ফাইল চিত্র।
আগামী দু’সপ্তাহ যে কঠিন সময়, বৃহস্পতিবার সাংবাদিক বৈঠকে সে কথা বলেছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যে দৈনিক সংক্রমিতের সংখ্যা ৫০ হাজার পেরোতে পারে বলে শঙ্কিত চিকিৎসক মহলের একাংশ। অথচ এই ‘কঠিন’ পরিস্থিতিতেও লক্ষাধিক লোকের সমাগমের গঙ্গাসাগর মেলা সম্পর্কে রাজ্য কী ভাবছে, সেই প্রশ্নে মুখ্যমন্ত্রীর উত্তর, “কেন জানতে চাইছেন! এটা বিচারাধীন। আদালত রায় দিক।”
করোনা যতই দাবানলের মতো ছড়াক, কাবু হয়ে পড়ুন ডাক্তার, নার্স-সহ ফ্রন্টলাইন ওয়ার্কাররা, তার পরেও চার পুর-নিগমে ভোট পিছিয়ে দেওয়ার কথা এখনও বলেনি রাজ্য। এমনকি মাস্ক পরা-সহ বিভিন্ন কোভিড-বিধি পালনের বিষয়টিও এ দিন মূলত সাধারণ মানুষের সচেতনতার উপরে ছেড়েছেন মমতা। বলেছেন, “প্রশাসন জোর করে গ্রেফতার বা জরিমানা করে মাস্ক পরাতে পারে না। নিজেদের বাঁচাতে মানুষ নিজেরাই সচেতন হতে পারে।’’
মুখ্যমন্ত্রীর সাংবাদিক বৈঠকের পরে বিরোধী শিবির থেকে সমাজমাধ্যম— সর্বত্র প্রশ্ন, কোভিড-কালে ভিড় ঠেকাতে গঙ্গাসাগর মেলা বন্ধের মতো সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য কেন আদালতের নির্দেশের অপেক্ষা করতে হবে? কেন পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝে নিজেরাই তা নেবে না রাজ্য? সমাজমাধ্যমে কটাক্ষ, ‘ভিড় ঠেকানোর দায় কোর্টের। আর নিয়ম মানার দায়িত্ব আমজনতার। তা হলে রাজ্য সরকারের ভূমিকা কী?’ অনেকে এ প্রসঙ্গে মনে করিয়ে দিয়েছেন, এর আগে কোভিড-কালে দুর্গাপুজোর প্যান্ডেলে ভিড় রুখতেও নিয়ম জারি করতে হয়েছিল হাই কোর্টকে। একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি দেখা গিয়েছিল কালীপুজো ও পরবর্তী উৎসবগুলিতে।
রাজ্যের প্রাক্তন বিরোধী দলনেতা, কংগ্রেসের আব্দুল মান্নানের বক্তব্য, ‘‘আদালত পর্যন্ত অপেক্ষা করার প্রয়োজনই নেই। প্রশাসনিক নির্দেশ দিয়েই এগুলো বন্ধ করা যায়। রাজ্য সরকারের সঙ্গে কথা বলে রাজ্য নির্বাচন কমিশন আপাতত ভোট স্থগিত রাখতে পারে। ইদের জমায়েত, গত বার বড়দিনের উৎসব যদি বন্ধ থাকতে পারে, তা হলে গঙ্গাসাগর এক বার বন্ধ থাকলে ক্ষতি কী? নাকি মুখ্যমন্ত্রী এখন প্রধানমন্ত্রী হতে চান বলেই অন্য রাজ্যে জনপ্রিয়তা বাড়াতে এ সব হতে দিতে চান? তাতে পুলিশ, স্বাস্থ্যকর্মী, সাধারণ মানুষ যে যত আক্রান্তই হোন, কিছু এসে যায় না!’’
মুখ্যমন্ত্রী এ দিন নিজেই জানান, এখন সংক্রমণ ছড়াচ্ছে অত্যন্ত দ্রুত। তিনি বলেন, ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘ এ বার গঙ্গাসাগরে স্বেচ্ছাসেবক দিতে পারছে না। কারণ, অধিকাংশ সদস্য ও তাঁদের পরিবার কোভিড আক্রান্ত। অনেকের প্রশ্ন, লক্ষাধিক লোকের গঙ্গাসাগর কিংবা করোনা-বিধি ভাঙা পুর-নিগমের ভোট তো ‘সুপার-স্প্রেডার’ হয়ে উঠতে পারে!
সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী নিজেই বলছেন, আগামী ১৫ দিন বেশি বিপজ্জনক। সবাইকে বিধি মেনে চলতে হবে। ওয়ার্ক ফ্রম হোমের কথা বলছেন। আবার এই ১৫ দিনের মধ্যেই গঙ্গাসাগর মেলা হবে! চারটি পুর-নিগমের ভোট হবে!’’ তাঁর প্রশ্ন, “গঙ্গাসাগরে নাকি ডাবল ডোজ় প্রতিষেধক নিয়ে মানুষ যাবেন! বাইরে থেকে ট্রেনে যাঁরা আসছেন, তাঁদের সকলের প্রতিষেধক নেওয়ার খবর রাজ্য নিশ্চিত করে নিতে পারবে?’’
বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের কটাক্ষ, “হিন্দু ভোট টানতে ইদানীং নিজের দলকে হিন্দু প্রমাণ করার চেষ্টা করছেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই কারণেই গঙ্গাসাগর মেলা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না।” বিজেপি কি চায় করোনা আবহে গঙ্গাসাগর মেলা বন্ধ হোক? সুকান্তর কুশলী জবাব, “রাজ্য সরকারের উপরেই সেই দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছি। ... মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জনগণ দায়িত্ব দিয়েছে। যে দিন আমাদের দেবে, সে দিন আমরা সিদ্ধান্ত নেব।”
করোনা-পরিস্থিতিতেও ধর্মীয় জমায়েত ও নির্বাচনী সভার বহর নিয়ে বারবার সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে উত্তরপ্রদেশের যোগী-সরকারকে। আবার কোভিড পরিস্থিতি মাথায় রেখে বর্ষশেষ ও বর্ষবরণের জমায়েত বন্ধ করার পথে হেঁটেছে দিল্লি, মহারাষ্ট্রের মতো রাজ্য। সেখানে গত বছরের শেষ সাত দিনে মানুষের ঢলের সাক্ষী থেকেছে কলকাতা। প্রশ্ন উঠেছে, এই অবস্থায় একটু কড়াকড়ি কি প্রয়োজন ছিল না? মমতা এ দিন বলেছেন, ‘‘ট্রেন বন্ধ করে দিলে বলবেন লোক আসতে পারছে না। ট্রেন চালু থাকলে বলবেন গাদাগাদি করে আসছে। কোনটা করব বলুন!’’ তবে একই সঙ্গে তাঁর সংযোজন, “পুলিশকে বলব কড়া হাতে মোকাবিলা করতে। অনেকেই কথা শুনছেন না। মাস্ক পরছেন না। (তবে) এটা সবার ক্ষেত্রে হয় না। আমাদের বাঁচাতে পারি আমরাই।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy