০১৪ সালে তৃণমূলের টিকিটে প্রথম বার সাংসদ হয়েছিলেন কংগ্রেসের প্রাক্তন বিধায়ক সৌমিত্র। দ্বিতীয় বার দলবদল করেও ২০১৯ সালে সাংসদ হন বিষ্ণুপুর থেকে। এ বার তৃণমূলের সুজাতা মণ্ডলকে হারিয়েছেন সৌমিত্র। সুজাতা সৌমিত্রের প্রাক্তন স্ত্রী। গত বার সৌমিত্রের ৭৮ হাজারের ব্যবধান কমে এ বার সাড়ে পাঁচ হাজারে ঠেকেছে। ভোটের সৌমিত্র দাবি করেছিলেন, এই জয় বিজেপি নয়, বরং আরএসএসের ‘সৌজন্যে’ এসেছে। তাঁর দাবি ছিল, রাজ্য নেতৃত্বের ‘গাফিলতি’র জন্যই বাংলায় দলের বিপর্যয় হয়েছে। রাজ্য বিজেপিতে এমন কোনও নেতা নেই, যিনি ভোটে জিতে এসেছেন। সাংগঠনিক অভিজ্ঞতা রয়েছে, এমনও কেউ নেই। সেই সঙ্গে বিজেপির হারের কারণ বিশ্লেষণ করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘‘লক্ষ্মীর ভান্ডার এবং সংখ্যালঘু ভোট তৃণমূলের জন্য কাজ করেছে। পাশাপাশি বিজেপিও রাজ্যে কোনও মহিলা মুখ তৈরি করতে পারেনি।’’ সেই সঙ্গে সৌমিত্রের অভিযোগ ছিল, ‘‘রাজ্য বিজেপির উপরতলার কয়েক জন নেতা তৃণমূলের সঙ্গে একটা বোঝাপড়া করে থাকতে পারেন। সেটা না হলে আরও কয়েকটি আসন জিততে পারত বিজেপি।’’ দিলীপ ঘোষের মতো নেতার আসন বদলে দেওয়াটাও ঠিক হয়নি বলেও তাঁর অভিমত। যদিও দিল্লির নেতাদের সাধুবাদ জানিয়েছিলেনন তিনি।

সৌমিত্রের মুখে দলীয় নেতৃত্বকে আক্রমণ নতুন কিছু নয়। কখনও কখনও নাম করেও রাজ্য নেতাদের সমালোচনা করেছেন তিনি। তবে বুধবার সামগ্রিক ভাবে রাজ্য নেতৃত্বের নিন্দা করলেও আলাদা করে কোনও নেতার নামোল্লেখ করেননি সৌমিত্র। তবে তাঁর বক্তব্যে অনেকেই ‘কিছু ইঙ্গিত’ পেয়েছিলেন। কারণ, সৌমিত্র বরাবর অভিষেকের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করে এসেছেন। তাঁর তৃণমূলে ফেরার জল্পনা শুরু হলেই তাঁকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘যে দিন অভিষেক বিজেপিতে যোগ দেবেন, সে দিন আমি তৃণমূলে ফেরার কথা ভাবব।’’ ঘটনাচক্রে, মঙ্গলবার ভোটের ফল প্রকাশের পর দিন সেই সৌমিত্রের মুখে অভিষেকের প্রশংসা শোনা গিয়েছিল। সৌমিত্র বলেছিলেন, ‘‘অভিষেকরা এক-একটা লোকসভার দুটো করে বিধানসভা টার্গেট করে নিয়েছিল। ভোটের প্রস্তুতির দিন থেকেই তৃণমূলের স্থানীয় কর্মীরা সতর্ক ছিল। সেখানে বিজেপির নেতৃত্ব এ সব কিছুই করেনি। অভিষেকের ছকও বুঝতে পারেনি।’’ একই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘অভিষেক ভাল কাজ করেছে বলেই তৃণমূল ভাল ফল করেছে।’’ একই সঙ্গে সুজাতার লড়াইয়েরও প্রশংসা করেছিলেন। তা থেকেই জল্পনা ছড়িয়েছিল, তৃণমূলে ফেরার পথ পরিষ্কার করছেন সৌমিত্র। তা নিয়ে গত দু’দিন ধরে দলের অন্দরে চর্চার পর তিনি নিজেই সেই দাবি উড়িয়ে দিলেন।

প্রসঙ্গত, সুকান্ত কেন্দ্রের মন্ত্রী হলে দলের রাজ্য সভাপতির পদ খালি হবে। তা নিয়ে বিজেপির ভিতর আলোচনা চলছেই। সেই সঙ্গে দলের অন্দরে জল্পনা, রাজ্যের যুব মোর্চার সভাপতি পদেও বদল আনা হতে পারে। ইন্দ্রনীল খাঁকে সরানো হতে পারে। গুঞ্জন, সেই পদে সৌমিত্রের নাম নিয়ে চিন্তাভাবনা চলছে।

অন্য বিষয়গুলি:

Saumitra Khan BJP
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy