Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Manas Bhunia

পরিবেশ দফতর হারালেন মানস ভুঁইয়া, নেপথ্যে কি বিশ্ব পরিবেশ দিবসের ছবি-কাণ্ড, জল্পনা তুঙ্গে

বৃহস্পতিবার কিছুটা ‘আকস্মিক ভাবে’ই পরিবেশ দফতরের দায়িত্ব খোয়ালেন মন্ত্রী। এ দিন সংশ্লিষ্ট দফতরের দায়িত্ব থেকে তাঁকে সরিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। পরিবেশ দফতর নিজের হাতে রেখেছেন মমতা।

Manas Bhunia

মানস ভুঁইয়া। —ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ জুন ২০২৩ ০৮:৪০
Share: Save:

বিশ্ব পরিবেশ দিবসের উদ্‌যাপনে এ‌লইডি স্ক্রিন, ব্যানার-সহ কোনও জায়গায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি নেই কেন? গত ৫ জুন নিউ টাউনের বিশ্ব বাংলা কনভেনশন সেন্টারে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ আয়োজিত পরিবেশ দিবস উদ্‌যাপনের মঞ্চে তা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন মানস ভুঁইয়া। মঞ্চে দাঁড়িয়েই পরিবেশ দফতরের প্রধান সচিব রোশনী সেনের কাছ থেকে এ ব্যাপারে রিপোর্ট তলব করেছিল‌েন। ওই ঘটনার ১০ দিন পরে, বৃহস্পতিবার কিছুটা ‘আকস্মিক ভাবে’ই পরিবেশ দফতরের দায়িত্ব খোয়ালেন মন্ত্রী। এ দিন সংশ্লিষ্ট দফতরের দায়িত্ব থেকে তাঁকে সরিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। পরিবেশ দফতর নিজের হাতে রেখেছেন মমতা। এই বদলের নেপথ্যে ‘ছবি-কাণ্ড’ রয়েছে কি না, আপাতত তা নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়েছে প্রশাসনের একাংশে।

তবে অন্য একটি মতও ঘুরছে। বেআইনি বাজি কারখানায় বিস্ফোরণের জন্য সাম্প্রতিক সময়ে শাসকদলকে একাধিক বার কাঠগড়ায় উঠতে হয়েছে। তা নিয়ে জনমানসে ক্ষোভও তৈরি হয়েছে। রাজ্য-রাজনীতি উত্তপ্ত হয়েছে। সেই ক্ষোভ প্রশমনে মানসের হাত থেকে দফতর নেওয়া হল কি না, সেই তত্ত্বও শোনা যাচ্ছে।

যদিও পরিবেশ দফতরের কর্তাদের একাংশের অনুমান, মুখ্যমন্ত্রীর ছবি নেই কেন, পরিবেশ দিবসের মঞ্চে এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করাটা ‘বাড়াবাড়ি’ হয়ে গিয়েছে। এর আগেও এই বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন তৎকালীন মন্ত্রী। গত মে মাসে পশ্চিম মেদিনীপুরে অন্য এক সরকারি অনুষ্ঠানে গিয়ে সেখানেও মুখ্যমন্ত্রীর ছবি দেখতে না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে জেলাশাসকের কাছে রিপোর্ট তলব করেছিলেন। যা নিয়ে বিরোধীরা আক্রমণ শানিয়েছিলেন। মুখ্যমন্ত্রীর ছবি রাখা বাধ্যতামূলক কি না, তা নিয়ে তরজা শুরু হয়েছিল। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের অনুমান, পঞ্চায়েত নির্বাচনের আবহে নিজের ছবি নিয়ে বিতর্ক চাইছেন না মুখ্যমন্ত্রী। তাই পরিবেশ দফতর ‘কেড়ে’ দলের অন্যদেরও বার্তা দেওয়া হল বলে জানাচ্ছেন তাঁরা।

এ দিনের ঘটনায় শোরগোল পড়েছে পরিবেশবিদ মহলে। রাজ্যের পরিবেশকর্মীদের একাংশের বক্তব্য, এমনিতেই ক্ষমতাসীন সরকারের আমলে পরিবেশ গুরুত্বহীন হয়ে পড়েছে। পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত বলছেন, ‘‘এই সরকারের কাছে পরিবেশ দফতর গিনিপিগের মতো। সব সময়েই নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। এই বদল তারই প্রমাণ।’’

আরও একটি প্রসঙ্গ উঠে এসেছে। তা হল, পরিবেশ দফতর সামলানোর জন্য বিশেষ দক্ষতার প্রয়োজন কি না। অনেকের মতে, অন্য দফতরের সঙ্গে পরিবেশ দফতরের মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। এখানে শুধুই প্রশাসনিক কাজকর্ম সম্পর্কে ধারণা থাকাটা যথেষ্ট নয়। বরং বায়ুদূষণ, শব্দদূষণ, গঙ্গাদূষণ, পূর্ব কলকাতা জলাভূমি, শব্দবাজি, জাতীয় পরিবেশ আদালতের কাজকর্ম-সহ নানা বিষয়ে প্রাথমিক ধারণা থাকা বাঞ্ছনীয়।

এক পরিবেশবিজ্ঞানীর কথায়, ‘‘কোনও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের পরিবেশ দফতরের কাজ বুঝতে সময় লাগবে। সেখানে ক্রমাগত মন্ত্রী বদলালে দফতরের স্বাভাবিক কাজ ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়।’’ সুভাষ দত্তের বক্তব্য, ‘‘মানস ভুইঁয়া চেষ্টা করছিলেন। তিনি দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে দফতরের কাজে গতি এসেছিল।’’ যদিও পরিবেশকর্মীদের সংগঠন ‘সবুজ মঞ্চ’-এর সাধারণ সম্পাদক নব দত্তের বক্তব্য অন্য। তাঁর কথায়, ‘‘বিশ্ব পরিবেশ দিবসের পর পরই পরিবেশমন্ত্রীর রদবদল হয়। এ বারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। পরিবেশমন্ত্রী হিসাবে মানস ভুঁইয়াও কার্যত কিছুই করছিলেন না।’’

পরিবেশ দফতর হারালেও জলসম্পদ অ‌নুসন্ধান ও উন্নয়ন দফতরের দায়িত্ব মানসের হাতেই রয়েছে। এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে তাঁকে ফোন করা হলে তিনি ধরেননি। উত্তর দেননি মেসেজেরও। প্রসঙ্গত, বিশ্ব পরিবেশ দিবসের পরে প্রাক্তন পরিবেশমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, মুখ্যমন্ত্রীর ছবি নেই কেন, সে ব্যাপারে প্রধান সচিব সময় মতো রিপোর্ট দাখিল করবেন। তবে সেই রিপোর্ট আদৌ জমা পড়েছে কি না, তা আর জানা গেল না!

অন্য বিষয়গুলি:

manas bhunia Environment Minister Mamata Banerjee
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy