অর্জুন এখন কোন্দলে না কোন দলে? — ফাইল চিত্র।
খাতায়কলমে তিনি এখনও বিজেপি সাংসদ। আর বাস্তবে তৃণমূলের ‘বরিষ্ঠ’ নেতা। তাঁর গলায় রাজ্য পুলিশের বিরুদ্ধে চড়া সুর। ব্যারাকপুরে সোনার দোকানে ডাকাতি এবং দুষ্কৃতীদের গুলিতে একজনের প্রাণহানির পরে পুলিশকে ‘সম্পদ’ নয়, ‘দায়’ বলে মনে করছেন তিনি।
তিনি— অর্জুন সিংহ। ছিলেন তৃণমূলে। গিয়েছিলেন বিজেপিতে। আবার ফিরেছেন তৃণমূলে। কিন্তু তিনি এখন কোন দলে? ব্যারাকপুরের ঘটনার পরে সরাসরি রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তুলে বৃহস্পতিবার অর্জুন যা বলেছেন, তার সঙ্গে একেবারেই সহমত নয় তাঁর দল তৃণমূল। দল স্পষ্ট বলছে, একজন ‘বরিষ্ঠ’ নেতা হয়ে এমন মন্তব্য করে ঠিক করেননি অর্জুন। তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক তথা মুখপাত্র কুণাল ঘোষের কথায়, ‘‘কোনও কোনও অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটছে এটা ঠিক। তাকে সমর্থন করা যায় না। একই সঙ্গে দলের একজন প্রবীণ নেতা হিসাবে অর্জুন সিংহেরও বিরোধীদের সুরে মন্তব্য করা ঠিক নয়।’’ আর অর্জুন এখনও যে দলের সাংসদ, সেই বিজেপির দাবি, দল-বদলানো অর্জুনের কথার এখনও কোনও রাজনৈতিক গুরুত্বই নেই! বিজেপির অন্যতম মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যের কথায়, ‘‘উনি বিজেপিতে এসে তৃণমূলের কাছে গদ্দার হয়েছিলেন। বিজেপি সাংসদ হয়ে তৃণমূলে গিয়ে গদাধর হয়েছেন। ওঁর কথার কোনও রাজনৈতিক গুরুত্বই নেই।’’
বুধবার ব্যারাকপুরের ঘটনার পর বৃহস্পতিবার এলাকার সাংসদ অর্জুন বলেন, ‘‘অপরাধীরা যে মুক্তাঞ্চল বানিয়ে ফেলছে, তা দেখেও আমরা কিছু করতে পারছি না। এতে আখেরে পার্টির (তৃণমূলের) ক্ষতি হচ্ছে।’’ এই বিবৃতিতে তৃণমূলের সন্তুষ্ট হওয়ার কথা নয়। সমস্যা হল, অর্জুন ব্যারাকপুর থেকে জিতেছিলেন বিজেপির টিকিটে। প্রতিষ্ঠান বিরোধী ভোটে। কিন্তু এখন তিনি সেই প্রতিষ্ঠানেরই অংশ। সরকার পক্ষের লোক। এলাকায় এমন একটি ঘটনা ঘটলে বিরোধী দলের সাংসদ হিসাবে তিনি যে ভূমিকা পালন করতে পারতেন, তা এলাকায় ‘নেতা’ হিসাবে তাঁকে আরও প্রতিষ্ঠিত করতে পারত। কিন্তু পাকেচক্রে তিনি তা নন। আবার শাসকদলের অংশ হয়েও পুলিশের বিরুদ্ধে তাঁকে সরব হতেই হচ্ছে। অর্জুনের ‘ছায়াসঙ্গী’ হিসাবে পরিচিত এক অনুগামী বলেন, ‘‘দাদার বিরুদ্ধে পুলিশ অনেক মামলা দিয়ে রেখেছে। বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে এলেও প্রশাসন ওঁর কোনও কথা শোনে না! বিজেপিতে থাকলে এটা নিয়ে অনেক কিছু করতে পারতেন। কিন্তু এখন হাত-পা বাঁধা!’’
তিনি কি সরকার এবং তাঁর বর্তমান দলকে অস্বস্তিতে ফেলার মতো মন্তব্য ভেবেচিন্তেই করেছেন? বৃহস্পতিবার আনন্দবাজার অনলাইনকে ব্যারাকপুরের সাংসদ বলেন, ‘‘দল কিছু ভাবতে পারে। কিন্তু আমাকে তো মানুষ নির্বাচিত করেছে! আমায় তো মানুষের কথা বলতে হবে। তাদের নিয়েই চলতে হবে। আর ভুল তো কিছু বলিনি। যা বাস্তব সেটাই তো বলেছি।’’
পুলিশ-প্রশাসন নিয়ে তৃণমূল নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা করবেন বলে জানাচ্ছেন সাংসদ। অর্জুনের কথায়, ‘‘আমি এনকাউন্টার করতে বলছি না। কিন্তু অপরাধীদের জেলে ঢোকাতে হবে। তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ পুলিশকেই করতে হবে।’’ তাঁর সঙ্গে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব আলোচনায় বসবেন কি না, তা জানা যায়নি। তবে কুণালের কথায় স্পষ্ট যে, অর্জুনের বিজেপির সুরে আক্রমণ দলের পক্ষে ‘স্বস্তিকর’ নয়।
অর্জুনের অনুগামীরা মেনে নিচ্ছেন, তিনি এখন না ঘর কা, না ঘাট কা হয়ে রয়েছেন। পুলিশের কাছেও তাঁর গুরুত্ব নেই। বস্তুত, তাঁর অনুগামীদের একাংশের বক্তব্য, শাসকদলের একাংশ পুলিশকে অর্জুনের বিরুদ্ধে চালিত করছে। নিজের লোকসভা এলাকায় এত বড় ঘটনা এবং তিনি তৃণমূলে থাকার পরেও কিছু করতে পারছেন না! সেই আক্ষেপ ফুটে উঠেছে অর্জুনের গলায়। তিনি বলছেন, ‘‘এক মাসের মধ্যে দুটো খুন হয়ে গেল! এক জন ব্যবসায়ী মারা গেলেন। এক জন মাত্র ৪ লক্ষ টাকা ধার নেওয়ার পর খুন হলেন। টিটাগড় থানার ভূমিকাও ঠিক নয়। এটা অপরাধীদের আড়াল করার চেষ্টা না কি তাদের ধরতেই পারছে না পুলিশ, সেটা দেখার বিষয়।’’ এর পর তিনি পুলিশের শারীরিক সক্ষমতা নিয়েও কটাক্ষ করে বলেন, ‘‘৪০ কেজির ভুঁড়ি নিয়ে হাঁটতেই পারে না! সে আবার অপরাধীদের ধরতে পারে নাকি! কিছু লোক এদের পরিচালনা করছে। এতে আখেরে পার্টির ক্ষতি হচ্ছে। অপরাধীরা মুক্ত ভাবে বিচরণ করছে।’’
বুধবার সন্ধ্যায় ব্যারাকপুরের আনন্দপুরী এলাকায় সোনার দোকানে ডাকাতদের বাধা দিতে গিয়ে গুলিতে মৃত্যু হয় দোকানমালিকের পুত্রের। গুরুতর আহত হন আরও দু’জন। তার পরেই বৃহস্পতিবার মুখ খোলেন অর্জুন। বলেন, ‘‘পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে, পুলিশের ভূমিকা সঠিক নয়। পুলিশ-প্রশাসনের উপর মানুষের যে ক্ষোভ তৈরি হচ্ছে, তাতে আমাদের দলের ক্ষতি হবে। আগেকার পুলিশ অফিসার দেখে অপরাধীরা অপরাধ করতে ভয় পেত। কিন্তু এখনকার পুলিশ অফিসারেরা অপরাধীদের শায়েস্তা করতে ব্যর্থ। ছোট ছোট বিষয় পুলিশের একাংশ অতি সক্রিয়। কিন্তু অপরাধীরা যে মুক্তাঞ্চল বানিয়ে ফেলছে, তা দেখেও আমরা কিছু করতে পারছি না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy