Advertisement
E-Paper

সেই ‘সবরমতী’ এক্সপ্রেসে আবার সওয়ার! গোধরার ঘটনা নিয়ে তৈরি সিনেমা দেখে এল রাজ্য বিজেপি

এক দিন পরেই রাজ্যের ছয় আসনে উপনির্বাচনের ভোটগণনা। তা নিয়ে চাপেই রয়েছে রাজ্য বিজেপি। সদস্য সংগ্রহ অভিযানের অগ্রগতি নিয়েও রয়েছে চাপ। তার মধ্যেই ‘সিনেমা দেখো’ কর্মসূচি কেন?

Why bjp wants to use the film The Sabarmati Report

স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদীর প্রশংসা পেয়েছে বিক্রান্ত ম্যাসি অভিনীত ‘দ্য সবরমতী রিপোর্ট’। —ফাইল ছবি।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০২৪ ১৮:৪৮
Share
Save

শনিবার মহারাষ্ট্র এবং ঝাড়খণ্ড বিধানসভা নির্বাচনের সঙ্গে বাংলার ছয় আসনে উপনির্বাচনেরও ভোটগণনা। ফল নিয়ে চিন্তায় রয়েছেন রাজ্য বিজেপির নেতারা। তার মধ্যেই বৃহস্পতিবার দুপুরে সদল সিনেমা দেখতে গেলেন রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। সঙ্গে প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। ছবির নাম ‘দ্য সবরমতী রিপোর্ট’। বিক্রান্ত ম্যাসি অভিনীত যে ছবি স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদীর শংসা পেয়েছে। প্রশংসা করেছেন অমিত শাহও।

বৃহস্পতির বারবেলায় এই সিনেমা দেখাও অবশ্য ‘দলীয় কর্মসূচি’। বিভিন্ন রাজ্যে দলের নেতা-কর্মীদের ধীরজ শর্মা পরিচালিত ছবিটি দেখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাই পশ্চিমবঙ্গেও এই ‘সিনে অভিযান’। মাল্টিপ্লেক্সের আসন আলো করে বসে ছবি দেখেছেন সুকান্ত, দিলীপ, শমীক ভট্টাচার্যেরা। একই ভাবে ২০২২ সালে গোটা দেশে বিজেপি নেতা-কর্মীদের সিনেমা হলে ভিড় জমাতে বলা হয়েছিল বিবেক অগ্নিহোত্রী পরিচালিত ‘দ্য কাশ্মীর ফাইল্‌স’ ছবিটি দেখার জন্য। অনুপম খের অভিনীত বিবেকের ছবিটি ছিল কাশ্মীর উপত্যকা থেকে পণ্ডিতদের বিতাড়নের কাহিনি। ২০২৩ সালে একই রকম ‘উৎসাহ’ দেওয়া হয়েছিল পরিচালক সুদীপ্ত সেনের ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ দেখার জন্য। সেই ছবিটি হয়েছিল কেরলে মহিলাদের উপরে নির্যাতন ও ধর্মান্তরণ নিয়ে। সুদীপ্তের ছবিটি বাংলায় নিষিদ্ধ ঘোষণা করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজ্য সরকার। তবে প্রেক্ষাগৃহের বাইরে নানা ভাবে ছবিটি কর্মীদের দেখানোর ব্যবস্থা করেছিলেন বিজেপি নেতৃত্ব।

সাম্প্রতিক কালে রাজনৈতিক ছবির মাধ্যমে কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন বিজেপির ‘পছন্দসই’ বিষয় তুলে ধরার প্রবণতা তৈরি হয়েছে। ‘দ্য সবরমতী রিপোর্ট’ সেই ধারারই ছবি বলে অনেকের বক্তব্য। তাঁদের মতে, এ ছবি ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’। পরিভাষায় ‘প্রোপাগান্ডা ফিল্ম’। ছবির মূল চরিত্র সবরমতী এক্সপ্রেস এবং এক সৎ ও নির্ভীক সাংবাদিক। সাংবাদিকের চরিত্রে অভিনয় করেছেন বিক্রান্ত। সেই সাংবাদিকের চোখ দিয়েই দর্শককে এক অতীতকে দেখাতে চেয়েছেন পরিচালক। বিক্রান্তের অভিনয় প্রশংসা পেলেও কাহিনির ‘ঐতিহাসিক সত্যতা’ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

Why bjp wants to use the film The Sabarmati Report

বৃহস্পতিবার দুপুরে সদলে সিনেমা দেখতে গেলেন বিজেপির রাজ্য নেতৃত্ব। —নিজস্ব চিত্র।

ছবির মূল কথা ২০০২ সালে গুজরাতের গোধরা স্টেশনের কাছে সবরমতী এক্সপ্রেসে আগুন লাগার ঘটনা। সেই বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি সেই অগ্নিকাণ্ডে মৃত্যু হয়েছিল ৫৯ জনের। তাঁরা অযোধ্যায় ‘করসেবা’ করে ফিরছিলেন। এর পরে গুজরাতে শুরু হয় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা। গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী তখন নরেন্দ্র মোদী। সেই সময়ের রেলমন্ত্রী লালুপ্রসাদ যাদব তদন্তের দায়িত্ব দেন সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি উমেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়কে। ২০০৪ সালে প্রকাশিত সেই রিপোর্টে অগ্নিকাণ্ডকে ‘দুর্ঘটনা’ বলা হয়েছিল। অন্য দিকে, গুজরাত সরকারের তৈরি নানাবতী-মেহতা কমিশন ২০০৮ সালে তাদের রিপোর্টে বলে, ‘ইচ্ছাকৃত’ ভাবে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছিল ট্রেনে। অভিযোগের কাঠগড়ায় তোলা হয়েছিল গোধরার স্থানীয় সংখ্যালঘু বাসিন্দাদের।

সেই বিতর্কের বয়স ২২ বছর। অযোধ্যায় রামমন্দির তৈরি হয়ে যাওয়ার পর সেই ঘটনাকে আশ্রয় করে ছবি তৈরি হতে পারে। কিন্তু বিজেপি নেতাদের কেন সেই ছবি দেখতে বলা হচ্ছে? বিজেপি কি সেই সময়ের স্মৃতি উস্কে দিতে চাইছে? সুকান্তের বক্তব্য, ‘‘ইতিহাস মনে করানোকে উস্কে দেওয়া বলা হবে কেন? এই প্রজন্ম তো জানেই না কতটা নৃশংস ভাবে হত্যালীলা চালানো হয়েছিল! অনেকটা কলকাতায় আনন্দমার্গী সন্ন্যাসীদের পুড়িয়ে মারার মতো। সেটা এই প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের জানা উচিত।’’ সকলের ‘দ্য সবরমতী রিপোর্ট’ দেখা উচিত বলে মন্তব্য করে সুকান্ত আরও বলেন, ‘‘যাঁরা সব কিছুতে রাজনীতি দেখেন, তাঁরা সেটাই দেখুন। আমরা বরং ইতিহাসনির্ভর টানটান এই ছবি দেখব।’’

২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচন বুঝিয়ে দিয়েছে, রামমন্দির নির্মাণ ভোটে আশানুরূপ ছাপ ফেলতে পারেনি। অযোধ্যাতেও বিজেপি পরাজিত। তার পরেও বিজেপি যে হিন্দুত্বকেই ‘অস্ত্র’ করতে চাইছে, তা স্পষ্ট এই ছবি নিয়ে তাদের উদ্যোগে। ‘দ্য সবরমতী রিপোর্ট’ মুক্তির পরে পরেই প্রধানমন্ত্রী মোদী সমাজমাধ্যমে লিখেছিলেন, “খুব ভাল লাগছে যে, অবশেষে সত্য প্রকাশ্যে আসছে। সাধারণ মানুষ যাতে সত্যিটা জানতে পারেন, সেই ভাবেই ছবিটা তুলে ধরা হচ্ছে। ঘটনার ভুল ব্যাখ্যা একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্তই সীমিত থাকতে পারে। কিন্তু অবশেষে সত্য প্রকাশ্যে আসে।” এর পরে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শাহও লেখেন, “শত চেষ্টা করলেও সত্যকে কখনও অন্ধকারে চাপা দিয়ে রাখা যায় না। ‘দ্য সবরমতী রিপোর্ট’ একটা তৈরি করা ধারণাকে সাহসের সঙ্গে ভেঙেছে। বহু সত্য প্রকাশ্যে আনা হয়েছে এই ছবির মাধ্যমে।” প্রসঙ্গত, গোধরাকাণ্ডের সময়ে গুজরাতে মোদী সরকারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন শাহ।

বাংলায় ২০২৬ সালে পরবর্তী বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে রাজ্যে ‘হিন্দুত্বের হাওয়া’ তৈরির চেষ্টা শুরু করেছে রাজ্য বিজেপি। শাহের উপস্থিতিতে কলকাতায় দলের প্রকাশ্য সভায় তেমন ইঙ্গিত দিয়েছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী থেকে শুরু করে মিঠুন চক্রবর্তী। উৎসবের মরসুমে একের পর এক ঘটনাকে ‘ধর্মীয় সংঘাত’ দাবি করার অভিযোগও উঠেছে বিজেপির বিরুদ্ধে। তার সঙ্গেই জুড়ছে ‘দ্য সবরমতী রিপোর্ট’ দেখা এবং তার প্রচার। রাজ্যের বিজেপি নেতারা এখন চাইছেন, দ্রুত ছবিটি কোনও ওটিটি প্ল্যাটফর্মে চলে আসুক। তাতে আরও অনেক বেশি মানুষের ধরাছোঁয়ার মধ্যে চলে আসবে ছবিটি।

The Sabarmati Report West Bengal BJP

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।