মহুয়া মৈত্র। —ফাইল চিত্র।
তাঁর বিরুদ্ধে ঘুষ নিয়ে সংসদে প্রশ্ন করার যে অভিযোগ উঠেছে, তার প্রভাব কি পড়বে তাঁর জেলার রাজনীতিতেও? কৃষ্ণনগরের সাংসদ মহুয়া মৈত্রকে নিয়ে বৃহস্পতিবার যখন সংসদের এথিক্স কমিটির বৈঠক চলছে, তখন এই প্রশ্ন ঘুরছে নদিয়ার রাজনৈতিক মহলেও। বিশেষ করে তৃণমূলের অন্দরে অনেকেই বলছেন, গত কয়েক মাস ধরে মহুয়ার জেলা রাজনীতিতে যে উত্থান, এই ঘটনা সেই পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।
২০১৬ সালে করিমপুর বিধানসভা কেন্দ্রে প্রথম বারের জন্য নির্বাচিত হন মহুয়া। তিন বছরের মধ্যে তাঁকে কৃষ্ণনগর লোকসভা কেন্দ্রে প্রার্থী করে তৃণমূল। ২০১৯ সালে সেখান থেকে জিতে সাংসদ। ওই বছরেই তাঁকে নদিয়া উত্তর সাংগঠনিক জেলার সভানেত্রী করে দল। কিন্তু গোড়া থেকেই তাঁর আচরণ নিয়ে নেতাকর্মীদের একাংশের অসন্তোষ ছিল। ২০২১ সালে তাঁকে সরিয়ে ওই পদে আনা হয় জয়ন্ত সাহাকে। তার পর নাকাশিপাড়ার বিধায়ক কল্লোল খাঁকে। পঞ্চায়েত ভোটের আগেই অসুস্থতার কথা জানিয়ে কল্লোল দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি চান। যদিও দলের একাংশের দাবি, মহুয়া গোষ্ঠীর সঙ্গে সংঘাতই তাঁর সরতে চাওয়ার আসল কারণ।
তৃণমূলের অন্দরে জল্পনা ছিল, পুজো পার হলেই কল্লোলকে অব্যাহতি দিয়ে মহুয়াকে নদিয়া উত্তর সাংগঠনিক জেলা সভানেত্রী করে ফিরিয়ে আনা হতে পারে। এখন সেই অঙ্কটাই কিছুটা বদলে গেল বলে মনে করা হচ্ছে। যাঁরা মহুয়ার বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ এনেছেন, সেই বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে এবং মহুয়ার প্রাক্তন ঘনিষ্ঠ বন্ধু তথা আইনজীবী জয় অনন্ত দেহাদ্রাইয়ের বক্তব্য বৃহস্পতিবার শুনেছে সংসদের এথিক্স কমিটি। এর পর মহুয়ার ডাক পড়বে। তার পরেই বোঝা যাবে তিনি ‘ক্লিনচিট’ পাচ্ছেন কি না। দল তাঁর পাশে দাঁড়াচ্ছে কি না, এখনও
স্পষ্ট নয়।
এই পরিস্থিতিতে নদিয়ার মহুয়ার অনুগামীরা কিছুটা মুষড়ে পড়েছেন। কেন না, অভিযোগ প্রমাণিত হলে তিনি যে শুধু জেলা সভানেত্রী হওয়ার দৌড় থেকে ছিটকে যেতে পারেন, তা-ই নয়, সামনের বছর লোকসভা ভোটের টিকিটও না-পেতে পারেন। সে ক্ষেত্রে মহুয়ার ঘনিষ্ঠ বৃত্তে থেকে তেমন লাভ হবে কি না, সেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। যদিও অনুগামীরা বলছেন, নিজের সাংসদ ক্ষেত্রের জন্য যথেষ্ট কাজ করেছেন মহুয়া। কিন্তু ভোটে দাঁড়াতে না পারলে সে কাজের আর কী গুরুত্ব থাকবে! তবে উল্টোটা ঘটলে মহুয়া আরও বেশি ক্ষমতা নিয়ে ফিরবেন, এমন আশাও করছেন
কেউ-কেউ।
প্রকাশ্যে মন্তব্য করতে না চাইলেও মহুয়া-বিরোধীরা অনেকেই ঘনিষ্ঠ মহলে দাবি করছেন, মহুয়ার নিজের আধিপত্য বজায় রাখার চেষ্টা বা প্রবীণ নেতাদের কোণঠাসা করার চেষ্টা ভাল ভাবে নেননি দলনেত্রী। তবে দল ইদানীং তরুণতর নেতৃত্বের উপরে জোর দেওয়ায় তিনি বাড়তি গুরুত্ব পাচ্ছিলেন। তাতে সংগঠনের অন্দরে অস্থিরতা বেড়েছে। সম্প্রতি পঞ্চায়েত ভোটে করিমপুরের অধিকাংশ আসনে দলের দুই গোষ্ঠীর তরফে মনোনয়ন জমা দেওয়া হয়েছিল। শেষ মুহূর্তে মন্ত্রী মলয় ঘটকের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া হয়।
এর আগে যিনি নিজে দলনেত্রীর কাছে গিয়ে মহুয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিলেন, সেই কল্লোল খাঁ বলেন, “তদন্তে সত্য প্রকাশিত হবে। তখন নেতৃত্ব নিশ্চয়ই একটা সিদ্ধান্ত নেবেন। তার আগে আমার কিছু বলার নেই।” জেলা সভাপতি থাকাকালীন যিনি করিমপুরে বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর হাতে নিগৃহীত হয়েছিলেন, সেই জয়ন্তও বলেন, “যা বলার নেতৃত্ব বলবেন, আমাদের বলার কী থাকতে পারে?” তবে মহুয়া-বিরোধী বলে পরিচিত তেহট্টের বিধায়ক তাপস সাহা বলেন, “আমি দিল্লির খোঁজ রাখি না। তবে এটা বলব যে, সাংসদ হিসাবে মহুয়া সফল। উনি এলাকার যথেষ্ট উন্নতি করেছেন।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy