সিজিও কমপ্লেক্সে প্রবেশের মুখে মিনাক্ষী মুখোপাধ্যায় এবং মহম্মদ সেলিম। ছবি: সংগৃহীত।
‘কমিটির নেতা’দের স্বীকৃতি দেওয়ার ধারা কি বদলাতে চলেছে বঙ্গ সিপিএম? বৃহস্পতিবার দুপুরে তেমনই ইঙ্গিত দিল সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্স। দেখা গেল, দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শ্রীদীপ ভট্টাচার্য, সুজন চক্রবর্তী, সুমিত দে-রা রইলেন বাইরের জমায়েতে। তাঁদের সঙ্গে রইলেন রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য কল্লোল মজুমদার, দেবব্রত ঘোষ, পলাশ দাসও। আরজি করের ঘটনায় দ্রুত বিচারের দাবিতে সিজিও কমপ্লেক্সে সিবিআই আধিকারিকদের কাছে সিপিএমের তরফে স্মারকলিপি দিতে যুবনেত্রী মিনাক্ষী মুখোপাধ্যায়কে সঙ্গে নিয়ে গেলেন রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। সঙ্গে ছিলেন সিপিএমের পলিটব্যুরোর আর এক সদস্য রামচন্দ্র ডোম এবং আইনজীবী সংযুক্তা সেন।
‘বড়’ নেতাদের বাইরে রেখে মিনাক্ষীকে নিয়ে রাজ্য সম্পাদকের সিজিও-র অন্দরে যাওয়াকে সিপিএমের অন্দরে রাজ্য সম্মেলনের আগে ‘বার্তা’ হিসাবেই ধরে নেওয়া হচ্ছে।
আরজি করের ঘটনায় সিবিআই তদন্তভার নেওয়ার পরে বৃহস্পতিবার ছিল শততম দিন। গত রাজ্য কমিটির বৈঠকেই সিপিএম ঠিক করেছিল ‘সিজিও অভিযান’ করবে। সেইমতো দুপুর ১টা থেকে হাডকো মোড়ে শুরু হয় জমায়েত। দেড়টা নাগাদ মিছিল শুরু হয় সিজিও অভিমুখে। কর্মসূচিতে ভিড় মন্দ হয়নি। তবে আলিমুদ্দিন স্ট্রিট আগেই জানিয়েছিল, তারা শান্তিপূর্ণ মিছিল করবে। ফলে কর্মসূচি ‘আমিষ’ হওয়ার কোনও সুযোগ ছিল না। তবে পুলিশের সংখ্যা বলে দিয়েছে, বিধাননগর কমিশনারেট কোনও ঝুঁকি নিতে চায়নি। যদিও এই আন্দোলনকে কটাক্ষ করেছেন তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ। তাঁর কথায়, ‘‘সিপিএম আগে বলুক ধৃত সিভিক ভলান্টিয়ারের ফাঁসি চায় কি না!’’ পাল্টা সুজন বলেছেন, ‘‘ওঁর কথার উত্তর দেব না। উনি বলেছিলেন সারদার সবচেয়ে বড় সুবিধাভোগী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার পর সেই মমতার দলেরই নেতা হয়েছেন।’’ একই কথা বলেছেন মিনাক্ষী। সিপিএমের যুবনেত্রীর কথায়, ‘‘তৃণমূলের কথায় আমরা তো কান দিচ্ছিই না। রাজ্যের মানুষও আর কান দিচ্ছেন না!’’
আন্দোলনের ‘বাক্যবাণ’ ছাপিয়ে সিপিএমের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়ে গিয়েছে যুবনেত্রী মিনাক্ষীর স্মারকলিপি দিতে যাওয়া নিয়ে। কেন মিনাক্ষী? সেলিমের বক্তব্য, ‘‘ও-ই তো আন্দোলন শুরু করেছিল। তাই মিনাক্ষী গিয়েছিল।’’ তবে সেলিমের বলা কারণ ছাড়াও সিপিএমের বিভিন্ন সূত্রে মিনাক্ষীকে ভিতরে নিয়ে যাওয়ার নেপথ্যে তিনটি কারণের কথা বলা হয়েছে। এক, মিনাক্ষী এবং সংযুক্তা দু’জনেই মহিলা। তাই এই বিষয়ে নিয়ে আন্দোলনে তাঁদের নিয়ে যাওয়া হয়েছে। দুই, মিনাক্ষীকে সিবিআই আরজি করে ভাঙচুরের ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সিজিওতে ডেকেছিল। সেই তাঁকেই পাল্টা অভিযোগকারিনী হিসাবে নিয়ে গিয়ে সিপিএম কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে পাল্টা বার্তা দিল। তিন, দলে ‘আলঙ্কারিক’ পদই বড় নয়।
বস্তুত, এই তৃতীয় কারণটি নিয়েই সবচেয়ে বেশি আলোচনা শুরু হয়েছে সিপিএমে। সাধারণত দেখা যায়, সিপিএমে কমিটি দিয়ে নেতাদের ওজন মাপা হয়। সেই ধারা পরিবর্তনের সূচনা হিসাবে বৃহস্পতিবারের ঘটনাকে দেখছেন দলেরই অনেকে। সম্মেলন পর্বের আগে যা ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ বলে অভিমত তাঁদের। কারণ, সিপিএম এ বার প্রজন্ম বদলের সম্মেলনের দিকে যাচ্ছে। দলের অন্দরে যে বয়সবিধি রয়েছে, তাতে খুব নাটকীয় কোনও বদল না-ঘটলে সর্বভারতীয় স্তরে সাত জন পলিটব্যুরোর সদস্যকে মার্গদর্শকের আসনে চলে যেতে হবে। রাজ্যেও অনেক নতুন মুখ আসবে। পার্টি কংগ্রেসের পরে রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলী গঠনেও সেই ধারা অব্যাহত থাকবে বলেই মনে করা হচ্ছে। সে দিক থেকে মিনাক্ষীর ‘বৃহস্পতি’ তুঙ্গে বলেই দাবি সিপিএমের অনেকের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy