অ্যামিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের আলোচনাসভায় বিচারপতি রুমা পাল। শুক্রবার দেবস্মিতা ভট্টাচার্যের তোলা ছবি।
পার্ক স্ট্রিট কাণ্ডের গণধর্ষিতা থানায় অভিযোগ জানাতে গিয়ে কয়েক জন অফিসারের কটূক্তির শিকার হয়েছিলেন। সেই অফিসাররা ছিলেন পুরুষ। এমন ঘটনা এড়াতে প্রতিটি থানায় সর্বক্ষণ অন্তত এক জন মহিলা অফিসার থাকা দরকার বলে মনে করেন সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি রুমা পাল। তাঁর বক্তব্য, কোনও মহিলা তাঁর হেনস্থা বা অসম্মানের অভিযোগ যাতে শুধু মহিলা অফিসারের কাছেই জানাতে পারেন, সেই জন্য এমন ব্যবস্থা থাকা দরকার।
শুক্রবার কলকাতার অ্যামিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ল স্কুলে মানবাধিকার নিয়ে আলোচনাচক্রে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি পাল বলেন, ‘‘বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ধর্ষিতা তাঁর অভিযোগ থানায় জানাতে গিয়ে এমন আচরণের শিকার হন, যেন তিনিই অভিযুক্ত। এমন সব প্রশ্ন করা হয়, যেন তিনি নিজেই ধর্ষিত হতে চেয়েছিলেন!’’
এই প্রসঙ্গেই রুমাদেবী ২০১২ সালের পার্ক স্ট্রিট গণধর্ষণের উল্লেখ করেন। আর থানায় ২৪ ঘণ্টা মহিলা অফিসারের উপস্থিতির প্রয়োজনীয়তার কথা জানান।
তবে কলকাতা তথা গোটা রাজ্যে মহিলা পুলিশের যা সংখ্যা, তাতে ২৪ ঘণ্টা প্রতিটি থানায় মহিলা পুলিশ অফিসার রাখা সম্ভব নয় বলে পুলিশকর্তারা জানাচ্ছেন। লালবাজার সূত্রের খবর, কলকাতা পুলিশে এখন ইনস্পেক্টর, এসআই, এএসআই— এই তিন পদমর্যাদার মহিলা অফিসার সব মিলিয়ে প্রায় পৌনে তিনশো। কলকাতা পুলিশে থানার সংখ্যা ৬৯। শুধু এই সব ক’টি থানাতেই ২৪ ঘণ্টা অফিসার রাখতে হলে অন্তত ২৭৬ জন মহিলা অফিসার প্রয়োজন।
রাজ্য পুলিশের এক শীর্ষকর্তা বলছেন, ‘‘দিনরাত রাখার মতো অত বেশি মহিলা অফিসার আমাদের হাতে নেই। তবে কনস্টেবল আছেন। এখন পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের বহু থানাতেই সব সময়ে মহিলা কনস্টেবল রাখা হচ্ছে।’’ প্রত্যন্ত এলাকার থানায় অবশ্য সেটাও হয় না। সে ক্ষেত্রে রুমাদেবীর নিদান, ‘‘পুরুষ পুলিশ অফিসারকে গিয়ে যখন মহিলা অভিযোগ জানাচ্ছেন, সেটির ছবি ও কথোপকথন রেকর্ড করা থাকুক। যাতে ভবিষ্যতে দেখা যেতে পারে, অভিযোগকারিণীর সঙ্গে কী আচরণ করা হয়েছিল।’’
এ দিনের ওই আলোচনাচক্রে ছিলেন আইপিএস অফিসার, পশ্চিমবঙ্গ মানবাধিকার কমিশনের এডিজি দেবাশিস রায়। তিনি জানান, রাজ্যে মহিলা পুলিশের সংখ্যা আগের তুলনায় অনেকটাই বেড়েছে, তবে জনসংখ্যার নিরিখে সেটা এখনও বেশ কম। দেবাশিসবাবু বলেন, ‘‘এখন কলকাতার আটটি ডিভিশনের সব ক’টিতেই একটি করে মহিলা পুলিশ থানা হয়েছে। সাধারণ থানায় মহিলা পুলিশ কোনও কারণে না থাকলেও কাছের থানা থেকে তেমন কাউকে এনে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া হয়।’’ কলকাতায় অ্যামিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ধ্রুবজ্যোতি চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘থানা নিয়ে সাধারণ মানুষের মোটের উপর একটা ভয় আছে।’’
কমনওয়েলথ হিউম্যান রাইটস ইনিশিয়েটিভ (সিএইচআরআই) ছিল এই আলোচনাচক্রের যুগ্ম আয়োজক। আইনের পড়ুয়াদের জন্য তারা কিছু স্থির ও চলমান ছবির মাধ্যমে থানার চেহারা, কাজকর্ম, পুলিশের ভূমিকা উপস্থাপন করেছে, যার নাম ‘ভার্চুয়াল পুলিশ স্টেশন’। সেখানে একটি ভিডিওয় দেখা যাচ্ছে, রাজস্থানের এক থানায় এক তরুণী ধর্ষণের অভিযোগ জানাতে গিয়ে সূর্য সিংহ নামে এক অফিসারের কটূক্তি ও কুশ্রী ইঙ্গিতের মুখোমুখি হচ্ছেন। পরে অবশ্য এক মহিলা অফিসার তাঁকে নিয়ে যাচ্ছেন ও চা খেতে দিচ্ছেন। তখন ধর্ষিতা অনেক স্বচ্ছন্দ বোধ করে অভিযোগ দায়ের করছেন।
আবার একটি ভিডিওয় দেখা যাচ্ছে, এক জন অভিযোগ জানাতে থানায় ঢুকলে পুলিশ অফিসার তাঁর সঙ্গে মার্জিত ভাবে কথা বললেন, আগে সুস্থির হয়ে বসে জল খেতে বললেন। কিন্তু এটা দেখেই হাসিতে ফেটে পড়লেন হলভর্তি পড়ুয়া।
যা দেখে রুমাদেবীর মন্তব্য, ‘‘থানায় অভিযোগ জানাতে গেলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষকে একেবারে বিপরীত অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে হয়। এটাই বাস্তব। তাই তো সবাই হেসে উঠলেন!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy