শনিবার ঘাটালে শুভেন্দু। —নিজস্ব চিত্র।
পদ্ম ছেড়ে ফের ‘ঘরে’ ফিরেছেন মুকুল রায়। কিন্তু তিনি দলত্যাগ বিরোধী আইন মানেননি বলে এ বার অভিযোগ তুললেন নন্দীগ্রামের বিজেপি বিধায়ক তথা রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তাঁর বক্তব্য, ‘‘মুকুল রায়কে দিয়ে যা শুরু হল, তা দলত্যাগ বিরোধী আইন মেনে হয়নি। দু’মাস হোক, তিন মাস হোক, বিরোধী দলনেতা হিসেবে বাংলায় এই আইন কার্যকর করেই ছাড়ব আমি।’’
যাবতীয় জল্পনা সত্যি করে শুক্রবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে সপুত্র তৃণমূলে ফিরেছেন মুকুল। তবে জোড়াফুল পতাকা হাতে তুলে নিলেও এখনও পর্যন্ত মুকুল বিজেপি-র হয়ে জেতা কৃষ্ণনগর উত্তরের বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দেননি বলেই খবর। বিজেপি-র সর্বভারতীয় সহ-সভাপতির পদ ছাড়তে চেয়েও তাঁর কোনও চিঠি বিজেপি নেতৃত্বের কাছে পৌঁছয়নি বলে দলীয় সূত্রে খবর। তা না করেই দলবদল নিয়ে মুকুলের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করা হবে কি না, তা নিয়ে এখনও পর্যন্ত স্পষ্ট উত্তর মেলেনি গেরুয়া শিবির থেকে। এ নিয়ে প্রশ্ন করলেও তেমন কোনও চিন্তাভাবনা নেই বলে জানান দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তিনি বলেন, ‘‘আমরা এমন কিছু ভাবছি না। উনি এক জন বিবেচক মানুষ। কী সিদ্ধান্ত নেন দেখি।’’
কিন্তু দিলীপের মতো কোনও রাখঢাক করতে চাইছেন না শুভেন্দু। শনিবার পশ্চিম মেদিনীপুরের ডেবরায় বিজেপির ঘাটাল সাংগঠনিক জেলার সভাপতি ও ব্লক সভাপতিদের বৈঠক করেন তিনি। বৈঠক সেরে বেরিয়ে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে সাফ জানিয়ে দেন, বাংলায় দলত্যাগ বিরোধী আইন কার্যকর করার কাজ শুরু করে দিয়েছেন তিনি। এ নিয়ে কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদের সঙ্গে কথাও হয়েছে তাঁর।
ভোটের কয়েক মাস আগে শুভেন্দু নিজেই তৃণমূল ছেড়ে বিজেপি-তে যোগ দিয়েছিলেন। তবে শুভেন্দুর বক্তব্য, ‘‘দলত্যাগ বিরোধী আইন মেনে সব পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে এক জন সাধারণ কর্মী হিসেবে বিজেপি-র সদস্যপদ গ্রহণ করি আমি। কিন্তু এ বেলায় তা হয়নি। বিরোধী দলনেতা হিসেবে তাই কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে রাজ্যে দলত্যাগ বিরোধী আইন কার্যকর করার কাজ শুরু করে দিয়েছি। দলত্যাগ আইন মেনেই দল ছাড়তে হবে। তার বাইরে উপায় নেই।’’
মুকুলের তৃণমূলে ফেরা নিয়ে সরাসরি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে দল ভাঙানোর রাজনীতি করার অভিযোগ অনেছেন শুভেন্দু। তাঁর কথায়, ‘‘মাননীয়া যেটা করছেন, কংগ্রেসের বিধায়ক তৃণমূলের খাতায়, সিপিএমের বিধায়ক তৃণমূলের খাতায়। মাননীয়া, তৃমমূল এবং বাংলার বিধানসভা আইনের ঊর্ধ্বে নয়। আইন প্রতিষ্ঠিত করার দায়িত্ব বিরোধী দলনেতার। দু’মাস লাগুক, তিন মাস লাগুক, দলত্যাগ বিরোধী আইন কার্যকর করবই।’’
দল ভাঙানো নিয়ে মমতাকে আক্রমণ করে শুভেন্দু আরও বলেন, ‘‘এটা ওঁর দীর্ঘ দিনের রোগ। নিজের রাজত্বে কোনও বিরোধী শক্তি রাখতে চান না। তাই স্কুলের নির্বাচন তুলে দিয়েছেন। চার বছর ধরে কলেজের ছাত্র সংসদের নির্বাচন হয়নি। ১১০টি পুরসভায় তিন বছর ধরে নির্বাচন হয়নি। পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রহসন করেছেন। ভোট লুঠ করেছেন। মনোনয়ন দিতে দেননি। গণনাকেন্দ্র দখল করেছেন। ২০১২ সাল থেকে বিধায়ক ভাঙিয়ে বিরোধীদের শেষ করার কাজ শুরু করেছেন। আগে সিপিএম এবং কিছু জায়গায় কংগ্রেস ছিল। এখন রাজ্যে একমাত্র বিরোধী দল বিজেপি। তাই নিশানা করা হচ্ছে।’’
তবে শুভেন্দু দলত্যাগ বিরোধী আইন কার্যকর করার হুঁশিয়ারি দিলেও, ভোটের আগে অন্য দল থেকে নেতা ভাঙানোর সময় বিজেপি নিজেই সেই আইনের তোয়াক্কা করেনি বলে মত একাংশের। যে কারণে কাঁথির সাংসদ শিশির অধিকারী এবং পূর্ব বর্ধমানের সাংসদ সুনীল মণ্ডল বিজেপি-তে যোগ দিলে, দলত্যাগ বিরোধী আইনে তাঁদের বিরুদ্ধে লোকসভার অধ্যক্ষের কাছে অভিযোগ জানিয়েছিল তৃণমূল।
তবে বিজেপি সূ্ত্রে খবর, ভোট মিটে যাওয়ার পর যখন বিরোধী দলনেতা বাছার দায়িত্ব নিয়ে যখন রাজ্যে আসেন রবিশঙ্কর প্রসাদ, সেই সময়ই তৃণমূল বিধায়ক ভাঙিয়ে নিয়ে যেতে পারে বলে তাঁকে সতর্ক করেছিলেন শুভেন্দু। যত শীঘ্র সম্ভব রাজ্যে দলত্যাগ বিরোধী আইন কার্যকর করার আর্জিও জানিয়েছিলেন। আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন, বিধায়ক সংখ্যা কমে গেলে রাজ্যসভা এ রাজ্য থেকে নিজেদের প্রার্থী পাঠাতেও সমস্যায় পড়তে হতে পারে বিজেপি-কে। তাই মুকুলের তৃমমূলে ফেরা নিয়ে জল অনেক দূর গড়াতে পারে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহলের একাংশ। তাদের ধারণা, এই মুহূর্তে করোনার জন্য রাজ্য বিধানসভার অধিবেশন বন্ধ রয়েছে। আগামী মাসে অধিবেশন বসলে দলত্যাগ বিরোধী আইনের সপক্ষে শুভেন্দু সরব হতে পারেন বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy