Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
R G Kar Hospital Incident

পর পর তিন ক্লাব! পুজোর অনুদান ফেরানোর প্রতিবাদ কেন উত্তরপাড়াতেই ঘটছে? কী উত্তর শাসক-বিরোধীর

অনুদান ফেরানোর যে ঘোষণা আনুষ্ঠানিক ভাবে করা হয়েছে, তাতে তিনে-তিন হুগলির উত্তরপাড়া। কৌতূহল তৈরি হয়েছে, আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে পুজোর অনুদান ফেরানোর ধারায় উত্তরপাড়া কি বিচ্ছিন্ন দ্বীপ?

Why Uttarpara’s clubs are refusing state government puja grant

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: ফেসবুক।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ অগস্ট ২০২৪ ২১:৪১
Share: Save:

কথায় বলে, এক বার ঘটে গেলে ‘অঘটন’। দ্বিতীয় বার ঘটলে ‘সমাপতন’। তৃতীয় বারেও একই ঘটনা ঘটলে ‘প্যাটার্ন’ বা ‘ধারা’।

যেমন ঘটেছে হুগলির উত্তরপাড়ায়। পর পর তিনটি ক্লাব দুর্গাপুজোর সরকারি অনুদান ফিরিয়ে দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে। প্রথম ‘শক্তি সঙ্ঘ’। দ্বিতীয় ‘আপনাদের দুর্গাপুজো’ এবং তৃতীয় ক্লাব ‘বৌঠান সঙ্ঘ’। ঘটনাচক্রে, এই তিনটি পুজো কমিটিই একই পুরসভা এলাকার। ফলে প্রচলিত ধারণা বলছে, উত্তপাড়ায় একটি ‘প্যাটার্ন’ তৈরি হয়েছে।

ওই ঘোষণাকে অনেকেই রাজনৈতিক ভাবে রাজ্য সরকার তথা শাসকদলের প্রতি ‘অনাস্থা’ প্রকাশ হিসাবে দেখিয়েছেন। তবে উদ্যোক্তাদের বক্তব্য, আরজি কর হাসপাতালে যে ভাবে চিকিৎসককে ধর্ষণ এবং খুন করা হয়েছে, তার প্রতিবাদেই এই সিদ্ধান্ত। এর মধ্যে রাজনীতি খোঁজা ‘অমূলক’। যদিও শাসক তৃণমূলের অনেকেই মনে করছেন, ওই তিনটি ক্লাবের সিদ্ধান্তের পিছনে ‘রাজনৈতিক প্রভাব’ রয়েছে। তৃণমূলের জেলা স্তরের নেতারা আঙুল তুলছেন সিপিএমের দিকেই। যদিও দুর্গাপুজো এবং সে বাবদে সরকারি অনুদানের মতো ‘স্পর্শকাতর’ বিষয় নিয়ে শাসক শিবিরের কোনও নেতাই আনুষ্ঠানিক ভাবে কোনও মন্তব্য করতে নারাজ। উদ্যোক্তাদের অনেকেও নাম গোপন রাখার শর্তেই মতামত প্রকাশ করেছেন। তবে কেউ কেউ আবার সোজা কথা সোজা ভাবেই বলতে চেয়েছেন।

আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে সমাজমাধ্যমে এমন একাধিক পোস্ট দেখা গিয়েছে, যেখানে বিভিন্ন এলাকার পুজো কমিটির নামোল্লেখ করে বলা হয়েছিল, তারা পুজো বাবদে ‘নবান্নের নৈবেদ্য’ গ্রহণ করছে না। যদিও সে সব সংগঠন ওই মর্মে কোনও ‘আনুষ্ঠানিক ঘোষণা’ করেনি। এখনও পর্যন্ত অনুদান ফেরানোর যে সিদ্ধান্ত এবং সেই সিদ্ধান্তের ঘোষণা আনুষ্ঠানিক ভাবে করা হয়েছে, তাতে তিনে-তিন উত্তরপাড়া। কৌতূহল তৈরি হয়েছে, আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে পুজোর অনুদান ফেরানোর যে ধারা তৈরি হচ্ছে, তাতে কি উত্তরপাড়া একটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপ? রাজ্যের অন্যান্য প্রান্তেও প্রতিবাদ হচ্ছে প্রতিদিনই। হচ্ছে মিছিলও। কিন্তু পুজোর অনুদান ফেরানোর প্রথম তিনটি স্থানই পেয়ে বসে আছে উত্তরপাড়া।

বিভিন্ন এলাকার পুজো উদ্যোক্তারা অবশ্য এ প্রসঙ্গে নানা ব্যাখ্যা দিচ্ছেন। যেমন নির্যাতিতার বাড়ির এলাকা পানিহাটির এক নামকরা পুজো কমিটির কর্তা তথা প্রাক্তন পুলিশ আধিকারিকের বক্তব্য, ‘‘আমাদের অনেক কমিটিই পুজো অনুদান ফেরাতে চায়। কিন্তু স্থানীয় বিভিন্ন সমীকরণের কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না।’’ আবার হুগলির শ্রীরামপুরের এক পুজো কমিটির সভাপতির বক্তব্য, ‘‘অনেক ক্লাব রয়েছে, যারা অনুদানের জন্য রাজ্য সরকারের পোর্টালে নাম নথিভুক্ত করবে না। তবে তারা আগে থেকে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করতে চাইছে না। তাতে চাপ তৈরি হতে পারে।’’ উত্তরপাড়া থানা-লাগোয়া এলাকার একটি পুজো কমিটির এক কর্তা বলছেন, ‘‘অনেক পুজো কমিটি ভয়ে অনুদান ফেরানোর কথা ঘোষণা করতে পারছে না। কারণ, তাদের মধ্যে আতঙ্ক কাজ করছে, অনুদান না নিলে যদি প্রশাসন বিদ্যুৎ সংযোগ বা অন্য পরিকাঠামো ব্যবহার করতে না দেয়! পুরসভা যদি জঞ্জাল পরিষ্কার না করে বা জলের গাড়ি না পাঠায়! সে ক্ষেত্রে পুজোটাই মাঠে মারা যাবে। তাই তারা ঝুঁকি নিতে পারছে না।’’ আবার হুগলির বৈদ্যবাটি সরকারি আবাসন পুজো কমিটির কোষাধ্যক্ষ সন্তু সরকার আনুষ্ঠানিক ভাবেই তাঁর প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘সরকারি অনুদান না-গ্রহণ করার প্রস্তাব কেউ কেউ মৌখিক ভাবে দিয়েছেন। আগামী ২ সেপ্টেম্বর রাজ্য সরকারের পোর্টাল খুলবে। তার আগেই আমরা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব।’’ উল্লেখ্য, সন্তু বৈদ্যবাটির ওই এলাকার সিপিএমের নেতা। এলাকায় পরিচিত সিপিএমের মুখও বটে।

শাসক তৃণমূলের নেতারা উত্তরপাড়ার এই ‘ধারা’র পিছনে সিপিএমের প্রভাবের দিকেই আঙুল তুলছেন। তবে তা নিয়ে শাসকদলের মধ্যেও দু’টি মত রয়েছে। দলের এক জনপ্রতিনিধির বক্তব্য, ‘‘উত্তরপাড়া-কোতরং এলাকায় সিপিএমের শক্তি রয়েছে। বিভিন্ন ক্লাব এবং সামাজিক সংগঠনে সিপিএমের স্থানীয় নেতারাও যুক্ত। তাঁরাই এটা করাচ্ছেন। তবে তিনটি ক্লাব অনুদান ফেরালেও নতুন সাতটি সংগঠন অনুদান পেতে আবেদন করছে। যার মধ্যে দু’টি মহিলা পরিচালিত পুজো।’’ তৃণমূলের ওই নেতার এ-ও বক্তব্য যে, কোতরংয়ের বৌঠান সঙ্ঘে সিপিএমের এক স্থানীয় নেত্রী যুক্ত। শক্তি সঙ্ঘের অন্যতম নিয়ন্ত্রক মেডিক্যাল রিপ্রেজ়েনটেটিভদের মধ্যে সিপিএমের ইউনিয়নের নেতা। আবার আপনাদের দুর্গাপুজোয় এক জন মহিলা রয়েছেন, যিনি পুরসভা ভোটে সিপিএমের প্রার্থী হয়েছিলেন। সেটারই প্রভাব পড়েছে ওই তিন ক্লাবের পুজো অনুদান ফেরানোয়।

তৃণমূলের শ্রীরামপুর সাংগঠনিক জেলার এক প্রথম সারির নেতা অবশ্য উত্তরপাড়ার এই ধারাকে তাঁদের ‘সাংগঠনিক দৈন্য’ বলেই মনে করছেন। তাঁর কথায়, ‘‘উত্তরপাড়ায় সিপিএম শক্তিশালী এ কথা ঠিক। কিন্তু এ-ও বাস্তব যে, আরজি কর-কাণ্ডের পর থেকে আমাদের লোকেরা কেন্নোর মতো গুটিয়ে রয়েছে। সেই কারণেই সিপিএম নিয়ন্ত্রণ কায়েম করে এই কাজ করতে পারছে।’’ ওই নেতা মেনে নিয়েছেন যে, আরজি করের ঘটনায় যে গণক্ষোভ তৈরি হয়েছে, তাতে নিচুতলার কর্মীদের মনোবল ধাক্কা খেয়েছে। আড়াই মাস আগে লোকসভা ভোটের বিপুল জয়ের উদ্যমও ম্লান হয়ে যাচ্ছে। অন্য অংশের বক্তব্য অবশ্য, এই আন্দোলন আর খুব বেশি দিন উদ্যম ধরে রাখতে পারবে না।

তবে পুজো অনুদান ফেরানো নিয়ে তৃণমূলের নেতারা যে যুক্তি বা ব্যাখ্যা দিচ্ছেন, ‘শূন্য’ সিপিএমের পক্ষে বাস্তবে তা কতটা করা সম্ভব, তা নিয়ে অনেকের প্রশ্ন রয়েছে। শাসকদলের অভিযোগ প্রসঙ্গে উত্তরপাড়ার প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক তথা দলের হুগলি জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর আমন্ত্রিত সদস্য শ্রুতিনাথ প্রহরাজ বলেন, ‘‘তৃণমূল আসলে সিপিএমের ভূত দেখছে। আরজি করে যে ঘটনা ঘটেছে, তার প্রতিবাদে যে আন্দোলন রাজপথে আছড়ে পড়েছে, তা পুরোটাই সামাজিক আন্দোলন। তার সঙ্গে রাজনৈতিক দলের সম্পর্ক নেই। পুজো কমিটিগুলি প্রতিবাদস্বরূপ এই সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। আমি তাকে স্বাগত জানাচ্ছি এবং আশা রাখছি আরও পুজো উদ্যোক্তারা এই প্রতিবাদে শামিল হবেন।’’

পাল্টা শ্রীরামপুরের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমরা কোথাও সিপিএমের ভূত দেখি না। সিপিএম মানেই আমাদের কাছে খুনি আর হার্মাদ। ওদের নেতাদের ধুতিতে ধর্ষণের দাগ রয়েছে।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy