Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
TMC

Saugata Roy: ‘বিজেপিকে ঠান্ডা করা দরকার’ বলেই ভাষায় ‘জুতো’! অকপট জবাব অধ্যাপক সৌগতের

একের পর এক বক্তব্য নিয়ে বিতর্কে জড়াচ্ছেন সৌগত। কিন্তু কেন? কোনও অস্বস্তি থেকেই কি এমন ভাষা আসছে প্রাক্তন অধ্যাপকের মুখে?

পরিস্থিতি অনুযায়ী ভাষা ব্যবহারের পক্ষে সৌগত রায়।

পরিস্থিতি অনুযায়ী ভাষা ব্যবহারের পক্ষে সৌগত রায়। ফাইল চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ অগস্ট ২০২২ ১৬:০১
Share: Save:

কিছুটা অচেনাই এখনকার সৌগত রায়। তৃণমূল সাংসদের বদল বেশ স্পষ্ট। গত কিছু দিন ধরেই তাঁর বক্তব্যে বিরোধীদের আক্রমণে ঝাঁজ বেড়েছে। আর সেই ঝাঁজে মিলছে ‘অসৌজন্য’-এর নিদর্শনও। এর নেপথ্যে কি নিজের দলে তৈরি হওয়া অস্বস্তিকর পরিস্থিতি? বিভিন্ন তদন্তে দলের নেতাদের গ্রেফতার হওয়া বা জেরার মুখে থাকার জন্য কি তিনি কিছুটা অসহিষ্ণু হিয়ে উঠেছেন? কেন এমন ভাষায় বলছেন? এই প্রশ্ন নিয়ে আনন্দবাজার অনলাইন ফোন করতেই তিনি ‘অচেনা’ ঝাঁজেই বলে উঠলেন, ‘‘আমি মনে করছি বিজেপিকে একটু ঠান্ডা রাখা দরকার। ওরা বড্ড বেশি বলছে। তাই এমন ভাষা।’’ কিন্তু প্রাক্তন অধ্যাপক তথা প্রবীণ সাংসদ সৌগতকে তো এমন ভাষা ব্যবহার করতে দেখা যায় না? সৌগতর পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘সব ভাষাই আনন্দবাজার অনলাইনের মতো সুশব্দ হবে এমন কি কথা আছে?’’

সৌগতর মুখে অসৌজন্যের ভাষা ইদানীং কালে প্রথম শোনা যায় গত ১৪ অগস্ট। কামারহাটিতে একটি দলীয় কর্মসূচিতে তিনি বলেন, ‘‘তৃণমূলের সমালোচকদের গায়ের চামড়া দিয়ে পায়ের জুতো তৈরি হবে। তৃণমূলের সব চোর বলে মিছিল করলে পার্টি অফিসে ঢুকে যেতে হবে।’’ তা নিয়ে তুমুল সমালোচনার মধ্যে‌ই ২২ অগস্ট খড়দহে বলেন, ‘‘যে দোষ করেছে তার শাস্তি হবে। কিন্তু সবাইকে চোর বললে আমরাও রুখে দাঁড়াব, উপযুক্ত শিক্ষা দেব। চোর না হয়ে বদনাম শুনতে পারব না।’’ কুকথার স্রোত বজায় রেখে ২৭ অগস্ট কামারহাটিতে বলেন, ‘‘সিপিএম, বিজেপি যদি আমাদের চোর বলে উত্ত্যক্ত করে, তা হলে কিন্তু তৃণমূল কর্মীরা চুপ করে বসে থাকবে না। আমরা একবার রুখে দাঁড়ালে ওদের এলাকাছাড়া হতে হবে।’’ অথচ এ সব কথা বলার ক’দিন আগেই, অনুব্রত মণ্ডলের গ্রেফতার প্রসঙ্গে বীরভূমের কয়েক জন নেতা ‘কুকথা’ বলায় এই সৌগতই বিরোধিতা করে বলেছিলেন, ‘‘দল এ সব সমর্থন করে না।’’

জুতো পেটার কথা বলার পরেই বিরোধীদের সমালোচনায় বিদ্ধ হন সৌগত। প্রথম দিন যখন তিনি এমন শব্দ ব্যবহার করেন সে দিনই প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেন, “যে সৌগতবাবুকে আমি চিনি, তিনি এই ধরনের কথা বলতে পারেন না। যদি বলে থাকেন, তা হলে দলের চাপে তিনি বলছেন। খারাপ লাগছে।” পদার্থবিদ্যার প্রাক্তন অধ্যাপকের মুখ থেকে এমন ভাষা বিরোধীদের কাছেও কাঙ্ক্ষিত নয় তা বুঝিয়ে, সিপিএমের সুজন চক্রবর্তী প্রশ্ন তোলেন, ‘‘এটা কি ওঁর (সৌগতের) স্বাভাবিক ভাষা? নাকি সঙ্গদোষ? না কি ক্ষমতা হারানোর ভয় পাচ্ছেন?’’ রাজ্য বিজেপির প্রধান মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যের মতে, “ভয়, আতঙ্ক, হতাশা থেকে সৌগত রায়ের মতো প্রবীণ অধ্যাপক এমন মন্তব্য করেছেন। তাঁর কাছ থেকে সমাজ এমন মন্তব্য প্রত্যাশা করে না।’’

কবে কোথায় কী বলেছেন!

কবে কোথায় কী বলেছেন! গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ

কিন্তু সৌগত নিজেকে ‘প্রাক্তন অধ্যাপক’ পরিচয়ের মধ্যে আটকে রাখতে চাইছেন না। রবিবার তিনি বলেন, ‘‘যখন মনে হয় দরকার, তখন বলি। রাজনৈতিক পরিস্থিতি অনুযায়ী ভাষা বদলায়।’’ প্রশ্ন ছিল, বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষের মুখে নানা শব্দের ব্যবহার শুনে তো আপনি তার নিন্দা করেন? জবাবে সৌগত বলেন, ‘‘দিলীপ ঘোষ অন্য কোনও ভাষা জানেন না। উনি তো লেখাপড়াই শেখেননি। আমি ভাল ভাষাও বলতে পারি। আক্রমণাত্মক ভাষাও বলতে পারি।’’ তবে ইদানীং তৃণমূল নেতাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠা নিয়ে তিনি যে খানিক সঙ্কুচিত তা-ও স্বীকার করেন সৌগত। তবে তার জন্যই যে এমন ভাষা ব্যবহার তা তিনি মানতে নারাজ। বলেন, ‘‘লজ্জা একটু পাচ্ছি। তবে সেই লজ্জা থেকে এই ভাষা মুখে আসছে না। বিজেপি যে স্লোগান তুলছে ‘চোর ধরো, জেল ভরো’ সেটা আমার গায়ে লাগছে।’’ এই খারাপ লাগা থেকেই কি ‘কুকথা’? সৌগত বলে, ‘‘খারাপ তো লাগছে। তবে তার জন্য হচ্ছে কি না, সে ব্যাখ্যা দিতে পারব না। তবে ভাষার উপরে আমার নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। যখন যেমন দরকার পড়বে তখন তেমন ভাষায় বলব।’’

সৌগতের মুখে এমন ভাষার ব্যবহার অবশ্য একেবারে নতুন তেমনটাও নয়। ২০১৩ সালে তাঁরই একটি কথা নিয়ে তুমুল বিতর্ক হয়েছিল। তিনি বলেছিলেন, ‘‘সিপিএম মায়ের ভোগে গিয়েছে। চট করে বেঁচে ওঠার সম্ভাবনা নেই। হেরো মালদের দিয়ে সভা করাবেন না।’’ কিন্তু এই পর্যায়ে তাঁর ‘কুকথা’র গুণগত উল্লম্ফন ঘটেছে বলে মনে করছেন অনেকেই। রক্ষণ সামলাতে গিয়ে আক্রমণাত্মক হতে গিয়েই কি এমন কথাবার্তা? সৌগতর কথাতেই পরিষ্কার, শুধু তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় নয়, ভেবেচিন্তে বা পরিকল্পিত ভাবেই এই পাল্টা আওয়াজ তাঁর।

অন্য বিষয়গুলি:

TMC Sougata Roy BJP
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE