নিজস্ব চিত্র।
পাতাল রেল হচ্ছে জানে বৌবাজারের দুর্গা পিতুরি লেন। কিন্তু কেন বার বার বিপর্যয়, কেন বার বার এক কাপড়ে ঘর ছাড়তে হচ্ছে বাসিন্দাদের, তা এখনও অজানা। ২০১৯-এর পর ২০২২। ব্যবধান মাত্র ২ বছর ৮ মাসের। সজল চোখে ফের মধ্যরাতে ঘরছাড়া কলকাতার দুর্গা পিতুরি লেনের বসতবাড়ির বাসিন্দারা। কারও রাতের খাওয়া হয়েছে সদ্য, কেউ আবার ঘুমচোখেই বেরিয়ে এসেছেন সামান্য জিনিসপত্র নিয়ে। কাঠগড়ায় সেই মেট্রো প্রকল্পের কাজ। কিন্তু কেন বার বার এ ভাবে ঘরবাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে পড়তে হচ্ছে বৌবাজারের বাসিন্দাদের? সমস্যা কোথায়? খুঁজে দেখল আনন্দবাজার অনলাইন।
মেট্রো কর্তৃপক্ষ বলছেন, একটি কংক্রিটের স্ল্যাব তৈরি করতে গিয়েই বিপত্তি। তাঁদের দাবি, দিন সাতেকের মতো কাজ বাকি ছিল। তা শেষ হলেই ফাটল বিপত্তিতে পাকাপাকি ভাবে দাঁড়ি পড়ত। কিন্তু তা আর হল কই!
শিয়ালদহ থেকে এসপ্ল্যানেড পর্যন্ত সুড়ঙ্গ গিয়েছে এই এলাকার মাটির ২০ মিটার নীচ দিয়ে। দুর্গা পিতুরি লেনের মাটির নীচে তৈরি হবে একটি বক্স। যে বক্সে শিয়ালদহ এবং এসপ্লানেড থেকে আসা সুড়ঙ্গ মিলিত হবে। ২০১৯-এ সেই বক্সের একেবারে তলায় জল চুঁইয়ে মেট্রোর সুড়ঙ্গে ঢুকে পড়ার জেরে (ওয়াটার পকেট) মাটির উপরে বাড়িতে এবং রাস্তায় ফাটল দেখা গিয়েছিল। সে যাত্রায় পর পর কংক্রিটের স্তম্ভ তৈরি করে সমস্যা রোখা গিয়েছিল। ২ বছর ৮ মাস বাদে সেই সমস্যাই ফিরে এসেছে নয়া চেহারায়।
পরবর্তীতে ঠিক হয়, ওই বক্সের নীচে ৩৮ মিটার কংক্রিটের স্ল্যাব তৈরি করে জল চুঁইয়ে পড়া রোখা হবে। সেই মতো কাজও চলছিল। বক্সের ৩৮ মিটারের মধ্যে শিয়ালদহের দিক থেকে ২৯ মিটার এলাকায় কংক্রিটের স্ল্যাব তৈরিও শেষ হয়ে গিয়েছিল। বাকি ছিল এসপ্লানেডের দিকের মাত্র ৯ মিটারের কাজ। বুধবার সন্ধ্যায় বিপত্তির মূলেও সেই ৯ মিটার এলাকাই। বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, ওই অংশ দিয়েই নতুন করে জল (ওয়াটার পকেট) চুঁইয়ে ঢুকে পড়ছে মেট্রোর জন্য তৈরি সুড়ঙ্গে। ভূমিতলে বদল এসেছে। তারই প্রভাব পড়ছে ভূপৃষ্ঠের উপর দাঁড়িয়ে থাকা বাড়ি কিংবা রাস্তায়। ফাটল ধরছে তাতে।
দেখা যাচ্ছে, আগের বার যে বাড়ির যে যে অংশে ফাটল দেখা গিয়েছিল, এ বারও সেখানেই নতুন ফাটল ধরেছে। পাশাপাশি কয়েকটি চিড়ের দাগ একেবারেই নতুন। ভাঙা ঘর জোড়া লাগতে না লাগতেই আবার নতুন ফাটল।
কেএমআরসিএল-এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর সিএন ঝা বৃহস্পতিবার বলেন, ‘‘দক্ষিণ-পশ্চিম কোণ থেকে জল চুঁইয়ে পড়ছিল। বেশির ভাগ জায়গাতেই জল চুঁইয়ে পড়া নিয়ন্ত্রণ করা গিয়েছে। আশা করা হচ্ছে, রাতের মধ্যেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসবে। ফাটলের জেরে ৯টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং মোট ৮৭ জনকে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।’’ কিন্তু যে বাসিন্দাদের এক কাপড়ে বাড়ি থেকে সরিয়ে নেওয়া হল, তাঁদের কি ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ভাবছে মেট্রো রেল? বাসিন্দারা বাড়ি ফিরতে পারবেন কবে? সিএন ঝা বলেন, ‘‘বাড়িগুলোর কতটা ক্ষতি হয়েছে, তা পর্যালোচনা করে দেখা হবে। তার পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বাড়ি ফেরানোর ব্যাপারে। এখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনাই আমাদের মূল লক্ষ্য।’’ তবে ক্ষতিপূরণের বিষয়টি নিয়ে যে মেট্রো এখনই কিছু ভাবছে না, তা-ও জানিয়েছেন কেএমআরসিএলের ম্যানেজিং ডিরেক্টর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy