বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তুললেন বিধায়ক আব্দুল করিম চৌধুরী। ফাইল চিত্র।
দল ও সরকার বিব্রত হয়, এমন কাজ না করতে পরিষদীয় দলের বৈঠকে বিধায়কদের আগেই সতর্ক করেছিল তৃণমূল কংগ্রেস। কিন্তু বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতি নিয়ে অন্যতম প্রবীণ বিধায়কের তোলা প্রশ্নে সেই পরিষদীয় দলের বৈঠকেই চূড়ান্ত বিড়ম্বনায় পড়তে হল তৃণমূল নেতৃত্বকে। মুখ্যমন্ত্রী কেন নিয়মিত বিধানসভায় থাকেন না— এই প্রশ্ন তুলে দলীয় নেতৃত্বের তিরস্কারের মুখেও পড়তে হল বিধায়ক আব্দুল করিম চৌধুরীকে।
বিধানসভার অধিবেশন চলাকালীন দলীয় বিধায়কদের উপস্থিতি নিয়ে নিয়ম করে সতর্ক করে শাসকদল। পরিষদীয় লড়াইয়ে বিরোধীদের মোকাবিলায় সরকারপক্ষের এই ভূমিকা মনে করাতে পরিষদীয় দলের বৈঠকও হয়। শীতকালীন অধিবেশন শুরু হয়ে গেলেও মঙ্গলবার সেই বৈঠক ডেকেছিল তৃণমূল। আর সেখানেই প্রবীণ ওই বিধায়ক সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। দলীয় সূত্রে খবর, চৌধুরী বলেন, মুখ্যমন্ত্রী কেন আসেন না? যদি তিন-চার দিন আসতেন, এক ঘণ্টা করেও থাকতেন, তা হলে ভালই হত।
বিধায়কের এই মন্তব্য কানে যেতেই তাঁকে প্রায় ধমক দিয়ে বসিয়ে দেন বৈঠকে উপস্থিত দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী। পরে যোগাযোগ করা হলে করিম চৌধুরী অবশ্য বলেন, ‘‘আমি বৈঠকে যা বলেছি, তার পুনরাবৃত্তি করব না। মুখ্যমন্ত্রী অধিবেশনে থাকলে, সভার গুরুত্ব বাড়ে, গ্ল্যামার বাড়ে। তাই বলেছি।’’
এ দিন অধিবেশন শেষ হওয়ার পরে পরিষদীয় দলের বৈঠকে যোগ দেন তৃণমূলের বিধায়কেরা। সেখানে বাকি দিনগুলিতে সরকারপক্ষের বিধায়কদের ভূমিকা কী হবে, তা ব্যাখ্যা করেন সরকারপক্ষের মুখ্য সচেতক নির্মল ঘোষ, মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, ফিরহাদ (ববি) হাকিম এবং পরিষদীয় মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। তাঁরা সকলেই অধিবেশন চলাকালীন বিধায়কদের বিধানসভায় উপস্থিত থাকার কথা বলেন। বিধায়কদের কী কী করণীয়, তা-ও ব্যাখ্যা করেন বক্সী। সূত্রের খবর, বক্তৃতায় ববি-বক্সীরা বিধায়কদের উদ্দেশে বলেন, বিরোধীদের মোকাবিলায় তৃণমূলকে সংযত থাকতে হবে। কোথাও এমন কোনও আচরণ করা চলবে না, যাতে দল বা সরকার বিব্রত হয়। এই প্রসঙ্গে পরিষদীয় দলের আগের বৈঠকের মতোই এ দিন একাধিক বক্তা বলেন, সরকারপক্ষের বিধায়কদের এমন প্রশ্ন করার দরকারই নেই, যাতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী অস্বস্তিতে পড়েন।
এ সবের মধ্যেই ইসলামপুরের বিধায়ক করিম চৌধুরী কিছু বলতে চান। তাঁকে বলতে দেওয়া হলে তিনি সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতির প্রসঙ্গ উত্থাপন করেন। তিনি বলেন, ‘‘আমি ১১ বারের বিধায়ক। অজয় মুখোপাধ্যায়, সিদ্ধার্থ রায়, জ্যোতি বসু, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দেখেছি। তাঁরা আসতেন।’’ তার পর মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতির কথা তোলেন তিনি। তাতেই সুর কাটে বৈঠকের। তবে সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে থামিয়ে দেন বক্সী। বিধায়ককে বসিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, ‘‘হ্যাঁ, আমরা জানি। বসুন আপনি।’’ বর্ষীয়ান বিধায়কের এই মন্তব্যে অস্বস্তি তৈরি হলেও তা নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি তৃণমূলের পরিষদীয় নেতৃত্ব। দলের এক মন্ত্রী বলেন, ‘‘সাধারণত প্রতি অধিবেশনেই বিধায়কদের নিয়ে এ রকম আলোচনা হয়। তা ছাড়া অন্য কিছু হয়নি।’’ তবে বিরোধীরা বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রীর অনুপস্থিতির প্রসঙ্গ প্রায়শই তোলেন। আবার সংসদে প্রধানমন্ত্রীর ‘কম আসা’ নিয়ে আগে একাধিক বার সরব হয়েছে তৃণমূল। তাই সব মিলিয়ে, প্রবীণ বিধায়কের মন্তব্যে অস্বস্তি হয়তো পুরোপুরি ঝেড়ে ফেলা কঠিন শাসকদলের পক্ষে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy